বাংলার জুনিয়র সিলেকশন কমিটির অন্যতম সদস্য দেবেন্দ্রর রায়। ইডেনে ভারত – ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি টোয়েন্টি ম্যাচের সময় দেখা। তখনই ছেলেটিকে নিয়ে কথা হয়। প্রাক্তন ক্রিকেটার, এক সময়ের মিডিয়াম পেসার দেবেন্দ্রর বলছিলেন, ‘রোগা – পাতলা চেহারা হলে কি হবে, স্ট্রোক প্লে তে ওস্তাদ। বোলারকে ঘাড়ে চেপে বসতেই দেয়না। আমাদের আন্ডার নাইনটিনের ক্যাপ্টেন। টপ অর্ডারে ব্যাট করে। বরাত খারাপ , যুব বিশ্বকাপে প্রথম দলে জায়গা পায়নি। রিজার্ভে ছিল। ভয় পায়না। শট খেলতে বুকের খাঁচার দরকার হয়, সেটা আছে। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, ঠিক মতো মন বসিয়ে খেলতে পারলে বড় মঞ্চে খেলার মতন প্রতিভা।’
তখনও মনে হচ্ছিল, নির্বাচক তো – নিজেদের প্লেয়ার বাছাই যে ভালো, তাই বোঝাতে চাইছে। শুনলাম , সৌরভ – স্নেহাশিসদের ক্লাব বড়িশাতে
খেলে। চন্দননগরের ছেলে। ঈশান পোড়েলের কাকার ছেলে। আবার এক জেলার ছেলের উঠে আসার কাহিনী শুনতে হচ্ছে।
এই ছেলেটির লড়াকু ব্যাটিং বাংলাকে দিনের শেষে ২৪২ রান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর সে ৬২ বলে ৭৩ রান করে বাংলার বিপদতারণ হয়ে উঠছে। আর বোলাররা দিনের শেষে, বিপক্ষের প্রথম ইনিংস ৯ ওভারে, ১৫ রানের মধ্যে দুই উইকেট খুইয়ে বসে আছে।
Abhishek Porel gone for 73. Came to bat at 116/6. Leaving last with 242 on the board. This kid can play. Keep an eye on him. #RanjiTrophy #CricDomestic pic.twitter.com/w8gvDdCixv
— CricDomestic (@CricDomestic_) February 24, 2022
ছেলেটিই এখন পর্যন্ত বাংলা রঞ্জি দলের আবিষ্কার – অভিষেক পোড়েল। বাংলার প্রথম ম্যাচে তাঁর অভিষেক হয়। প্রথমদিন ফিল্ডিং করে বাংলা। দলের কোচ সৌরশিস লাহিড়ীর থেকে শুনলাম, কিপিংয়ে দারুণ দুটো ক্যাচ ধরেছে। তারপর তো ব্যাট হাতে নেমে দলকে জিতিয়ে এনেছিল। নিজের প্রথম শ্রেণির খেলা ম্যাচটিও জিতে শুরু করেছিল।
@ESPNcricinfo @debayansen there is one mistake in #BENvsHYD Ranji scorecard. Abhishek Banerjee is mentioned instead of Abhishek Porel. Can you rectify it.
— Suresh Manna🇮🇳 (@puchunpuchi) February 24, 2022
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ম্যাচে হায়দরাবাদের বিপক্ষে অভিষেকই প্রথম ইনিংসে বাংলার সেরা ব্যাটার তিনিই! খুব ভালো লাগছিল। খুশি সেই ক্রিকেটার – যিনি খেলতে না যাওয়ায় অভিষেকের রঞ্জি অভিষেক হয়েছে , সেই ঋদ্ধিমান সাহা। নিজের কেরিয়ারের নানান বিতর্ক যখন ঋদ্ধিকে অস্বস্তিতে রেখেছে, তখনও বাংলার এই ছেলেটির সাফল্যের খবরে খুশি সে। রসিকতা কিনা জানি না, কিছুটা বাস্তব কথা বলেই ফেললেন। ‘দেখো, বাংলাকে আরও একটি প্রতিভার খোঁজ তো দিলাম। আমি খেলতে গেলে, এই ছেলেটা বসে থাকতো। আমাদের দরকার কমবয়সী ক্রিকেটারদের বসিয়ে বসিয়ে পাকতে না দিয়ে, খেলিয়ে দেওয়া। জোশ নিয়ে খেলেছে, সময় আছে – পরে খেলবে করতে গিয়ে , যখন চান্স পায় , তখন সাফল্য না পেলেও – থ্যাঙ্ক ইউ।’
হ্যাঁ – অভিষেক খেলছে। এবং বাংলার প্রথম সারিতে উঠে আসছে উল্কা গতিতে। বাংলা টসে হেরে প্রথম ব্যাটিং সেরেছে। আগের ম্যাচের মত শুরুর দিকে বাংলার টপ অর্ডার আয়ারাম গয়ারাম! একটি ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ২ উইকেটে ২৪ রান! আবার কি ৮৮ রানের লজ্জা?
