ওপেনার ময়াঙ্ক আগরওয়াল সুস্থ। কিন্তু প্রথম টেস্টে ওপেন করার সুযোগ পেয়ে কে এল রাহুল রান করেছেন, শুধু সেটাই নয় – তিনি ঘণ্টার পর ঘন্টা ক্রিজে ছিলেন। যা চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে পারেননি। কাজেই লিখতে বাধ্য হলাম: বেচারা ময়াঙ্ক।
বৃহষ্পতিবার লর্ডসে শুরু হচ্ছে, ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্ট শেষদিন বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায়, হাতে ৯ উইকেট নিয়েও ১৫৭ রান তুলে ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত । ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট সেঞ্চুরি করে যদিও ভারতের জয়ের পথে কাঁটা হয়েছেন। অ্যান্ডারসন আর রবিনসন মিলে ভারতের ব্যাটসম্যানদের শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। আর বুমরাহ-সামি-শার্দুল-সিরাজরা পাল্টা ধাক্কা দিয়েছিল বিপক্ষ শিবিরে।
এবার লর্ডস। বাংলার একঝাঁক প্রাক্তন ক্রিকেটার এখন থাকেন এই লর্ডসের আশে পাশে। রাজর্ষি চৌধুরী, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিজিৎ বোস (প্রয়াত গোপাল বসু’র ছেলে)। বাংলার প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত পৌঁছে গেছেন লন্ডন। সকলে দল বেঁধে মাঠে যাবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেশ গরম ওখানে। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। আকাশ ঝকঝকে। ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার মতন বৃষ্টির খবর নেই।
বরঞ্চ চোট-আঘাতের এন্তার খবর আছে। ভারতীয় শিবির থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শার্দুলের চোট। তিনি দলে নেই। তাহলে কে? ইশান্ত আবার লর্ডসে সফল হয়েছেন এর আগে। তিনি খেলছেন। কারণ তিনি সুস্থ। তাহলে, অশ্বিন? টিম ইন্ডিয়ার নেতা কোহলি বলে দিয়েছেন, দল চার পেসার নিয়েই নাকি নামবে। জাদেজা প্রথম টেস্টে চোস্ত ব্যাট করেছেন। স্পিনার হয়ে তাঁর করার কিছুই ছিল না। ভারত পাঁচ বোলার নিয়ে নামবে। তাহলে, ব্যাটিং লেজ যে লম্বা হল! অশ্বিন থাকলে ভাল হত না?
আরও পড়ুন: EngvsInd: লর্ডস টেস্টে এবার হাজির বোর্ড সভাপতি সৌরভ
অশ্বিন নাকি সিরাজ-এর উত্তর নাকি মিলবে,টসের ঠিক আগে। কোহলির আবার টস ভাগ্য বেশ খারাপ। যদি লর্ডস সদয় হয়। তাহলে, টস জিতে ব্যাট করতে নামা উচিৎ ভারতের। অ্যান্ডারসন থাইয়ের পেশীতে টান ধরেছে। ম্যাচের আগেরদিন সারাক্ষণ-তিনি খেলতে পারছেন না, এই হওয়া চললো। কিন্তু শেষ পর্বে তিনি নেটে বল করলেন বেশ কিছুক্ষণ। অভিজ্ঞ অ্যান্ডারসন পুরো ফিট না হলেও ইংল্যান্ড তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নেয় কিনা সেটাই দেখার। তাঁর আরেক নুতন বলের সঙ্গী ব্রড পায়ে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন এই ম্যাচে। কাজেই, এই সুযোগে আগে বাট করে বড় রান রুটের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার মোক্ষম ভাবনা নিশ্চয়ই শাস্ত্রী – কোহলির থাকবে। ২০১৬ সালের পর, এই প্রথমবার অ্যান্ডারসন- ব্রড জুটিতে ভাঙন! দেখা যাক কাকে কাকে ছাড়া খেলতে নামে ইংল্যান্ড।
লর্ডসে দুটি জয়:
এই ঐতিহাসিক মাঠে ভারতীয় দলের মাত্র দুটি টেস্ট জয়ের নজির আছে। এবার সেই নজির আরও ভাল হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জাত চেনাতে হবে। পিছন ফিরে পরিসংখ্যান দেখছিলাম, পূজারা-কোহলি-রাহানের মধ্যে শেষজন মেলবোর্নে সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেটা ছাড়া ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ ফেলে আসা দুটি বছরে একটিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
ভালো ভাবে শুরু করেও, তিন অঙ্কের রান ছুঁতে পারেননি পূজারা-কোহলি। কিন্তু ওঁরা খেলছেন।
পিচ পরিক্রমা:
লর্ডসের পিচে সবসময় পেসাররা বাড়তি সুবিধা পায়। এই মাঠের ঢাল একদিকে। তাই নাকি পেসাররা অধিকাংশ ম্যাচের শেষে চাওড়া হাসি নিয়ে ছবি তোলেন। আর মাঠ ও পিচের তোলা ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, ২২ গজে হাল্কা ঘাস থাকছে। ২০১৮ সালের ম্যাচে দুদিনে ভারতীয় ইনিংসকে থামিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড । অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস জয়ী ইংল্যান্ড দলের নায়ক ছিলেন সেবার ।
পিচ যদি শুকনো থাকে, তাহলে জাদেজার সঙ্গে অশ্বিনকে নিয়ে দল নামানো উচিৎ হবে। ভারত কেন যে নিজের শক্তির উপর ভরসা করে না-যুক্তি তে এর ব্যাখ্যা নেই।
তবু মনে রাখি:
১৯৯০ সালে এই মাঠে এক ইনিংসে ভারতীয় দল ৪৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিল। এবার যদি, বিরাট বাহিনী সুনাম অনুযায়ী খেলতে পারে তাহলে যে যে কীর্তিগুলো নুতন করে লেখা যাবে, তাতে একবার নজর দেওয়া যাক।
* এখনও পর্যন্ত ভারতীয় বোলার হয়ে সফল একমাত্র ইশান্ত শর্মা (১৯৯০ সালে)। এক ইনিংসে সেবার তিনি ৭টি উইকেট নিয়েছিল।
* ভিনু মানকাদ-একমাত্র ব্যাটসম্যান হয়ে মোট ১৮৪ রান করেছিলেন। এবার এই রেকর্ড নুতন করে লিখতে পারে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
* লর্ডসে ৩টি টেস্ট খেলেছেন ইশান্ত। আর একটি উইকেট পেলেই, তিনি পিছনে ফেলবেন কুম্বলেকে। এখনও পর্যন্ত এই মাঠে ৩টি টেস্ট খেলে ইশান্ত পেয়েছেন ১২টি উইকেট। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসবেন। তাঁর আগে আছেন-বিষেন সিং বেদি (৪ ম্যাচে ১৭টি উইকেট) এবং কপিলদেব (৪ ম্যাচে ১৭টি উইকেট)।
ইংল্যান্ড শিবিরে জেমস অ্যান্ডারসন ২৮টি উইকেট পেয়েছেন এই মাঠে,ভারতের বিপক্ষে ৪টি টেস্ট খেলে।
তাই নজরে রইল লর্ডস।
ছবি: সৌ-টুইটার।