মাঠে ভারতের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলা অনেকেই আছেন। সেই ১১ জনের তালিকায় থাকা গাভাস্কর আছেন (১২৫) ম্যাচের ধারাভাষ্যকার হয়ে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১১৩) বোর্ড সভাপতি হয়ে। রাহুল দ্রাবিড় (১৬৩) দলের কোচ হয়ে। একমাত্র রাহুলই আছেন বায়ো বাবলের মধ্যে। তাই দেশের ১২ তম ক্রিকেটার (বিশ্বের ৭১) হয়ে ১০০ টেস্ট ক্লাবে জায়গা করে নেওয়া, বিরাট কোহলিকে সকলের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে দিয়ে গেলেন রাহুল।
মোহালি টেস্ট টস জয় দিয়ে নয়া ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা শুরু করলেন। টেস্টে প্রথম টসে জয়, অ্যাডভান্টেজ রো – হিট। আর নুতন – তরতাজা উইকেটে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দিলেন কোহলিকে।
টস জিতে শুরু হল, বিরাট বন্দনা পর্ব। মোহালির মাঠে মেন ক্লাব হাউসের সামনে একটি টেবিলে তিনটি স্মারক। একটি বিশেষ ১০০ নম্বর লেখা কোহলি ক্যাপ। কাঁচের শো কেসে ঢাকা। টেবিলের একপাশে রাহুল , অন্য পাশে কোহলি আর তাঁর স্ত্রী অনুষ্কা। তাঁদের সকলকে ঘিরে অর্ধাকারে মাঠের ভিতর দাঁড়ানো সাদা পোশাকের টিম ইন্ডিয়া। প্যাড পড়ে ওপেনার রোহিত আর ময়াঙ্ক।
রাহুল বলা শুরু করলেন কোহলির দিকে তাকিয়ে। গোটা স্টেডিয়ামের অডিও সিস্টেম অন। শোনা গেল : ” এই লম্বা দৌড়ে সবকিছুর রসদ আছে। তোমার স্কিল, মনের ইচ্ছে, একাগ্রতা, মনঃসংযোগ – সব দিয়েছো। ক্লাস আর এক্সেলেন্স দেখার মত। সঠিক নিশানায় ছুটে ১০০ টেস্ট খেলার গর্ব তোমার মধ্যে থাকা উচিৎ। দেশের হয়ে খেলে এই সাফল্য পাওয়ার জন্য, তোমাকে আর তোমার পরিবারের সকলের জন্য রইলো অভিনন্দন। এটা তোমার পাওনা। দারুণ কিছু করে তুমি এটা পেলে। আমরা ড্রেসিংরুমে তোমায় যা বলেছি, এখানেও তাই বলছি – ডবল সেঞ্চুরি চাই এই ম্যাচ খেলার দৌড়ে।”
সিলভার স্ক্রিনের নায়িকা অনুষ্কা শর্মাকে কর্তা কোহলির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। এবার বিরাটের বলার পালা। ” ধন্যবাদ রাহুল ভাই। এটা আমার কাছে এক বিরল মুহূর্ত। আমার স্ত্রী (অনুষ্কা শর্মা) এখানে। আমার দাদা এসেছে। স্টেডিয়ামে আছে। আমার পরিবার, আমার ছেলেবেলার কোচ সকলে আজ গর্ব বোধ করছি। আমার সব টিম মেম্বাররা – বছরের পর বছর আমাকে সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ। ”
https://twitter.com/ViratKohlioff/status/1499599845169897475?t=fJV3zjUhy9y2R0AFD8T4qQ&s=19
একটু থেমে আবার বলতে থাকলেন বিরাট : “এটা টিম গেম। এই লম্বা দৌড়ে তোমরা পাশে না থাকলে কখনও সম্ভব হত না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ, আমাকে দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে দেওয়ার জন্য। এসব আমাকে একের পর এক শক্তি যুগিয়েছে।”
আর টেস্ট ম্যাচ নিয়ে বলতে সুযোগ পেলে বিরাট বিরত থাকতে পারেন না। আর টেস্টে এমন সম্মান পেয়ে তিনি কতোটা খুশি সেটাও বোঝালেন। ” আজকের দিনে আমরা যে পরিমাণে ক্রিকেট খেলি, এমন দিনে দাঁড়িয়ে – এই বয়সে পৌঁছে পরের জেনারেশনের ক্রিকেটারদের বলতে পারি আমার কেরিয়ারের থেকে টেস্টে খেলার গর্বটা অনুভব করতে পারো।”
