কলকাতা: দেউচা পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লা ব্লক প্রকল্পের নোটিফিকেশন জারি করল রাজ্য সরকার৷ ১৬ নভেম্বর তারিখে নোটিফিকেশনটি সরকার জারি করেছে৷ কলকাতা টিভি ডিজিটাল এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে জানিয়েছিল, দেউয়া পাঁচামি প্রকল্পের পুনর্বাসন প্যাকেজে কী কী থাকছে ৷ নোটিফিকেশনে সেই রিপোর্টকেই সিলমোহর দেওয়া হয়েছে ৷
জমি, বাড়ি, গাছ, পশুখামার বা গোয়াল ঘর, শস্য সব কিছুর জন্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ঠিক হয়েছে প্রকল্পের আওতায় যে জমি পড়বে তার মালিককে বিঘা প্রতি ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জমির মান অনুযায়ী টাকার অংকের ক্ষতিপূরণ ঠিক করা হবে। জমির আয়তন যদি বিঘার কম হয় তা হলে কাঠা প্রতি ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। জমির উপর যদি দেখা যায় কোনও বাড়ি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে কী হবে? ঠিক হয়েছে সরকার নির্ধারিত দামেই দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ।
একই রকম ভাবে জমির উপর গাছ বা শস্য থাকলে সরকার নির্ধারিত দামেই প্যাকেজ পাবেন জামির মালিকরা। গোয়াল ঘর বা পশুখামার থাকলে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখানো মমতা বুঝিয়ে দিলেন সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণের মডেল নয়
জমির মালিকরা জমি দেওয়ার পর বা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর কোথায় থাকবেন? তারও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে সরকারি প্যাকেজে। ঠিক হয়েছে পরিবার পিছু একটি করে বাড়ি দেওয়া হবে। পাঁচ ডেসিবেল জমির উপর তৈরি করা হবে বাড়ি। সাড়ে পাঁচশো স্কোয়ার ফুটের বাড়িতে থাকবে দু’টি করে ঘর। থাকবে একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম, সিঁড়ি। পুনর্বাসন কলোনি এলাকায় এই বাড়িগুলি তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার।
পুনর্বাসনের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় এবং নতুন করে বসবাস শুরু করার জন্য এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঠিক হয়েছে পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। যদি নতুন বাসস্থানে নলকূপ খননের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে সরকার পাঁচ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে ঠিক হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিদিনের খরচ, জীবিকা চালানোর খরচ হিসেবে পরিবার পিছু মাসিক দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
সব মিলিয়ে কয়লা ব্লক প্রকল্পের এলাকা প্রায় ১২.৩১ বর্গ কিলোমিটার৷ যা কি না ৩৪০০ একরের সমান৷ এই গোটা এলাকাটিকে দুটো ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে৷ একটি হচ্ছে, দেওয়ানগঞ্জ-হরিণ সিংহ ব্লক যা প্রায় ২.৬১ বর্গ কিলোমিটার পরিধি নিয়ে রয়েছে৷ অন্যটি, দেওচা-পাঁচামি ব্লক৷ যার পরিধি ৯.৭ বর্গ কিলোমিটার৷
আরও পড়ুন-ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে সিবিআই তদন্ত, গ্রুপ ডি দুর্নীতি মামলায় হুঁশিয়ারি হাইকোর্টের
এই গোটা এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে জানা গিয়েছে, এখানকার মাটির তলায় প্রায় একশো উনিশ কোটি আশি লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে৷ ১৯৮৪-১৯৮৯ এই পাঁচ বছর ধরে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা জিএসআই এই সমীক্ষা চালায়৷ সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, শুধু কয়লা নয়, দেউচা পাঁচামি-র মাটির তলায় প্রায় ১৪০ কোটি ঘন মিটার ব্যসল্ট বা ব্ল্যাক স্টোন রয়েছে৷
এই বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদ ভবিষ্যতে জ্বালানি চাহিদার অনেকটাই পূরণ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রস্তাবিত কয়লা ব্লক প্রকল্পে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ আগেই হয়ে গিয়েছে৷ এর জন্য জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনাও করা হয়েছে৷ প্রস্তাবিত এলাকার মধ্য রয়েছে, বন দফতরের জমি, খাস জমি৷ এছাড়াও রাজ্য সরকারের অন্যান্য জমিও রয়েছে৷
প্রকল্পের কাজ পুরো মাত্রায় চালু হয়ে গেলে কয়েক লাখেরও বেশি মানুষের কর্ম সংস্থান হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রকল্পের মাধ্যমে দেওচা পাঁচামি সংযুক্ত এলাকায় আর্থ-সামাজিক চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে যাবে৷ শিল্পোন্নয়নের জন্য এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে৷