এস সি ইস্ট বেঙ্গল–১ হায়দরাবাদ এফ সি–১
(আমীর দেরভিসেভিচ) (বার্থমিউ ওগবেচে)
গত বারের আই এস এল-এ অষ্টম ম্যাচে প্রথম জয় পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। এবারও তারা অষ্টম ম্যাচে জিতে হোটেলে ফিরতে পারত। পারল না খানিকটা নিজেদের দোষে, আর খানিকটা ভাগ্য সাহায্য না করায়। ভাঙাচোরা দল নিয়ে কুড়ি মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে আবার গোল করার সহজ সুযোগ পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়েও বাইরে মারেন ড্যানিয়েল চিমা। আবার গোল খাওয়ার পরেও বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারত লাল হলুদ। কিন্তু মহম্মদ রফিকের শট বারে লেগে ফিরে আসে। সব মিলিয়ে বছরের শেষ ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল শুধু হারলই না তা নয়, তারা বেশ মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ল। আর ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সেরার পুরস্কারটি নিয়ে গেলেন মিডফিল্ডার নামতে। গোয়ায় ক্রিস্টমাস উৎসব শুরু হবে আগামিকাল। তার আগে ইস্ট বেঙ্গল শিবিরে একটু হলেও উৎসবের মেজাজ। তবে জিতলে আনন্দটা হারও বেশি হত তা তো বলাই যায়।
ভাঙাচোরা দল নামাতে হয়েছিল ম্যানুয়েল দিয়াসকে। তাঁর ছয় বিদেশির মধ্যে তিন জনকেই পাননি তিনি। আক্রমণভাগের এক নম্বর প্লেয়ার আন্তোনিও পেরোসেভিচ লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ফ্রানিও পার্চে নর্থ ইস্ট ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর চোট এখনও সারেনি। নেদারল্যান্ডসের মিডফিল্ডার ড্যারেন সিডোয়েল এখনও চোট মুক্ত নন। তাই ডিফেন্সে টমিস্লাভ মার্সেলা, মাঝ মাঠে আমির দেরভিসেভিচ এবং সামনে শুধু ড্যানিয়েল চিমা। হায়দরাবাদ এবারের লিগে খুবই ভাল খেলছে। প্রথম ম্যাচে চেন্নাইয়ের কাছে হারার পর তারা পর পর পাঁচটা ম্যাচে অপরাজিত। আর ইস্ট বেঙ্গল তো একেবারে তলানিতে। তাই লাল হলুদ কোচ ৪-১-৪-১ ছকে টিম গড়েছিলেন। যে ডিফেন্ডারকে নিয়ে প্রতিদিনই অসন্তোষের বন্যা সেই রাজু গায়কোয়াড়কে মার্সেলার সঙ্গী করে দিয়েছিলেন দিয়াস। ডান দিকে জয়নার এবং বাঁ দিকে হীরা মণ্ডল। আটটা ম্যাচে টানা খেলার জন্য হীরা এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ডান দিকে জয়নার একটু কমজোরি ছিলেন। চার ডিফেন্ডারের সামনে সৌরভ দাসকে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন করে মাঝ মাঠে মহম্মদ রফিক, নামতে, অমরজিৎ কিয়াম এবং আমিরকে রেখে সামনে শুধু চিমা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খারাপ সিদ্ধান্ত নয়। এবং এই টিমটাই সবাইকে অবাক করে কুড়ি মিনিটে এগিয়েও গেল।
বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। এবং আমিরের বাঁ পায়ের শট হায়দরাবাদ গোলকিপার কাট্টিমণিকে দাঁড় করিয়ে রেখে গোলে ঢুকে যায়। গোলের খোঁচা খেয়ে জ্বলে ওঠার চেষ্টা করে হায়দরাবাদ। কিন্তু তারাও এক স্ট্রাইকারে খেলা শুরু করে। সামনে শুধু নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বার্থমিউ ওগবেচে। ৩৭ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকে অনেক টাকা দিয়ে মুম্বই থেকে নিয়ে এনেছে হায়দরাবাদ। এর আগে ছটা ম্যাচে পাঁচটা গোল করে ফেলেছেন ওগবেচে। এবং সেটাকে ছয়ে নিয়ে গেলেন ৩৫ মিনিটে গোল করে। বাঁ দিক থেকে অনিকেত যাদবের সেন্টার যখন ওগবেচের মাথায় পড়ছে তাঁর দু দিকে মার্সেলা এবং রাজু। কিন্তু তাদের মাথার উপর দিয়ে হেড করে গোল করে সমতা ফেরান ওগবেচে। এর আগেই অবশ্য দিনের সেরা সুযোগটা নষ্ট করলেন ড্যানিয়েল চিমা। নামতের চমৎকার থ্রু পাস ধরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে সামনে শুধু কাট্টিমণিকে পেয়েও বাইরে মারলেন চিমা। ওই সময় গোলটা হলে ইস্ট বেঙ্গল ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত। বিরতির একটু আগে মহম্মদ রফিকের দুর্দান্ত শট বার কাঁপিয়ে মাঠে ফিরে আসে।
বিরতির পর হায়দরাবাদের চাপ অনেক বাড়ে। তবে এই ৪৫ মিনিট এবং তার পরে আরও সাত মিনিট ইস্ট বেঙ্গল যে গোল খায়নি তার জন্য তাদের ডিফেন্সের সঙ্গে গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের প্রশংসাও করতে হবে। গোলটা খাওয়া ছাড়া বাকি সময় তিনি বেশ সাবলীল ছিলেন। হায়দরাবাদের ওগবেচেকে তেমন নড়তে দেননি রাজু গায়কোয়াড় কিংবা মার্সেলারা। বিরতির পর একটা হেডে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মাথা ফেটে যায় রাজুর। মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে তিনি আশি মিনিট অবধি খেলে যান। বাকি সময়টা সামলে দেন ড্যানিয়েল গোমস। বিরতির পর হায়দরাবাদের বেশির ভাগ আক্রমণই হয় ডান প্রান্ত দিয়ে। এই সময় হীরার চমৎকার ট্যাকলিংগুলো কিন্তু তাঁর দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই বঙ্গ সন্তানের খেলা কিন্তু ক্রমশ ভাল হচ্ছে। তবে ইস্ট বেঙ্গলকে এক পয়েন্ট এনে দেওয়ার পিছনে তাদের মিডফিল্ডেরও প্রশংসা করতে হবে। বিশেষ করে নামতে এবং মহম্মদ রফিকের। শেষ দিকে চিমা এবং আমিরকে তুলে নিয়ে বলবন্ত এবং হাওকিপকে নামান দিয়াস। তাঁরা কিছু করতে না পারলেও তাঁর এই সাহস কিন্তু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সবই হল কিন্তু ২০২১-এ জয়ের মুখ দেখল না ইস্ট বেঙ্গল। তবে হায়দরাবাদের সঙ্গে সম্মানজনক ড্র করে নিজের চাকরিটা, মনে হয়, আপাতত বাঁচাতে পারলেন ম্যানুয়েল দিয়াস।