শুরুতেই লিখে দেওয়া ভালো, এরিকসন ভালো আছেন। সেদিন তাহলে মাঠে কী হয়েছিল তাঁর? চিকিৎসায় যা যা তথ্য মিলছে, তাতে শতকরা ৯০% সম্ভাবনা হল, হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ফুটবলারটি।
কলকাতায় একাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনলাম, এমন সব বিশ্বমানের ফুটবলারদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা হয় । তাহলে এরিকসনের শরীরে কোনও সমস্যা আগে ধরা পড়েনি?
জাতীয় দলের হয়ে ইউরো কাপে খেলতে আসার আগে কিন্তু তিনি খেলছিলেন ইন্টার মিলানে। গুজব রটতে শুরু করে, এরিকসনের কোভিড হয়েছিল, এরিকসন ম্যাচের আগে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। ইত্যাদি। ইত্যাদি। সোশ্যাল মিডিয়াতে এসব গুজব রটতে শুরু করার পর, ক্লাবের ডিরেক্টর গিউসপে মারত্তা তা সঠিক নয় বলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন : রাখে হরি তো মারে কে …
২৯ বছরের এই ফুটবলার ম্যাচের ৪৩ মিনিটে থ্রো রিসিভ করতে গিয়ে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাঠেই মুখ থুবড়ে পড়েন। সেই ভিডিও গোটা বিশ্বে মুহুর্তে সুপার ভাইরাল হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাঠে জীবন বাঁচানোর হৃদরোগের চিকিসার শুরু হয়ে যায়। মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা পর এরিকসনের জ্ঞান ফিরে আসে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা আর সব ধরনের টেস্ট শুরু হয়।এরিকসন নিজে সেরি এ তে খেলা ইন্টার মিলানের সতীর্থদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেদিনই রাত ১১টায় লেখেন, ‘আমি ভালো আছি’।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে কী আর গুজব আটকানো যায়! সুস্থ এমন এক প্রথম সারির ফুটবলার হঠাৎ এতোটাই বিপদের মুখে পড়েন কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েই , কখনও রটেছে – ফুটবলার কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন। আবার কখনো রটেছে, তাঁকে হালেই কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। ক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এরিকসন এই ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেনই না। এমনকি ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়নি। তাহলে কেন অমন বিপদ! আচমকা হৃদরোগের আক্রমণ? এখন এরিকসনের যাবতীয় চিকিৎসা চলছে ডেনমার্কের মেডিক্যাল স্টাফদের তত্ত্বাবধানে।
ইন্টার মিলানের বড় কর্তার বক্তব্য, কোপেনহেগেনে চিকিৎসা চলছে। ডেনমার্ক ফুটবল সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এরিকসনের হেল্থ বুলেটিন প্রকাশ করা হচ্ছে। তাতে এই ফুটবলার ৪৮ ঘণ্টা কাটার পর স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।
এমন ঘটনার দৃশ্য টিভিতে দেখার পর, প্রাক্তন বোলটন ওয়ান্ডেরেরসের মিডফিল্ডার ফেব্রিকা মুয়াম্বা শুনিয়েছেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা। ২০১২ সালে এফে কাপের একটি ম্যাচ খেলার মধ্যেই মাঠে তাঁর হার্ট অ্যাটাকে হয়। সেই যাত্রায় তিনি প্রাণে বাঁচেন। কিন্তু সেদিনের অনূর্ধ্ব ২১ এর মিডফিল্ডার এরপর মাত্র ২৪ বছর বয়সে ফুটবল থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।
টিভিতে সেই দৃশ্য দেখার সময়টাকে মনে করতেই মুয়াম্বা বিবিসিকে বলেছেন, ‘সেদিনের মাঠের ছবিটা দেখে বুঝেছিলাম আমার সঙ্গে কী ঘটেছিল। দূর থেকে বুঝতেই পারছিলাম না কী ঘটতে চলেছে। ভয় লাগছিল। কিন্তু পুরো কৃতিত্ব মাঠের মেডিক্যাল স্টাফদের। অবিশ্বাস্য কাজ করে দেখিয়েছেন ওরা ক্রিস্টিয়ানের জন্য। খুব ভালো লেগেছে সতীর্থদের একসঙ্গে থেকে ওকে আগলে রাখা। আমার আশা, ক্রিস্টিয়ান দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে।’
সকলের প্রশ্ন এখন একটাই, ক্রিস্টিয়ান মাঠের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও মৃত্যু মুখ থেকে ফিরছেন। শারীরিক আর মানসিকভাবে তিনি আর কী মাঠে ফিরতে পারবেন? সময় এর উত্তর দেবে।
ছবি: সৌ – ট্যুইটার।