চলে গেলেন সনৎ শেঠ।
শুক্রবার সকালে পানিহাটির বটতলার নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বাংলা তথা ভারতের সর্বকালের সেরা গোলকিপারদের অন্যতম সনৎ শেঠ। বয়স হয়েছিল ৯৩। স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে আগেই। ছেলে, বউমা, দুই নাতনির সঙ্গে এক সংসারে থাকলেও সনৎ ছিলেন বেশ নিঃসঙ্গ। শেষ দিকে হাঁটতে একটু কষ্ট হত। তাই লাঠি ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন এক রাশ অভিমান।
সালটা ১৯৫৬। তখন কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে খেলছেন সনৎ শেঠ। সে বছরে তাঁকে ইস্ট বেঙ্গলে সই করানোর কথা। করলেনও সই। কিন্তু ইস্টার্ন রেলে আগেই কথা দেওয়া ছিল। তারা একটু অসন্তুষ্ট হতেই সই প্রত্যাহার করে থেকে গেলেন ইস্টার্ন রেলেই। এবং সেই কারণেই তাঁর অলিম্পিক দল থেকে বাদ পড়া। তখন ভারতীয় ফুটবলে বিরাট দাপট ইস্ট বেঙ্গল সচিব জ্যোতিষ গুহের। তিনি ব্যাপারটাকে ভাল মনে নেননি। তিনিই সেবারের মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতীয় দলের ম্যানেজার। কোচ রহিম সাহেব। কোচ চাইলেও ম্যানেজার তাঁকে চাননি। তাই সনতের আর অলিম্পিক খেলা হয়নি। তবে দেশের হয়ে এশিয়ান গেমস, মারডেকা খেলেছেন। কিন্তু অলিম্পিক খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
পরের বছর ১৯৫৭ সালেই গেলেন ইস্ট বেঙ্গলে। তবে সেখানে এক বছর খেলে ১৯৫৮ সালে মোহনবাগান। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ ছিল মোহনবাগানের স্বর্ণ যুগ। এই সময় মোহনবাগান পর পর চার বার কলকাতা লিগ, পর পর তিন বার ডুরান্ড সহ ভারতের সব প্রতিযোগিতাতেই একাধিক বার চ্যাম্পিয়ন। আর এই দলের গোলকিপার ছিলেন সনৎ। তাঁর প্রিয় ফুটবলার ছিলেন চুনী গোস্বামী। চুনীর কথা উঠলে গদ গদ হয়ে উঠতেন সনৎ। বার বার বলতেন, “আহা ও রকম ড্রিবলিং আর কেউ করতে পারত না।” সেই মোহনবাগান ছেড়ে চলে গেলেন এরিয়ানে। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে আবার ইস্ট বেঙ্গলে। এবং তার পরেই অবসর। পিটার থঙ্গরাজ এবং প্রদ্যোৎ বর্মনের সমসাময়িক হয়েও নিজ গুণে সনৎ ওদের মতোই সম্মান এবং শ্রদ্ধা পেয়েছেন ময়দানের।
শুরুটা হয়েছিল ইস্টার্ন রেলে। প্রবাদপ্রতিম কোচ স্বরাজ ঘোষের হাত ধরে। ১৯৫২ সালে এক জরুরী পরিস্থিতিতে তাঁকে ডেকে নেন স্বরাজ ঘোষ। দুজনেই পানিহাটির মানুষ। সেখান থেকে ১৯৫৫ সালে এরিয়ান। আবার ইস্টার্ন রেল হয়ে তার পর বড় দলে। দুই প্রধানে খেললেও সনতের প্রিয় ক্লাব ছিল ইস্টার্ন রেল এবং এরিয়ান। চাকরি করতেন স্টেট ব্যাঙ্কে। ময়দান থেকে অবসর নেওয়ার পরে খুচখাচ কোচিং করিয়েছেন। তবে সনৎ শেঠকে মানুষ মনে রাখবে তাঁর গোলকিপিংয়ের জন্য। তাঁর গ্রিপিং ছিল নিখুঁত। আউটিং ছিল দুর্দান্ত। আর ছিল অকুতোভয় মন। খুব্ই সাহসী গোলকিপার ছিলেন সনৎ।
এ সব কথা এখন সব অতীত। অলিম্পিকে না খেলার যন্ত্রণা, কষ্ট আর এক রাশ অভিমান নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সনৎ শেঠ।