বুধবারের মধ্যে তাঁকে বিধানসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে পদ্ম প্রতীকে জয়ী মুকুল রায়ের উদ্দেশে এই দাবি শুভেন্দু অধিকারীর। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সোমবার গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কাছে। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির পরিষদীয় দলের সদস্যরা। তবে সবাই নয়। দুই সাংসদ বিধানসভার সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ার বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পঁচাত্তর। তাঁদের মধ্যে পঁচিশ জন টিম শুভেন্দুর রাজভবন অভিযানে শামিল হননি। যাঁদের ঘিরে ধোঁয়াশা। মুখে মুকুলের ইস্তফা দাবি করলেও ওই গরহাজির ‘পঁচিশ’ নিয়ে শব্দ খরচ করেননি বিরোধী দলনেতা।
ভোটে জিতে জীবনে প্রথম বিধায়ক। হলেও বিজেপিতে তাঁর মন টিকছিলো না। বিধায়ক হিসেবে শপথ নিলেও পরিষদীয় বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছিলেন মুকুল। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতিকে ঘিরে শুরু হয় জল্পনা। অগত্যা তৃণমূলে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তনের পর সেই জল্পনার অবসান হলেও বিধানসভাকে কেন্দ্র করে চর্চা শুরু হয়েছে মুকুলকে কেন্দ্র করে। তাতে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে শুভেন্দুর মন্তব্য। তিনি বলেছেন, মুকুল বুধবারের মধ্যে ইস্তফা না দিলে তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এই ব্যাপারেও শুভেন্দু রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। যদিও, বিধানসভায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করা বা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকারী অধ্যক্ষ। রাজভবনের কাছে এটা নিছকই অনধিকার চর্চা। তবুও শুভেন্দু রাজ্যপালেই আস্থা রেখেছেন। রাজভবনের এই সীমাবদ্ধতা বিলক্ষণ জানেন মুকুল।
আরও পড়ুন: মমতার মুকুল ঝটকায় মোদী-শাহ টলমল
দল ছেড়েও পদ আঁকড়ে থেকে গড়পড়তা বিধায়কদের মতো ‘অনৈতিক’ পথে তিনি যাবেন বলে মনে হয় না। শুভেন্দুর কথায় নয়, নিজের অঙ্কেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তিনি। সেটা টের পেয়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। শুভেন্দুও মালুম পেয়েছেন। কেননা তিনি বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর প্রথম কর্মসূচিতে দলের সব বিধায়ককে পাশে পেলেন না। পরিষদীয় আইন অনুসারে এককভাবে কোনো সদস্য দল ছাড়লে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের পদ খারিজ হবে। তবে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। যদিও কতদিনের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে তার কোনো সময়সীমা দলত্যাগ বিরোধী আইনে উল্লেখ নেই। আইনে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে, যদি কোনো পরিষদীয় দলের তিন ভাগের এক ভাগ একসঙ্গে দল ছেড়ে দেন,তাহলে তা দলত্যাগ হিসেবে গণ্য হবে না। দল ছেড়ে তাঁরা অন্য দলের সঙ্গে মিশে (merger) যেতে পারেন। যে দলে তাঁরা যোগ দেবেন, সেই দলেরই বিধায়ক হিসেবে তাঁদের গণ্য করা হবে।
আরও পড়ুন : মুকুলকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেবে রাজ্য
সেই হিসেবেই, পঁচাত্তর জন বিধায়কের মধ্যে ম্যাজিক সংখ্যা পঁচিশ। ঘটনাচক্রে শুভেন্দুর দলেরও ওই সমসংখ্যক বিধায়ক তাঁর হুইপ উপেক্ষা করে রাজভবনে অনুপস্থিত ছিলেন। এই নিয়ে মুখে কুলুপ আটলেও মুকুল স্বভাবসুলভ ঠান্ডা মাথায় কাজ সেরে চলেছেন। আপাতত মুকুলের টার্গেট অন্তত পঁচিশ জন বিজেপি বিধায়ক ভাঙানো।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, বিজেপি শিবিরের বিবাগী বিধায়কের সংখ্যাটা পঁচিশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিষদীয় রীতি অনুসারে ২৯৪ আসনের বিধানসভায় অন্তত তিরিশ জন একই দলের বিধায়ক থাকলে তাঁকে বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়া হবে। দলের নেতা হবেন ‘বিরোধী দলনেতা’। বর্তমানে সেই রীতি মেনেই শুভেন্দু রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল মর্যাদায় বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। তৃণমূলের মতে, প্রথম ধাক্কায় বিজেপির ঘর ভাঙানো শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সেই ভাঙনের জেরে শুভেন্দুর বিরোধী দলনেতার পদও খোয়া যেতে পারে। সেটা অবশ্য তৃণমূলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
কিন্তু আপাতত পঁচিশ বিধায়ক নিয়ে মুকুল বিজেপি পরিষদীয় দল ছেড়ে তৃণমূলের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযুক্ত হবে না। নিজের বিধায়ক পদ রক্ষা করতে অধ্যক্ষের অনুগ্রহ নির্ভর হতে হবে না তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ইন কমান্ডকে। উল্টোদিকে মুকুল। তাই এই খেলায় শুভেন্দুর স্নায়ুর চাপ বাড়ছে। আগামী দোসরা জুলাই বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। হাতে কিছুটা সময় রয়েছে মুকুলের। শেষ পর্যন্ত যদি মুকুল একা ইস্তফা দেন,তাহলে ফের কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনিবার্য। বিধানসভা ভোটে অভাবনীয় সাফল্যে তৃণমূলের মনোবল তুঙ্গে। রাজ্য বিজেপি ততটাই ছন্নছাড়া। এই অবস্থায় উপ নির্বাচন দিলীপ-শুভেন্দুদের কাছে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।