আসানসোল: রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর (Mangalpur in Raniganj) শিল্পতালুকে শ্যাম সেল কারখানায় ছাইয়ের ঢিপিতে (Fly ash storage) চাপা পড়ে থাকা তিন শ্রমিককে (Workers) শনিবার বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার মধ্যরাতে আচমকা কারখানায় ছাইয়ের ট্যাঙ্কি (শ্যালো) ভেঙে পড়লে সেসময় কর্মরত চার শ্রমিক চাপা পড়েন। একজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকি তিন জনকে এই খবর লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। দুর্ঘটনার পর ১৫ ঘণ্টা কেটে গেলেও তিন শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায়, কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত থেকেই শ্যাম সেল কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, ছাইয়ের ট্যাঙ্কি যে ভেঙে পড়তে পারে, তা নিয়ে মালিকপক্ষকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে তাঁরা দায়ী করছেন।
রানিগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের ছাই দীর্ঘদিন ধরেই জমা হচ্ছিল শ্যাম সেলের ফ্লাই অ্যাশ কারখানার একটি বিশালাকার ডাম্পিং স্টোরেজে। এই ফ্লাই অ্যাশ দিয়ে মূলত ইট তৈরি হয়। ধস কবলিত এলাকায় ভরাট বা জলাজমি ভরাটের কাজেও অনেকে এই ছাই নিতে আসেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই স্টোরেজটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ফলে, এমন দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে, শ্রমিকরা সেই আশঙ্কা আগেই করেছিলেন। চাপা পড়ে থাকা তিন শ্রমিককে ছাইয়ের ঢিপি থেকে উদ্ধারে দমকলকর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুলডোজার দিয়েও ছাই সরানো শুরু হয়েছে। শ্যাম সেলের শ্রমিকদের আশঙ্কা, দীর্ঘ সময় ধরে ছাইয়ের নীচে চাপা পড়ে থাকায়, তিন জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আরও পড়ুনঃ ঝাড়খণ্ডে পিকআপ ভ্যান উল্টে মৃত্যু বাংলার ৪ শ্রমিকের
পুলিশ সূত্রে খবর, শিবনাথ রাম নামে এক শ্রমিককে দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তন্ময় ঘোষ, দিলীপ গোপ ও শিবশঙ্কর ভট্টাটার্য নামে আরও তিন শ্রমিককে ছাই সরিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। এঁদের বাড়ি বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। বিধায়কের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বলেন, ‘ঝান্ডাধারী কিছু দালাল পুষে রেখেছে মালিকেরা। সেই দালালরা শ্রমিকদের শোষণ করে মালিকদের পক্ষপাতিত্ব করছে। এই কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুনঃসাতসকালে দুর্ঘটনা নিউটাউনে, উল্টে গেল কন্টেনার
এদিকে, তিন শ্রমিককে উদ্ধার করতে না-পারায় উদ্বিগ্ন তাঁদের পরিবার। শনিবার ভোররাতেই তাঁদের দুর্ঘটনার খবর পাঠানো হয়েছে। তার পর থেকে দুশ্চিন্তায় তাঁরা চোখের পাতা এক করতে পারেননি। শ্যাম সেলের শ্রমিকদের দাবি, এই তিন জনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেইসঙ্গে পরিবারের এক সদস্যের চাকরিও তাঁরা দাবি করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ যদিও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তারা কোনও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পায়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে গাফিলতি রয়েছে কি না, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে।