দিন কয়েক আগেই কলকাতা টিভির পোর্টালে লিখেছিলাম, একের পর এক আদালতে ধাক্কা খাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবু হেলদোল নেই। দিল্লির হিংসার ঘটনায় ধৃত তিন ছাত্রছাত্রীর জামিন মঞ্জুর করে দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার যে মন্তব্য করেছে, তা নজিরবিহীন বললেও কম বলা হয়। দিল্লি হাইকোর্ট রাষ্ট্রকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, প্রতিবাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং সন্ত্রাসবাদী কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে। বিক্ষোভ দমনের নামে রাষ্ট্রের চোখে সেই ফারাকটাই কেমন যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের এই মানসিকতা যদি এ ভাবে প্রাধান্য পেতে থাকে, তা আগামী দিনে গণতন্ত্রের পক্ষে খুবই দুঃখের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আদালতের এই চেতাবনি মহামান্য রাষ্ট্রনেতাদের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করবে কি না, জানা নেই। রাষ্ট্রের ভাবখানা এমন যে, আদালত তো কত কথাই বলে। সব কথাকে অত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে।
আরও পড়ুন: যোগী রাজ্যে খবর করে সাংবাদিক খুন
গত বছরের মে মাসে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের সময় উত্তর পূর্ব দিল্লিতে যে হিংসার ঘটনা ঘটে, তাতে নাম জড়িয়ে যায় জেএনইউ-এর দুই ছাত্রী পিঁজরা তোড় আন্দোলনের সদস্যা নাতাশা নারওয়াল এবং দেবাঙ্গনা কলিতার। নাম জড়ায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইকবাল তানহার। তাঁদের গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি হিংসার অন্যতম পাণ্ডা বলা হয়েছিল তাঁদের। ওই হিংসায় মারা যান অনেকে। সেই থেকে ওই তিনজন বন্দি ছিলেন। নিম্ন আদালতে তাঁদের জামিন খারিজ হয়। ইউএপিএ আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলে।
মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল এবং অনুপ জয়রাম ভম্ভানি নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে তিন ছাত্রছাত্রীর জামিন মঞ্জুর করেছেন। দুই বিচারপতিই কড়া ভাষায় বিঁধেছেন দিল্লি পুলিশ তথা রাষ্ট্রকে। তাঁদের মতে, প্রতিবাদ আর সন্ত্রাসবাদকে কোথায় যেন গুলিয়ে ফেলছে রাষ্ট্র। এই দুইয়ের পার্থক্য যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। বিচারপতিরা এও বলেছেন, ধৃতেরা সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িত ছিলেন, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। চার্জশিটেও তেমন কিছু লেখা নেই।
এর আগেও আমরা দেখেছি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে পড়ুয়াদের ওপর দিল্লি পুলিশ অত্যাচার করেছে দিনের পর দিন। প্রতিবাদীদের কেমন করে কন্ঠরোধ করা হয়েছে। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় কেমন করে লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের ফাঁসিয়ে জেলে পোরা হয়েছে। সেই বিশিষ্টরা আজ কেমন আছেন, কেউ জানে না। কবে তাঁদের মুক্তি মিলবে, জানা নেই। আমরা দেখেছি, শাহিনবাগের প্রতিবাদী আন্দোলন কীভাবে স্তব্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:যোগীর প্রশংসায় ট্যুইট মোদির
আসলে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কোনও প্রতিবাদ সহ্য করতে পারে না। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই যে কেউ জিহাদি হয়ে যান বা সন্ত্রাসবাদী হয়ে যান। সাংবাদিকরাও ছাড় পান না। উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে মদ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে খবর করতে গিয়ে খুন হতে হল সাংবাদিক সুলভ শ্রীবাস্তবকে। অথচ যোগী সরকার দাবি করল, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই সাংবাদিকের। আরও অনেক সাংবাদিকের একই পরিণতি হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে খবর করায়। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর কথা আমরা ভুলিনি।
আদালত তাদের মনোভাব পরিষ্কার করে দিয়েছে। এর পরেও কি টনক নড়বে রাষ্ট্রের?