ভারত গৌরব সম্মান পাওয়ার পর ঝুলন গোস্বামী বললেন, “আমি এর আগে অর্জুন পুরস্কার পেয়েছি। পেয়েছি পদ্মশ্রী পুরস্কার। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের দেওয়া এই ভারত গৌরব সম্মান পেয়ে আমি যা আনন্দ পেলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।” একটু থেমে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়িকা বললেন, “নানা জায়গায় আমাকে জিগ্যেস করা হয় আমি কোন দলের সমর্থক। মোহনবাগান না ইস্ট বেঙ্গল। আজ সবার সামনে বলছি আমি এক হাত ইস্ট বেঙ্গলের সমর্থক। যখন কলকাতার বাইরে খেলতে যেতাম তখন আমাদের টিমের ম্যানেজারকে বলে রাখতাম, ইস্ট বেঙ্গলের খেলার খবরের আপডেট যেন পাই। আজ আমার জীবনের একটা স্মরণীয় দিন।” ঝুলনের হাতে ভারত গৌরব সম্মান এবং দু লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন বাংলার রঞ্জি জয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু ঝুলনই নয়, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলনমেলায় ভারত গৌরব সম্মান পেলেন কিংবদন্তী টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ। শহরের মেয়র এবং রাজ্যের মন্ত্রীর হাত থেকে ভারত গৌরব সম্মান পেয়ে লিয়েন্ডার পেজ বললেন, “লাল হলুদ রংটাই একটা অনুপ্রেরণার প্রতীক। এই সম্মান পেয়ে আমি গৌরবান্বিত।” মঞ্চে তখন হাততালি দিচ্ছেন লিয়েন্ডারের মতোই অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী ডাঃ ভেস পেজ, সম্পর্কে যিনি লিয়েন্ডারের বাবা। এই রকম হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত তৈরি হল সোমবারের সন্ধ্যায়। ক্ষুদিরাম অনুশীলন মঞ্চের সামনে তখন দর্শকদের থিকথিকে ভিড়। একে তো দু বছর বন্ধ থাকার পর জন্মদিনের অনুষ্ঠান। তার উপর ইমামির সঙ্গে সংযুক্তিসাধনের জন্য সমস্যার অবসান। মঞ্চে ছিলেন ইমামির কর্নধার আদিত্য আগরওয়াল। সব মিলিয়ে বাঁধ ভাঙা আনন্দে ভেসে গেছে গোটা অডিটোরিয়াম। শুরুতে ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার এবং অন্যতম সহসভাপতি অজয়কৃষ্ণ চ্যাটার্জি প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভ সূচনা করেন। তার পর সৈকত মিত্রের দুটি রবীন্দ্র সঙ্গীত সন্ধ্যার সুর বেঁধে দেয়। সুগায়ক সৈকত গাইলেন, “আগুনের পরশমণি” এবং “তুমি রবে নীরবে”। মঞ্চে অন্যান্যদের সঙ্গে ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সচিব সুরেশ চৌধুরির পৌত্র মহীতোষ রায়চৌধুরি। এর পর সম্মান প্রদান। জীবনকৃতি সম্মান পেলেন ১৯৭৬ সালের অধিনায়ক গৌতম সরকার এবং ১৯৭৩ সালের অধিনায়ক স্বপন সেনগুপ্ত। গৌতমের হাতে স্মারক এবং এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন তাঁর পার্টনার সমরেশ চৌধুরি। আর স্বপন সেনগুপ্তের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন কদিন আগে মোহনবাগানরত্ন পুরস্কার পাওয়া শ্যাম থাপা। সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার পেলেন লোকেন্দ্রপ্রতাপ সাহি। সেরা ফটোগ্রাফার সুবীর মজুমদার। সেরা দুই রেফারির পুরস্কার পেলেন সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং তপন হালদার।
সব মিলিয়ে আবেগে, উৎসাহে, সঙ্গীতে, সংবর্ধনায় সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হল ইস্ট বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকালে কেক কেটে এবং ক্লাব পতাকা উত্তোলনা করা যার সূচনা করেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে অনুষ্ঠানের আরও বাকি আছে। ১৭ আগস্ট ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মিউজিয়াম উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেদিনই তাঁর হাত দিয়ে প্রকাশিত হবে ক্লাবের বাৎসরিক স্মারক গ্রন্থ।