কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের (calcutta Highcourt) বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার (Rajasekhar Mantha) বাড়িতে পোস্টার (Poster) লাগানো কিংবা হাইকোর্টের বিক্ষোভের পিছনে কে বা কারা আছে, তা খুঁজে বের করা হবেই। এমনটাই জানাল ওই ঘটনার তদন্তে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। ওই বেঞ্চের বিচারপতি চিন্ত্র রঞ্জন দাস মঙ্গলবার বলেন, এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি বা প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিভগননম বলেন, এক আইনজীবী ও তাঁর সহযোগীরা এই কাজ করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। কে এই আইনজীবী, সেটা জানলেই তো ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
ওই মামলার শুনানিতে এদিন রাজ্যে তরফে জানানো হয়, ওই ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করে নয়জন আইনজীবী হলফনামা দিতে চান। এদিন পোস্টার কাণ্ড নিয়ে পুলিশের রিপোর্টও জমা পড়ে আদালতে। তাতে জানানো হয়, যে চাপা খানা থেকে পোস্টার চাপা হয়েছিল তার হদিশ মিলেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন পুলিশের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কিছু আইনজীবীর নাম আছে। কিন্তু তাঁদের ঠিকানা নেই। যাঁরা বলছেন এই পোস্টার দেওয়ার মূলে তাঁদের ভাবনা আছে, তাঁরা কারা? তাঁদের নাম ঠিকানা জানাতে হবে।
আরও পড়ুন: Medical College Fire | কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে দমকলের ৬টি ইঞ্জিন
পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এপিসি রোডের একটি ছাপাখানায় ওই পোস্টার ছাপানো হয়েছিল। ওই ছাপাখানার মালিক হলেন জাহিদ হুসেন এবং মহম্মদ ইব্রাহিম। ওই রিপোর্টে বিচারপতি মান্থার যোধপুর পার্কের বাড়ির সামনে পোস্টার লাগানোর ঘটনায় ছয়জনের স্বীকারোক্তি পাওয়া গিয়েছে। আদালতের নির্দেশ, ওই ছয়জন এবং ছাপাখানার দুই মালিককে হাজির করাতে হবে। রাজ্য বার কাউন্সিলের আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, ভিডিও এবং ছবি দেখে বার কাউন্সিল কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে। তবে, এখনই সেই তথ্য বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া যাবে না। বিচারপতি চিত্ররঞ্জন দাস বলেন, কোনও আইনজীবী যদি স্বীকারোক্তি দিয়ে হলফনামা পেশ করতে চান, তার জন্য আদালত আলাদা ভাবনা করতে পারে। আদালত বলেন, যাঁরা হলফনামা দিচ্ছেন তাঁদের নাম রাজ্য বার কাউন্সিল এবং ইন্ডিয়ান বার কাউন্সিলকে জানাতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৫ মে।
গত ৯ জানুয়ারি বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাস বয়কটের দাবিতে তুলকালাম ঘটে কলকাতা হাইকোর্টে। তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সবসময় রায় দেন. এই অভিযোগে বিচারপতি মান্থার এজলাস ঘিরে রাখেন একদল আইনজীবী।কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক আইনজীবীদের এজলাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়, আইনজীবীদের নিগ্রহও করা হয়। শুধু তাই নয়, হাইকোর্ট চত্বর বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার আগের রাতে বিচারপতি মান্থার যোধপুর পার্কের বাড়ির সামনেও একই ধরনের পোস্টার পড়ে।আইনজীবীদের একাংশ বেশ কিছুদিন ওই বিচারপতির এজলাস বয়কট করেন। তা নিয়ে বার কাউন্সিল এনং বার এসোসিয়েশনের মধ্যে মতভেদও দেখা যায়। হাই কোর্টের এই পরিস্থিতির জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ঘটনাক্রম খতিয়ে দেখতে হাইকোর্টে প্রতিনিধি পাঠায়।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব চার সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন সমগ্র বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। বিচারপতি টি এস শিভগননমের নেতৃত্বে ওই বেঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। এখন তিনিই ভার প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এদিন ওই বেঞ্চেই ওই মামলার শুনানি চলে।