এ এফ সি কাপের গ্রুপ লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার এটিকে মোহনবাগানের সামনে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস। প্রথম ম্যাচে গোকুলম কেরালার কাছে বিশ্রীভাবে হেরে জুয়ান ফেরান্দোর দল একটু ব্যাক ফুটে আছে। গোকুলমের কাছে হারের চেয়েও তাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে সেন্টার ব্যাক তিরির চোটে। মোহন ডিফেন্সের স্তম্ভ তিরি গোকুলম ম্যাচের বিরতির আগে চোট পেয়ে বসে যান। পরে জানা যায়, তাঁর চোট গুরুতর। আগামি সাত-আট মাস তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। তিরির অভাবে মোহনবাগান ডিফেন্সের হাল যে কতটা শোচনীয় তা গোকুলম ম্যাচেই বোঝা গেছে। তিরির বদলে যাঁকে নামানো হয়েছিল সেই আশুতোষ মেহেতা একেবারেই টিমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। বিরতির আগে ম্যাচে মোহনবাগানেরই প্রাধান্য ছিল। তারা বেশ কয়েকটা সুযোগও তৈরি করে। তবে তার থেকে গোল করতে পারেনি। উল্টে শেষ ৪৫ মিনিটে চার গোল খেয়ে যায়। তিরির অভাবটা খুব বেশি করে অনুভূত হয়েছে।
শনিবার তাই জুয়ান ফেরান্দোর বড় পরীক্ষা তিরি বিহীন ডিফেন্সকে ঠিক মতো সাজানো। সন্দেশ ঝিঙ্গন পুরো ফিট থাকলে ফেরান্দোর সমস্যা কমত। কিন্তু তিনিও যে পুরো ফিট নন তা তো গোকুলম ম্যাচেই বোঝা গেছে। তিরি মাঠ ছাড়ার পর তাই সন্দেশকে না নামিয়ে নামানো হয়েছিল আশুতোষ মেহেতাকে। শনিবার আশুতোষকে নামানো কোনও প্রশ্নই নেই। সেক্ষেত্রে জুয়ানের হাতে আছে আরেক বিদেশি কার্ল ম্যাকইউ। কার্ল আদতে ডিফেন্ডার নন। তিনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। এখন দেখার তাঁকেই প্রীতম কোটালের পাশে নামানো হয় কি না। ও দিকে টিমের স্তম্ভ হিসেবে যাঁকে ধরা হয় সেই হুগো বুমোকেও না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গোকুলমের বিরুদ্ধে বুমো মাঠে নামেননি। বসুন্ধরার বিরুদ্ধেও তাঁর নামার সম্ভাবনা কম। তাই জুয়ানের পক্ষে প্রথম একাদশ ঠিক মতো বাছাই করা রীতিমতো কঠিন কাজ। সে ক্ষেত্রে জনি কাউকো, রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন। সে দেশের সেরা দল। অন্তত কাগজে কলমে। গত বছরেও এ এফ সি কাপের গ্রুপ লিগে মোহনবাগানের সঙ্গে ছিল তারা। মালদ্বীপে সেই ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে। সেবারের বসুন্ধরার চেয়ে এবারের টিমটা অনেক বেশি শক্তিশালী। টিমে চারজন বিদেশি আছেন। এবং আছেন একজন নাইজিরীয় যিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়েও খেলেছেন তিনি। তাই পাঁচজন বিদেশি নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ রয়েছে বসুন্ধরার। তাদের টিমের জাতীয় প্লেয়াররাও বেশ ভাল। টিমকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ থেকে শ দুয়েক সমর্থক এনেছে বসুন্ধরা। তারা স্টেডিয়ামে ঢোকে লাল রঙয়ের জার্সি পরে। জার্সির পিছনে ১৬ নম্বর লেখা থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর তাই জার্সির পিছনে লেখা থাকে ১৬। তাই বসুন্ধরা টিমে ১৬ নম্বর জার্সি পরা কোনও প্লেয়ার নেই। ১৬ নম্বরটা তারা উৎসর্গ করে দিয়েছে সমর্থকদের। দলের সঙ্গে এসেছেন বসুন্ধরার প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসানও। আসলে বসুন্ধরা এবার যে কোনওভাবেই গ্রুপ লিগের বেড়া টপকে সেমিফাইনালে যেতে চায়। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের মেজিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা সেই লক্ষ্যে একটু এগিয়েছে। মোহনবাগানকে হারিয়ে তারা সেই লক্ষ্যের অনেকটা কাছাকাছি পৌছতে চায়। এখন মোহনবাগান কি পারবে মাস্ট উইন ম্যাচে ভাঙাচোরা দল নিয়ে বসুন্ধরাকে আটকাতে?
মোহনবাগানের মতো বাংলাদেশের কোচও স্পেনের মানুষ। সেই অস্কার ব্রুজোঁ অবশ্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টিমের দায়িত্বে। টিমটাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। মোহনবাগানকে নিয়ে তার বক্তব্য হল, ” ওরা খুবই ভাল দল। তবে গোকুলমের কাছে হেরেছে। গোকুলম যদি হারাতে পারে তাহলে আমরা পারব না কেন?”
শনিবার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এটিকে মোহনবাগান আর বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ বিকেল সাড়ে চারটায়। আর রাত সাড়ে আটটায় গোকুলম কেরালা ও মেজিয়ার খেলা ওই মাঠেই।