আই এস এল-এর বারো নম্বর ম্যাচে প্রথম জয় পাওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে চায় না এস সি ইস্ট বেঙ্গল। মঙ্গলবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে ইস্ট বেঙ্গল ২-১ গোলে হারিয়েছে এফ সি গোয়াকে। বিরতির সময় ইস্ট বেঙ্গল ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল। তাদের হয়ে দুটি গোলই করেছেন মণিপুরের বাইশ বছর বয়সী স্ট্রাইকার নাওরেম মহেশ সিং। তাঁর দুটি গোলের ফাঁকে গোয়ার গোলটি করেন আ্যালবার্তো নাগুয়েরা। সোমবার ইস্ট বেঙ্গলের খেলা হায়দরাবাদ এফ সি-র সঙ্গে, যারা এই লিগে বেশ ভাল খেলছে। প্রথম ম্যাচ জেতার পর ইস্ট বেঙ্গল পয়েন্ট টেবলে একটু উপরে উঠেছে। তারা এগারো থেকে উঠে এসেছে দশে। আর হায়দরাবাদের এগারো ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট। তারা এখন আছে তিন নম্বরে। তাই সোমবার ইস্ট বেঙ্গলকে জিততে হলে বেশ ভাল খেলতে হবে।
তবে ইস্ট বেঙ্গলের নতুন কোচ মারিও রিভেরা এ নিয়ে খুব চিন্তিত নন। হায়দরাবাদকে যথেষ্ট সমীহ করার পাশাপাশি তিনি নিজের দলের ইতিবাচক দিকগুলির দিকেই নজর দিতে চান। পাঁচ ম্যাচ সাসপেন্ড থাকার পর আন্তোনিও পেরোসেভিচকে হায়দরাবাদ ম্যাচ পাবে ইস্ট বেঙ্গল। গত পাঁচটি ম্যাচে কোনও বিদেশি স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলতে হয়েছে ইস্ট বেঙ্গলকে। কারণ ড্যানিয়েল চিমা খেলা আর না খেলা সমান। এখন তিনি নেই। চলে গেছেন জামশেদপুর এফ সি-তে। তাঁর বদলে ইস্ট বেঙ্গলে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্সেলো রিবেইরা। সোমবারের ম্যাচের আগে মার্সেলো সতীর্থদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পাবেন। কোচ মারিও চাইলে তিনি মাঠে নামতেও পারেন। হয়তো শুরু থেকে খেলবেন না। তবে খেলবেন এটা ধরে নেওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত যদি আন্তোনিও ও মার্সেলো এক সঙ্গে খেলতে পারেন তা হলে ইস্ট বেঙ্গলের ফরোয়ার্ড লাইন যে অনেক শক্তিশালী হবে তা বলাই বাহুল্য। এই দুই বিদেশির সঙ্গে ডিফেন্সে ফ্রানিও পার্চে খেলবেন বলেই মনে হয়। গোয়া ম্যাচে ফ্রানিও বেশ ভালই খেলেছেন। তবে গত চারটি ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল যে দুটি ড্র করেছে, একটি জিতেছে এবং মাত্র একটিতে হেরেছে তার পিছনে বড় কারণ সেন্টার ব্যাক আদিল শেখ। যে আদিলকে জার্সিই দিতেন না আগের কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস সেই আদিল এখন দলের ক্যাপ্টেন। গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়ায় গোয়া ম্যাচে অধিনায়ক হয়ে নামেন মহম্মদ রফিক। কিন্তু বিরতির পর ডিফেন্সের উপর চাপ কমাতে রফিককে বসিয়ে রাজু গায়কোয়াড়কে নামান কোচ রিভেরা। এবং তখন ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড পরেন আদিল। তবে আদিল ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড পরুন কিংবা না পরুন তিনিই ডিফেন্সের ক্যাপ্টেন। তাঁর জন্যই ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। এক সময় ডিফেন্সে বল গেলেই মনে হত গোল খেয়ে যাবে ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু এখন সেই আতঙ্কটা অনেকটাই কমে গেছে। আদিলকে টিমে ফিরিয়ে এনেছেন রেনেডি সিং। রিভেরাও রেনেডির পথ অনুসরণ করে আদিলকে খেলিয়ে যাচ্ছেন। এবং আদিল তাঁর উপর রাখা আস্থার মর্যাদা দিচ্ছেন। গোয়া ম্যাচে বিরতির পর একটার পর একটা আক্রমণ আছড়ে পড়েছে ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সে। ফ্রানিও পার্চেকে পাশে নিয়ে আদিল সে সব সামলে দিয়েছেন।
ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সে প্রথম থেকেই খুব ভাল খেলছিলেন হীরা মণ্ডল। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় হীরা গোয়া ম্যাচে খেলতে পারেননি। আশা করা যায় সোমবার হায়দরাবাদ ম্যাচে তিনি দলে ফিরবেন। যদি হীরা খেলার মতো জায়গায় না থাকেন তা হলে অঙ্কিত মুখার্জি আছেন। গোয়া ম্যাচে তিনি খুবই ভাল খেলেছেন। ডান দিকে অমরজিৎ কেপি বেশ ভাল। মনে হচ্ছে ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স এখন অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। মাঝ মাঠে ভারতীয়দের উপর নির্ভর করতে হয়েছে রেনেডি এবং মারিওকে। যদিও গোয়ার বিরুদ্ধে সেম্বই হাওকিপ ফরোয়ার্ডে খেলেছেন আদতে তিনি তো মিডফিল্ডার। মনে হায়দরাবাদ ম্যাচে হাওকিপ তাঁর নিজের জায়গায় ফিরে আসবেন। গোয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করার পর নাওরেম মহেশকে বসাবার কোনও জায়গা নেই। ধরেই নেওয়া যায়, সামনের দিকে আন্তোনিও পেরোসেভিচের সঙ্গী হবেন তিনি। মার্সেলো আসবেন পরের দিকে।
হায়দরাবাদ খুবই ভাল দল। তাদের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বার্থোমিউ ওগবেচে গোলের মধ্যে রয়েছেন। সামান্যতম সুযোগ পেলেই যে তিনি গোল করতে পারেন তার প্রমাণ রেখেছেন মোহনবাগান ম্যাচে। ম্যাচ জিততে হলে ওগবেচেকে নজরে রাখতে হবেই। ইস্ট বেঙ্গলের এত দিন সমস্যা ছিল গোল করেও গোল রাখতে না পারা। সেই সমস্যা মিটেছে বলেই মনে হচ্ছে। হায়দরাবাদকে যদি তারা হারাতে পারে তা হলে ২৯ জানুয়ারি মোহনবাগান ম্যাচে অনেক উজ্জীবিত মনে খেলতে পারবে। তবে সে কথা এখন পরে। আপাতত ইস্ট বেঙ্গলের পাখির চোখ হায়দরাবাদ। এবং সে ম্যাচে জেতা ছাড়া আর অন্য কিছু ভাবছে না ইস্ট বেঙ্গল। হয়তো সে জন্যই কোচ মারিও বলেছেন,” সামনের ম্যাচগুলিতে আমরা জেতার কথাই ভাবছি। আই এস এল-এর দলগুলির শক্তি আমি জানি। স্পেনে থাকার সময় সব ম্যাচ দেখেছি। আমাদের দলের যা শক্তি তাতে অন্য দলকে হারানো সম্ভব। তবে বেশি ভুল করলে চলবে না। আমরা যদি নিজেদের শক্তি মতো খেলতে পারি জয় পাওয়া কঠিন হবে না।”