বসিরহাট: “তালিবানরা যদি আফগানিস্তান দখল করতে পারে, তাহলে কেন আমরা বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে মন্দির ভাঙতে পারবো না ?” নিজেদের দলে লোক বাড়াতে দিনের পর দিন ফেসবুকে এই কথাগুলো বলে বাংলাদেশীদের উৎসাহিত এবং একজোট করার চেষ্টায় ছিল বাংলাদেশের নাগরিক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। পরিকল্পনা মত অনেক দূর এগিয়েও ছিল সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বসিরহাট থানার ভারত-বাংলাদেশ ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত থেকে সীমান্ত বাহিনী আটক করে তাকে।
আরও পড়ুন : বসিরহাটে ভরসন্ধ্যায় তৃণমূল সমর্থককে গুলি
পুলিশের প্রাথমিক জেরায় জানা গেছে, ২৮ বছরের জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার নলড়া গ্রামের বাসিন্দা। গত ৮ বছর আগে সে বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এ দেশে প্রবেশ করে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে চলে যায়। সেখানে ইরোট জেলায় পেল্লাই গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করে। ওই গ্রামে কাজের সূত্রে আরও অনেক বাংলাদেশের নাগরিক থাকেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার বাংলাদেশিদের একজোট করে লুঠপাট চালানোর পরিকল্পনা করে জাহাঙ্গীর। এই কাজে তাকে সঙ্গে দিতে রাজি হয় আরও ৮ থেকে ১০ জন বাংলাদেশী। জাহাঙ্গীর তাদের বোঝায় যে, “তালিবানরা যদি আফগানিস্তান দখল করতে পারে, তাহলে কেন আমরা বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে মন্দির ভাঙতে পারবো না ?” গোয়েন্দাদের জেরায় জাহাঙ্গীর বলে, আমরা একজোট হচ্ছি বুঝতে পেরে এলাকার মানুষ আমাদের তাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তবে চেন্নাইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পারে যে, জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে বাংলাদেশীরা একজোট হলেও মন্দির ভেঙে লুঠপাট করার পরিকল্পনা করছ। যদিও বেশ কিছু বাংলাদেশী বিরোধিতা করে। তখন জাহাঙ্গীর এবং তার সঙ্গীরা অন্যান্য বাংলাদেশীদের বোঝায় যে, তারা বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়ে মন্দির ভাঙলেও সেখানে লুটপাট চালাবে না। এ কথায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি একত্রিত হয়।
আরও পড়ুন : মার্কিন সেনাদের খাওয়ানোর পুরস্কার, আফগানিস্তান থেকে বাড়ি ফিরলেন বাদুরিয়ার কপিল
জাহাঙ্গীরের কথা চেন্নাইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পারার পর থেকেই যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের ধরপাকড় শুরু করে। দুজন ধরা পড়ার পর গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয় যে তাদের একত্রিত করার মূল পান্ডা জাহাঙ্গীর সহ কয়েকজন কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করছে। চেন্নাইয়ের গোয়েন্দারা পলাতক বাংলাদেশীদের ছবি দেশের সব সীমান্তবর্তী থানা এবং বিএসএফ আধিকারিকদের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা দিয়ে পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে বাংলাদেশ পালানোর সময় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে বসিরহাট থানার পুলিশ। পরে জাহাঙ্গীরের পরিচয় জানতে পেরে তারা চেন্নাইয়ের গোয়েন্দা দফতরে খবর পাঠায়। খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে এনআইএ’র দুই অফিসার সহ ৩ জন বসিরহাটে আসে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা নিশ্চিত হয় যে, এই ব্যক্তি অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর। সে চেন্নাই থেকে পালিয়ে এসেছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই চেন্নাই থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি দল বসিরহাটে আসবে জাহাঙ্গীরকে জেরা করতে।