হাওড়া: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র (Anish Khan) আনিস খানের খুনের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। শুক্রবার মাঝরাতে রাতে ঘটনা ঘটলেও (Howrah Murder) শনিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিস সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছে। আমতার বাড়িতে কোন চারজন আনিসকে (Anish Khan murder case) ডাকতে এসেছিল, তাদের মধ্যে কে পুলিসের পোশাক পরেছিল, কেনই বা তাঁকে তিনতলা থেকে ঠেলে খুন করা হল, পুলিস সেসব জানার চেষ্টা করছে বটে। তবে তদন্তে একচুলও অগ্রগতি হয়নি। রহস্য ক্রমেই জটিল হচ্ছে, উঠছে বহু প্রশ্ন।
এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় (FB Post) আনিস খুনের বিচার চেয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। #Justice For Anis Khan হ্যাশট্যাগ দিয়ে (#we want justice) অবিলম্বে দোষীদের এবং কড়া শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে। কলকাতার মেয়র এবং পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেন, ‘আইন আইনের পথে চলবে, দোষীদের অবশ্যই সাজা হবে।’ তাঁর আশঙ্কা, এর পিছনে বাইরের কোনও শক্তির মদত আছে। সেই শক্তি কারা, সে সম্পর্কে বিষদ কোনও ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রী।
ভাঙড়ের আইএসএফ (ISF) বিধায়ক নওয়াজ সিদ্দিকি শনিবার আমতার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় আনিসের বাড়িতে যান। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে নওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, ‘আনিস তাঁদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছাত্র সংগঠন গড়ার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন।’ তিনিও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি চাই না, এই ঘটনা নিয়ে কোনও রাজনীতি হোক। আনিস আইএসএফ করতেন বলে আমি চারজন তৃণমূল সমর্থককে জড়িয়ে দেব, এটা কোনও কাজের কথা নয়। ওই রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করিনা। আসল অপরাধীরা ধরা পড়ুক, এটাই চাই। পুলিস প্রশাসনের উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। কারা অত রাতে আনিসের বাড়িতে হানা দিল, কারাই বা তাকে নিয়ে তিনতলার ছাদে উঠল, কীভাবে তার মৃত্যু হল পুলিসকে দ্রুত তদন্ত করে এসব বার করতে হবে।’ আইএসএফ বিধায়ক আরও বলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে যেন এলাকায় কোনও উত্তেজনা না ছড়ায়, সে ব্যাপারেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
#AnishKhan#TMCJungleRaj pic.twitter.com/sx61YkpbhD
— CPI(M) WEST BENGAL (@CPIM_WESTBENGAL) February 19, 2022
আনিসকে তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে সিপিএমও (CPM)। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে #TMCjungleRaj বলে লেখা হয়েছে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যার বিচার চাই।
এদিন দুপুরে হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিস সুপার সৌম্য রায় বলেন, ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি, পুলিস দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। কিন্তু পরিবারের তরফ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত পাইনি। পেলে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: Howrah Murder: আমতায় তিনতলার ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে খুন প্রতিবাদী পড়ুয়াকে
আনিস খান প্রতিবাদী ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত ছিলেন। ছিলেন বেশ ডাকাবুকোও। আইএসএফ বিধায়ক নওয়াজ জানান, রাজ্যের যেখানেই অন্যায় অবিচারের অভিযোগ উঠত, সেখানেই ছুটে যেতেন আনিস। এই প্রতিবাদই ছিল তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ চারজন যুবক আনিসের নাম করে দরজায় ধাক্কা দেয়। তারা পুলিসের লোক বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। পুলিস বলেই আনিসের বাবা সালাম খান দরজা খুলে দেন। তিনি পুলিসের পোশাক পরা একজনকে প্রথমে দেখতে পান। তার হাতে বন্দুক ছিল। সে আনিস কোথায় জানতে চায়। সালাম বলেন, আনিস বাড়িতে নেই। এরই মধ্যে আরও তিনজন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সালাম জানান, ওই তিনজনের পরনে সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক ছিল। পুলিসের পোশাক পরা যুবক তাঁকে ঘরে আটকে রাখে। বাকি তিনজন তিনতলার ছাদে উঠে যায়। রাত ৯টা নাগাদ একটি জলসা থেকে ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে আনিস ছাদেই পায়চারি করছিলেন। আনিসের বাবা জানান, কিছুক্ষণ পর তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান। তখনও সালাম কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। অল্প সময় পরে ওই তিনজন নীচে এসে পুলিসের পোশাক পরা যুবকটিকে বলে, স্যার কাজ হাসিল হয়ে গিয়েছে। এরপরই দ্রুত সকলে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আনিস মাটিতে পড়ে আছেন।
সকাল হতেই বাড়ির সামনে ভিড় জমে যায়। খবর যায় পুলিসে। দেহ তুলতে এসে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিস। দোষীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত দেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে দাবি করেন এলাকার বাসিন্দারা। পরে অবশ্য পুলিস দেহ হাসপাতালে পাঠায় ময়না তদন্তের জন্য।