বুধবারের চিঠির উত্তর না পেয়ে সেইল ইস্যুতে শুক্রবার আবারও কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীকে দ্বিতীয়বার কড়া ভাষায় চিঠি দিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। চিঠিতে তিনি প্রতিবাদের পাশাপাশি ‘সেইল’র কাঁচামালের সদর দফতর কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। কোভিড পরিস্থিতি হলে প্রত্যক্ষভাবে বহু কর্মী কাজ হারাবেন। দফতর বন্ধ হলে বিপর্যস্ত হবেন কর্মীরা। শুধু তাই নয়, এরআগেও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থার কেন্দ্রীয় অফিস কলকাতা থেকে মুম্বই কিংবা দিল্লিতে সরানো হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। এরফলে বহু মানুষ কাজ হারানোর পাশাপাশি রাজ্যের আর্থিকভাবেও ক্ষতি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি। এদিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র রাজ্যকে বারবার সাহায্যের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার উল্টোটা হচ্ছে। সেইলের কাঁচামাল দফতর সরানোর প্রক্রিয়াই অন্যতম উদাহরণ।
আরও পড়ুন:‘সেইল’ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথ
কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেইল) কাঁচামাল বিভাগের দফতর কলকাতা থেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার ফলে এখানকার বহু কর্মচারী কাজ হারাবার আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তারপরেই পদক্ষেপ করা হল না। সূত্রের খবর, সেইল–এর কাঁচামাল বিভাগ বা আরএমডি-তে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫০। অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যাও অনেক। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সেই কর্মীদের পরিবারকে মারাত্মক চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এমনকী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে চরম সঙ্কট দেখা দেবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন অমিত মিত্র। চরম সমস্যার মধ্যে পড়বে পশ্চিমবঙ্গের দুই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থা দুর্গাপুর ষ্টিল প্লান্ট এবং ইসকো। তাই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, হিন্দুস্তান স্টিল ওয়ার্কস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের অফিস ২০১৭ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়। এসবিআই-র সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টস হাব ২০১৮ সালে কলকাতা থেকে মুম্বই থেকে স্থানান্তর হয়। গতবছর ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হেডকোয়ার্টার কলকাতা থেকে দিল্লিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবছর একাধিক রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থার কেন্দ্রীয় অফিস কলকাতা থেকে অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করার ফলে কর্মসংস্থানের সংকোচন হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে রাজ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজনৈতিকভাবে রাজ্য তৃণমূল সরকারের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে পেরে উঠছে না। তাই একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসকে ভিন রাজ্যের স্থানান্তর করে রাজ্যকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও অমিত মিত্র চিঠিতে সে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করেননি। শুধুমাত্র উদাহরণ টেনে কবে কোন সংস্থা কলকাতা থেকে ভিন রাজ্যে চলে গেছে তা উল্লেখ করেছেন। এর ফলে রাজ্যে কর্মসংস্থান সংকোচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। যাইহোক, অর্থমন্ত্রীর আগের চিঠির সদুত্তর না মিললেও দ্বিতীয় চিঠির প্রতিক্রিয়া আসে কিনা সেটাই এখন দেখার।