গ্রেফতারি তদন্তের অংশ হলেও তদন্ত শেষে গ্রেফতারি বেআইনি। হাইকোর্টে তোপ দাগলেন মদন মিত্রর কৌঁসুলি সিদ্ধার্থ লুথরা। কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা স্থানান্তরের শুনানিতে মঙ্গলবার সিদ্ধার্থ লুথরা সওয়ালে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বেআইনি পদক্ষেপের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারি তদন্তের অংশ হলেও যে তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে, সেখানে গ্রেফতারি বেআইনি। প্রতিটি ধাপে সিবিআই এই মামলাকে অন্য পথে চালিত করছে বলে সওয়াল করেন তিনি। লুথরা বলেন, প্রথমে জানানো হল সিবিআই বিশেষ আদালতের কাছে কোনো নথি পেশ করতে পারেনি। পরে দেখা গেল জামিনের নির্দেশ দেওয়ার আগেই সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে চার্জশিট পেশ করেছেন তাঁরা। এর উত্তরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল লুথরাকে বলেন, সিবিআইয়ের তদন্তের প্রক্রিয়া এই মামলার বিষয়বস্তু নয়। এর উত্তরে লুথরা সওয়াল করেন, সিবিআইয়ের অভিযোগের যৌক্তিকতা নেই। সংবাদমাধ্যমের ওপর ভিত্তি করেই অভিযোগ এনেছে সিবিআই। তদন্তের অংশ হলেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি। তাছাড়া যে তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে সেখানে গ্রেফতারির কোন মানে হয়না। আইনি প্রক্রিয়া এর অনুমোদন দেয় না। এই ধরনের গ্রেফতারি অভূতপূর্ব।
বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় বলেন, এখানে জামিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চার্জশিট পেশের পর কি গ্রেফতার করা যায় সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই অবস্থায় আদালত অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রাখবে না বাতিল করবে। প্রশ্ন তাঁর।
এর উত্তরে লুথরা বলেন, গ্রেফতার যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে জামিন তো হবেই। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী তদন্ত শেষের পর চার্জশিট পেশ হয়। যদি হেফাজতেই নিতে হয় তাহলে তদন্তের সময় গ্রেফতার করা হলো না কেন? এখন গ্রেফতারের যৌক্তিকতা কোথায়? এই গ্রেফতারি বেআইনি। এক্ষেত্রে লুথরা দিল্লি হাইকোর্টের একটি মামলার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে বলা হয় তদন্ত শেষ হওয়ার পর হেফাজতের প্রয়োজন নেই। দিল্লি হাইকোর্ট ওই নির্দিষ্ট মামলাটি শতঃপ্রণোদিত ভাবে তখনই গ্রহণ করেছিল, যখন নিম্ন আদালত চার্জশিট খারিজ করে দিয়েছিল।
এসময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, মিস্টার লুথরা, আপনি কি বলতে চান যে সিবিআই এর কাছে বিকল্প পন্থা আছে? তাই স্বতপ্রণোদিত পদক্ষেপ করা যাবে না? এর উত্তরে মদন মিত্রর কৌঁসুলি বলেন, সিবিআই বারবার বলছে যেহেতু তারা অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করতে পারেনি তাই হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভার্চুয়াল শুনানি বাংলায় আইন অনুসারে হয়ে থাকে। কোভিড পরিস্থিতির বহু আগেই রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের বিচারকের সামনে ভার্চুয়ালি পেশ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করেছিল।
এরপর বিচারপতি সৌমেন সেন তাঁর কাছে জানতে চান যে, সিবিআই প্রয়োজনীয় অনুমতি নেয়নি অথবা ৪১এ ধারায় নোটিশ পাঠানো হয় নি তাই লুথরার কাছে এই গ্রেফতারি বেআইনি কি না? লুথরা জবাব দেন, সিবিআই তাদের ম্যানুয়াল দ্বারা তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। বিভিন্ন নির্দেশনামায় উল্লেখ আছে সিবিআইয়েরএই ম্যানুয়াল মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই ম্যানুয়ালকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। সিবিআই আধিকারিকদের নিজেদের পরিচয় পত্র দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ভার্চুয়াল শুনানি এখানকার নিয়ম। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তদন্তে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। সওয়ালে বারবার সিঙ্গল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চ, ও পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের প্রসঙ্গ আসে। মূল মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে সওয়ালের আবেদন বিচারপতিদের। এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে মামলার সওয়াল পর্ব বৃহত্তর বেঞ্চ আর দীর্ঘায়িত করতে চাইছে না।