বাজপেয়ী বলতেন, পার্টি উইথ ডিফেরেন্স। দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা,তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এভাবেই বিজেপিকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন । তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে বর্তমান নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের মৌলিক পার্থক্য নেই। থাকার কথাও নয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ প্রদর্শিত পথ তাঁদের চালিকা শক্তি। কিন্তু পরিষদীয় রাজনীতির বিচারধারায় বাজপেয়ীর সঙ্গে তাঁর উত্তরসূরিদের গুণগত পার্থক্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। করোনা আবহে সংসদে বিতর্কিত তিনটি কৃষি বিল বিরোধীদের ভোটাভুটির দাবি দুরমুশ করে পাশ করিয়ে পক্ষান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ‘পার্টি উইথ ডিফেরেন্স’।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও ১৯৯৬ সালে বাজপেয়ী তাঁর ১৩ দিনের সরকারের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ফের জনতার রায়ের অপেক্ষা করেছিলেন। আজ বিজেপির আগ্রাসী মনোভাব দেখে মনে হয়, মোদী -শাহ রা দলের সেই ইতিহাস নিয়ে আড়ালে ব্যঙ্গ করেন। তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচারে মোদী-শাহের সঙ্গে বাজপেয়ী জমানার তুলনা চলে না। এই মূল্যবোধের সংকট আরও প্রকট হল একটি আপাত তুচ্ছ ঘটনায়। বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়ে রাজ্যসভায় ফের মনোনীত হলেন স্বপন দাশগুপ্ত। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি বিজেপি নেতৃত্বের ধ্যান ধারণা কী ,তা বুঝতে এই আপাত তুচ্ছ ঘটনাটা অনুঘটকের কাজ করবে। সংসদে প্রথম প্রবেশের দিন অধিবেশন কক্ষে ঢুকেই মাটিতে মাথা ঠোকার দৃশ্যে ‘অভিনয়’ এর স্মৃতি দিয়ে নিজেদের এহেন নৈতিক দেউলিয়াপনা আর ঢাকা যাবে না।স
সদ্যহওয়া বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পর্যুদস্ত বিজেপি। জনতা সুষ্পষ্ট রায় দিয়েছে তৃণমূলের পক্ষে। সেই নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে স্বপন দাশগুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তারকেশ্বর কেন্দ্র থেকে। গো-হারা হেরেছেন। নির্বাচনী বিধি অনুসারে বিধানসভায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। উল্লেখ্য, তিনি সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য হয়েছেন বিজেপির দক্ষিণ্যে। তিনি রাষ্ট্রপতির মনোনীত। নির্বাচিত নন। প্রথিতযশা সাংবাদিক তিনি। রাষ্ট্রপতি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্টদের মর্যাদা দিতে সংসদের উচ্চকক্ষে মনোনয়ন দেন। গায়ক,গায়িকা থেকে ক্রীড়াবিদ অনেকেই রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের সুবাদে সংসদের সদস্য হয়েছেন। স্বপন বাবু ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক, কলম লেখক হিসেবে বিশেষ পরিচিত। যদিও সেই পরিচিতি নয় বিজেপির সদস্য হিসেবেই তিনি ওই পদ পেয়েছিলেন। অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য। সেখানেও রূপার বিজেপি অনুগত্যই অগ্রাধিকার পেয়েছিল। কেননা, বাংলা বিজেপির সাংগঠনিক বিন্যাসে রূপা কলকে পাচ্ছিলেন না। যাক সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু রাষ্ট্রপতি মনোনীত পদটিকেও নিষ্কলুষ রাখতে ব্যর্থ হলেন মোদী-শাহর যুগলবন্দি। সব লজ্জার মাথা খেয়ে জনতার দরবারে প্রত্যাখ্যাত স্বপন দাশগুপ্তকে ফের রাজ্যসভায় পাঠানো হল। রাষ্ট্রপতি তাঁকে ফের মনোনীত করলেন। ১৯৫২ সাল থেকে ভারতীয় সংসদের ইতিহাসে এই প্রথম। নজির গড়লেন নরেন্দ্র মোদী। অটল বিহারী বাজপেয়ীর বয়ান ধার করে তাঁর উত্তরসূরিরা বলতেই পারেন উই আর দা পার্টি উইথ ডিফারেন্স।