ভিডিও সেক্স চ্যাটের আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ, নজরে ভরতপুর গ্যাং। গত মাসের মাঝামাঝি পাটুলির বছর তিরিশের এক যুবক ফেসবুকের ডেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন দেখে ডাউনলোড করেন সেই অ্যাপ। সেই অ্যাপের মাধ্যমে একাধিক মহিলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি, তারপরে এক মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং সেই মহিলা নিজের হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দিয়ে ওই যুবককে হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করার প্রস্তাব দেয়। শুরু হয় হোয়াটস অ্যাপে কথোপকথন, সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সদ্য বন্ধুত্ব হওয়া দুই বন্ধুর। ওই রাতেই ভিডিও সেক্স চ্যাট করে দু’জনে। সেই সময় ভিডিও অপর প্রান্তে থাকা মহিলা পুরো ভিডিওটা স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখেন। সেক্স চ্যাট শেষ করার ঠিক পনেরো মিনিটের মধ্যে আবারো যুবককে হোয়াটস অ্যাপ করেন ওই মহিলা। মেসেজ দেখে হতবাক যুবক। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের স্ক্রিন রেকর্ডারে রেকর্ড করা ওই ভিডিও। তারপরই শুরু হয়ে যায় লাগাতার ব্ল্যাক মেইলিং। ওই মহিলা বলে টাকা না দিলে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করে দেওয়া হবে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ওই ভিডিও। পাটুলির বাসিন্দা ওই যুবক ভয় পেয়ে যান। ওই রাতেই অনলাইনের মাধ্যমে কুড়ি হাজার টাকা পাঠান ওই মহিলাকে। গত মাসের ১৮ তারিখ রাতের ঘটনা কিন্তু থেমে থাকেনি এখানেই। ১৯ তারিখ সকালে ওই যুবকের ফোনে ভেসে ওঠে একটি অচেনা নম্বর, ফোন তুলতে আবারও হুমকি। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে ইউটিউবারের পরিচয় দিয়ে বলে ১৮ তারিখ রাতের ভিডিও সেক্স চ্যাট ইউটিউবে আপলোড হবে। যদি তা থামাতে চান তাহলে ৫০ হাজার টাকা এক্ষুনি পাঠান তারপর থেকেই শুরু লাগাতার ব্ল্যাকমেলিং। আজ ৩০,০০০ তো কাল ২০,০০০ টাকা। আর না পাঠালে ওই সেক্স চ্যাটের ভিডিও আপলোড করে দেওয়া হবে ইউটিউবে বলে হুমকি দেয়। সামাজিক সম্মান বাঁচাতে পাটুলির ওই যুবক দফায় দফায় টাকা দিয়ে যান সাইবার অপরাধীদের। বন্ধুদের থেকে টাকা ধার করেও তিনি টাকা পাঠিয়ে ছিলেন ওই অপরাধীদের। শেষমেষ ৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা খুইয়ে, যুবক ফোন করেন তাঁর এক আইনজীবী বন্ধুকে। সেই আইনজীবী বন্ধুর পরামর্শ অনুসারে লিখিত অভিযোগ জানান লালবাজার সাইবার ক্রাইম সেকশনে। অভিযোগ হাতে পেতেই তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
লালবাজার সূত্রের খবর, এই ঘটনা নতুন নয়, এর পেছনে কাজ করছে রাজস্থান, ভরতপুরের বেশ কয়েকটি গ্যাং, যেখানে যুক্ত আছে প্রচুর যুবক-যুবতী। যারা টার্গেট করছে সমাজের হাইপ্রোফাইল লোকজনকে। সোশ্যাল সাইট থেকে বন্ধুত্বের আবেদন করছে, আর সেই ফাঁদে পা দিলেই, নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে সেখানে চ্যাট করতে বলছে। সেখান থেকে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে করা হচ্ছে অন লাইন ভিডিও সেক্স চ্যাট। সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ডারে রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দফায় দফায় হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। লালবাজারের এক গোয়েন্দা বলেন, এক্ষেত্রে খুব কম অভিযোগ আসছে তাঁদের কাছে। কারণ মানুষ তাঁদের সামাজিক সম্মানের কথা মাথায় রেখে অভিযোগ জানাতে চাইছেন না। তবে হোয়াটস অ্যাপে অচেনা মেসেজ ভিডিও কল ভুলেও ধরবেন না। কারণ সেই অচেনা নম্বরে ভিডিও কল রিসিভ করলেই দেখা যাচ্ছে ওপাশে এক নগ্ন মহিলার ছবি। যা ফাঁদ পেতে আছে আপনার জন্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্ক্রিনশট নিয়ে শুরু করা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইলিং। কয়েক মাস আগেই টলিউড অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরার সহকারীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। ওই যুবক লক্ষাধিক টাকা দেওয়ার পর অপরাধীদের দাবি মতো টাকা মেটাতে না পারায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে ভরতপুরের এক অপরাধীকে। তবে নতুন করে আবারও এরকম অভিযোগ আশায় গোয়েন্দারা মনে করছেন এখনও যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে এই গ্যাং।
প্রতীকী ছবি