একটু নস্টালজিক হয়ে বললেন , ” আমার ছেলেবেলার এক হিরোর হাত থেকে এমন একটা সম্মান পাওয়া এই বিশাল ব্যাপার। আমার বাড়িতে একটা ছবি আজও আছে, আন্ডার ফিফটিন এনসিএ তে থাকার সময় তোমার সঙ্গে তুলেছিলাম। সেটা এখনও দেখি। আজ আমি ১০০তম টেস্ট ক্যাপ পেলাম তোমারই হাত থেকে। এটা একটা দারুন দৌড়, যা আশাকরি আরও এগিয়ে চলবে।”
India's Virat Kohli poses with his wife Bollywood actress Anushka Sharma after a special cap was presented to him by coach Rahul Dravid for his 100th test at the PCA Stadium in Mohali. @AFPphoto #ViratKohli100thTest #ViratKohli pic.twitter.com/kOR3abbipI
— Prakash Singh 🇮🇳 (@PrakashSingh_73) March 4, 2022
পর্ব শেষে কোহলি যখন অনুষ্কার বাহু বন্ধনে আটকে গোটা মাঠে করতালি আর তার নামে উল্লাস। সিনিয়র এক সাংবাদিক প্রেস বক্স থেকে এই দৃশ্যটা দেখে বলেই বসলেন: ” এটাই জেনারেশন নেক্সট।” সত্যিই তো! সুনীল গাভাস্কর, দিলীপ বেঙ্গসরকর, কপিলদেব, সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র সেহয়াগ, হরভজন সিং, ইশান্ত শর্মাকেও পাশে সঙ্গিনীকে নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। একজন ক্রিকেটারের জীবনে এই লাইফ পার্টনারের ভূমিকা কি – এই সকল ১০০ গন্ডি টপকে যাওয়া সকলে জানেন। কিন্তু এমনভাবে তা গোটা দুনিয়ার সামনে জানান দেওয়া – কোহলিরাই পারেন।
https://twitter.com/sportstigerapp/status/1499728114510745601?t=FItxGj8W0KywOVfjul1eZg&s=19
কোহলি টেস্টে খেলা শুরু করেছিলেন ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দুটি ইনিংসে ৪ আর ১৫ রান মাত্র করতে পেরেছিলেন। শুরুটা তেমন কিছু না হলেও, এদিন ১০০ তম টেস্টে ৮০০০ রানের গন্ডি টপকে গেলেন। ৫০ রানের উপর গড়।
প্রথমদিন নিজের শুরুটা ভালো হওয়ার থেকে শেষ হওয়ায় সময় হতাশ হয়েছেন বিরাট। লেফট আর্ম স্পিনারের বলে বোল্ড হওয়ায় ( ৪৫ রান ) তাঁর শরীরের ভাষা ছিল হতাশার। দিনের খেলার শেষে প্রেস কনফারেন্সে বসে বললেন: ” আমি বড় রানের ইনিংস খেলতে পারছিনা বলে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। নিয়মিত রানের মধ্যে আছি। দলের কাজে লাগছে। এদিনও একটা পার্টনারশিপ গড়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম।”
আবার বলে ফেললেন, ” রাহুল স্যার যখন আজ সকালে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন অনুভূতি আমার। আমি বলেছিলাম – অভিষেক টেস্ট খেলতে নামছি। নার্ভাস লাগছে। শুরুতে তাই, দৌড়ে নিজের ফিটনেস যাচাই করে খেলায় মন বসিয়ে ছিলাম।”
লাঞ্চে যখন অপরাজিত থেকে ফিরছিলেন, বায়ো বাবল বক্সে কাউকে দেখার চেষ্টা করছিলেন। তিনি যে কোহলির লাইফ পার্টনার – এই নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।
ছবি: সৌ বিসিসিআই, নিজস্ব চিত্র।