যে করেই হোক আটকাতেই হবে করোনার তৃতীয় ঢেউ। কিন্তু কীভাবে? কোন কৌশলে ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করা সহজ হবে? কাজ শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়। শুরু হয়েছে সেন্টিনেল সারভিল্যান্স। কলকাতা টিভির ডিজিটাল পেজে কলম ধরলেন চিকিৎসক অনির্বাণ দোলুই।
আরও পড়ুন রাজ্যে ফের বাড়ল করোনার গ্রাফ, মৃত্যু ১২ জনের
উপসর্গ নেই এরকম রোগীদের খুঁজতে জেলায়-জেলায় নজরদারি চালু করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। যাকে বলা হচ্ছে সেন্টিনেল সারভিল্যান্স। অনেকের মনেই প্রশ্ন এই সেন্টিনেল নজরদারি কী?
এটা আসলে জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ এক সমীক্ষা পদ্ধতি। কীভাবে হয়? প্রথমেই দেখতে হবে কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কত সংখ্যক উপসর্গহীন করোনা রোগী রয়েছেন। এখানে সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ। মানে নির্দিষ্ট একটি সময়ে হিসাবও করতে হবে। ধরা যাক কলকাতা শহরের কোনও একটি ওয়ার্ডে এক সপ্তাহের মধ্য়ে মোট এক হাজার জন উপসর্গহীন করোনা রোগী রয়েছেন। এই হিসাবটা তখনই কষতে হবে যে সময় কোভিড কেসের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করছে বা অল্প অল্প করে বাড়ছে। সাধারণত যাঁদের শরীরে উপসর্গের মাত্রা একদম কম বা যাঁরা একেবারে উপসর্গহীন তাঁদেরকে চিহ্নিত করতেই এই ব্যবস্থা। অর্থাৎ এক কথায় কোনও একটা বড় অঞ্চল জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাক্তাররা উপসর্গহীন জনসাধারণের উপর আরটিপিসিআর পরীক্ষা করবেন।
এতে বোঝা যাবে উপসর্গ না থাকলেও সুপ্ত অবস্থায় কার কার শরীরে করোনা ভাইরাসট রয়েছে। এটাই সেন্টিনেল নজরদারি। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যাঁদের করোনার উপসর্গ রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে যে করোনা পরীক্ষা করা হয় সেটা কিন্তু অ্যাকটিভ সারভিল্যান্স। শুধুমাত্র করোনার জন্যই নয়। যেকোনও রোগের ক্ষেত্রেই এই নজরদারি করা যায়। এর আগেও বহু জায়গাতেই সেন্টিনেল সারভিল্যান্স করা হয়েছে। যেমন এইচআইভি রোগের ক্ষেত্রেও এই সমীক্ষা ভাল কাজ করেছে। সহজেই এইচআইভি পজিটিভ রোগীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন সুস্থ থাকতে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন
উপসর্গহীন করোনা রোগী চিহ্নিত করার জন্য় এই কাজ রাজ্য সরকার শুরু করেছে। তাই প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট একটি করে হাসপাতাল এবং একটি করে নোডাল ল্যাবরেটরি বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই সমস্ত হাসপাতালে প্রতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মোট ৪০০ জন রোগীকে এই পরীক্ষা করানো হবে। যাঁরা প্রধানত স্ত্রী রোগ বা অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অর্থাৎ করোনার উপসর্গ না নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্য কোনও রোগের লক্ষণ নিয়ে। তাঁদের উপরেই আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হবে। এবং দেখা হবে তাঁদের মধ্যে কত জন লক্ষণ ছাড়াই করোনা পজিটিভ। এতে প্রধানত যে সুবিধাটা হবে, তা হল মূলত রাজ্যের কোথায় কত সংখ্যায় এই উপসর্গহীন রোগীরা রয়েছেন সেটা এই পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যাবে।
এছাড়াও কোন অঞ্চলে মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোন করা যেতে পারে বা কোথায় কোভিড পরীক্ষার হার বাড়ানো যেতে পারে তা ঠিক করা যাবে। একইসঙ্গে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও পর্যন্ত কত শতাংশ মানুষ আক্রান্ত, কিংবা কোথায় কোথায় উপসর্গহীন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সে সব বিষয়ে একটা পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে। যার উপর ভিত্তি করেই শুরু হবে তৃতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই।
আরও পড়ুন জয়েন্টের দিন স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে পরীক্ষার্থীদের ওঠার অনুমতি দিল রেল