কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মঙ্গল হেমব্রম। নাম শুনেই বোঝা যায় তিনি এক আদিবাসী। ছবি দেখে বোঝা যায় মঙ্গল এক যুবকের নাম। আদিবাসী যুবক। বাড়ি শান্তিনিকেতনের অদূরেই বল্লভপুরডাঙায়। কলকাতা টিভি ডিজিটাল টিমের কাছে তাঁর কয়েকটা ছবি এসেছে। মঙ্গল হেমব্রম সেখানে পুজো করছেন। সামনে রাখা অসংখ্য যন্ত্র। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়ছেন। এক জন আদিবাসী যুবক পুজো করছেন। পুজো করছেন ব্রহ্মার সন্তানকে।
মঙ্গলের প্রতিদিনের কাজে লাগে যে যন্ত্রপাতি, সেগুলোই সব সারি সারি সাজানো রয়েছে। মাঠে-ঘাটে, জঙ্গলে, কৃষিকাজে এ সমস্তই ব্যবহার করে থাকেন মঙ্গলের মত আরও অনেক আদিবাসীরা। সেই যে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন না, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো-যন্ত্র/তুমি চক্র মুখর মন্দ্রিত, তুমি বজ্রবহ্নিবন্দিত…মঙ্গল মনে মনে কী মন্ত্রোচ্চারণ করেছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি।
শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি পেরিয়ে বল্লভপুরডাঙা। অরণ্যে ঘেরা সাহিত্যিক অহনা বিশ্বাসের ‘দেশের বাড়ি’। সেখানেই পুজো করছেন স্থানীয় এক আদিবাসী যুবক মঙ্গল হেমব্রম। তবে, তার আরাধ্য দেবতা ব্রহ্মার পুত্র বিশ্বকর্মা হলেও, আরাধনার জন্য নেই বিশ্বকর্মার মূর্তি। তার বদলে রয়েছে কাস্তে, ছেনি, কুর্নিক, হাতুড়ি, বেলচা, কোদাল, হাঁসুয়া, লাঙল, কাঁচি, রেঞ্জ, ছুরি বাদ যায়নি ড্রিল মেশিনও।
জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকায় বর্তমানে আদিবাসীদের বাস। নিজেদের পেশার জন্য তাঁদের এই যন্ত্রপাতিগুলি প্রয়োজন। সেই কারণেই মূর্তি পুজোর বদলে যন্ত্রপুজোতেই বিশ্বাসী তাঁরা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকালে এই যন্ত্রপাতির আরাধনা।
আরও পড়ুন – দুর্গাপুজোতে পদ্মার ইলিশে সাজবে বাঙালির পাত
ছবিতে দেখা যাচ্ছে আড়ম্বরবিহীন ভাবেই চলছে এই পুজো। চার পাশে কুচো কাঁচাদের ভিড়। যন্ত্রপাতির সঙ্গে পুজোর জন্য রয়েছে বাগানের কিছু নাম না জানা ফুল। তার কিছুটা অংশ আবার যন্ত্রপাতির উপরেও দেওয়া রয়েছে। শুধু যন্ত্রপুজো নয়। সেখানে রয়েছে মাটির হাতির মূর্তি। গণেশের মূর্তি, ঘোড়া, খরগোশ, শূকরও।
আরও পড়ুন – দুই বাংলার মেলবন্ধনের সাক্ষী রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজো
সামনে একটি ঘট তাতে রাখা রয়েছে আমের পল্লব। রয়েছে ধানের শিস। একটি পাত্রে রাখা গাছ। তার সামনেই বসে পুজো করছেন আদিবাসী যুবক মঙ্গল হেমব্রম। এই পুজো আদতে প্রকৃতির পুজো। বিশ্বকর্মার রূপে যন্ত্রের পুজো। তবে, এই পুজোও বৈদিক আচার মেনেই।