দ্বিতীয় ওভারে দলের নেতা অভিমন্যু ঈশ্বরণ শূন্য রানে আউট। আরেক ওপেনার সুদীপ ঘরামী (১৪) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। কটকের বরবটি স্টেডিয়ামে বাতাস আর শক্ত উইকেটে বলের তেজ দিয়ে হায়দরাবাদ শুরু করে দেয়।
লাঞ্চের সময় দেখা গেল, বাংলা আবার খোঁড়াছে। ৩০ ওভারে, ৩ উইকেটে ৭২ রান। সায়ন
শেখর মন্ডল আর ঋত্বিক রায়চৌধুরী তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রান তুলে আনে। কিন্তু ঠিক লাঞ্চের আগে ঋত্বিক আউট হয়ে যান।হায়দরাবাদের লেফট আর্ম স্পিনার তনয় ত্যাগরাজন স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন।
পরের সেশনটায় বাংলার হয়ে আবার সেই শাহবাজ আহমেদ (২৫) আর অভিষেক পোড়েল (২৬) লড়াই শুরু করে দেন। এই পর্বে আরও ৩ উইকেট চলে যায়। লাঞ্চের পালা মিটতেই মাত্র ৫ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট চলে যায়। সপ্তম উইকেটে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলে দুজনে। চা পান বিরতির সময় বাংলা ৬ উইকেটে ১৬৬ রানে দাঁড়িয়ে।
এরপর দলের রান ২০০-র গন্ডি টপকে যাওয়ার কারিগর অভিষেক। ৬২ বলে পাল্টা আক্রমণ করে ৭৩ রান করে নেন। তিনি আর শাহবাজ (৪০) জুটিতে ৭৪ রান যোগ করেন। এরপর আকাশদীপকে (১৩) সঙ্গে নিয়ে আরও ৩৮ রান যোগ করেন অভিষেক। পরপর দুটি ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন। আর তাতেই বাংলা ৭০.২ ওভার খেলে ২৪২ রানে ইনিংস শেষ করে। হায়দরাবাদের হয়ে লেফট আর্ম স্পিনার তনয় ত্যাগরাজন ৫ টি উইকেট তুলে নেন। রবি তেজা ৩ টি উইকেট নেন। তারমধ্যে আছে অভিষেকের উইকেটটি।
দিনের শেষে বাংলার নুতন বলের বোলাররা শুরুতেই হায়দরাবাদের দুই ব্যাটসম্যানকে ৯ ওভারের মধ্যে ১৫ রানের স্কোরে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনে দেখার বাংলার বোলাররা কতটা দাপট দেখাতে পারেন।
সি এ বি’র মিডিয়া টিম নিয়ম মতো ম্যাচের পর অভিষেকের প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। সেখানে সফল এই ব্যাটার বলেছেনঃ ‘ আরও কিছু রান দলের জন্য করা উচিত ছিল। বলটা ঠিক মত খেলা হয়নি। আগের ম্যাচের মত পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করে গেছি নিচেই দিকে নেমে।’
নিজেই বুঝছেন অভিষেক নিচের দিকে নেমেও তিনি নিয়মিত স্বাভাবিক ব্যাটিং করে রান পাচ্ছেন। বাংলার টিম ম্যানেজমেন্ট দলের সফল আর ধারাবাহিকতার বিচারে এখনও সেরা এই ব্যাটারকে এরপর টপ অর্ডারে তুলে আনার কথা নিশ্চয়ই ভাববেন।
ছবি: সৌ টুইটার।