সুশীল কুমার দুবারের অলিম্পিক পদক জয়ী তো কী– আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাই আরও চারদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। ২৩ বছরের এক কুস্তিগীরের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এই কুস্তিগীর এখন গ্রেফতার হয়েছেন , প্রায় দু ‘ সপ্তাহ পালিয়ে বেড়িয়ে।
শনিবার দিল্লি আদালতে পেশ করা হয় । দিল্লি পুলিশ আরও সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করেছিল। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ময়াঙ্ক গোয়েল তাঁর রায়ে লেখেন, ” আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আর আইন সকলের জন্য সমান। সংবিধান প্রতিটি মানুষের জীবনকে সমান অধিকার দিয়েছে। সেই মানুষ অভিযুক্ত হোক আর না হোক। সেই অধিকারও সময় আর পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসইভাবে ব্যাতিক্রমীও হয়।
আদালত যেমন খেয়াল রাখে, তদন্তের জন্য সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি – তেমনি সামঞ্জস্য রেখে অভিযুক্তের অধিকার যাতে ঠিক থাকে , সেটাও দেখে। ”
আদালত বলেন, দিল্লি পুলিসের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ মারাত্মক। ভয়ানক গ্যাং এর সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও অভিযুক্তদের কিছু পোশাক আর মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়নি।
মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ৪ মে। দুটি দলের মধ্যে বাঁধনছারা মারামারি হয়। তাতে ৯৭ কেজি গ্রেকো রোমান কুস্তির ২৩ বছরের খেলোয়াড় সাগর ধনকার গুরুতর জখম হয়। এবং পরে হাসপাতালে মারা যায়। এই হত্যা কাণ্ডের পর সুনীল কুমার গা ঢাকা দেন। শেষমেশ তাঁকে দিল্লি পুলিশের টিম গ্রেফতার করে দিল্লি – হরিয়ানা বর্ডারে।
আইনজীবী আশীষ কাজল মহামান্য আদালতের কাছে অর্জি জানান তদন্তের স্বার্থে আরও ৭ দিন অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে রাখার। কাজল জানান এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। তিনি আরও জানান, সুশীল কুমারের থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এই আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘ মারাত্মক এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আসল মস্তিষ্ক হয়ে কাজ করেছে সুশীল। প্রত্যক্ষদর্শী এবং অভিযুক্তদের একজনের ভিডিও ক্লিপ দেখে এই তথ্য মিলেছে।’ বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া সুশীল কুমার তদন্তে সাহায্য করছেন না। ফলে এই ঘটনার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসছে না। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পিছনে চারজনের হাত আছে। পালিয়ে বেড়ানো সুশীল তাদের অন্যতম। পুরো ঘটনার সঙ্গে ১৮-২০ জন যুক্ত ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। সকলকে এখনও গ্রেফতার করা যায় নি। অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়া সকলকে কারা পালিয়ে বেড়াতে সাহায্য করেছিল। সুশীল আর অন্যজনের সেদিনের পোশাক আর তাদের মোবাইলের হদিশ মেলেনি। তদন্তকারী দলকে দোষীদের ধরার জন্য মহামান্য আদালতের সাহায্য একান্ত কাম্য বলে আবেদন করা হয়।
অভিযুক্ত সুশীল কুমারের হয়ে লড়তে নামা আইনজীবী প্রদীপ রানা অভিযুক্তের পলিশ হেফাজত বাড়ানোর বিরোধীতা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার ইস্যু নিয়ে বলেন, ‘ পুলিশ হেফাজতে ৬ দিন ছিল মক্কেল। কি করলো পলিশ এই ছয়দিন? মহামান্য আদালতের উচিৎ প্রতিদিনের কেসে ডাইরি দেখা। প্রশ্ন হলো, অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে। মোবাইল পুলিশের কাছে। মোবাইলের সব কিছু পুলিসের কাছে। তা কি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লো? কি করে তা মিডিয়ার কাছে গেলো? ‘
সুশীলের আইনজীবী আদালতে প্রশ্ন তোলেন, ‘যে পিস্তলের কথা বলা হচ্ছে তা কি এই ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছিল? মোটেই তা হয়নি। কিছু তো প্রমাণ চাই, যা এই কেসের সঙ্গে যুক্ত! তদন্তকারী দল মূল্যবান সময় নিচ্ছে এই কেসটির প্রচার চড়াতে।’ রানা জানান, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক তাঁরাও চান। কিন্তু তারজন্য পুলিশ হেফাজতে মক্কেলকে রাখার কোনও কারণ নেই। দিল্লি হাইকোর্টের একটি মামলার রায়ের কথা টেনে বলেন, তদন্তের জন্য সাহায্য করা মানে এটা নয় যে পুলিশের কোথায় নাচতে হবে।
সরকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘ পিস্তল ব্যবহার হয়েছিল কিনা, তা তদন্ত রিপোর্ট বলবে। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। চার্জশিট জমা পড়লে তখন অভিযুক্তের আইনজীবী যা বলার বলবেন। আর ভিডিও এই হত্যাকাণ্ডের বড় প্রমাণ। তা অন্য কেউ ছড়িয়ে দিতে পারে। যে কোনও অপরাধের তদন্ত করে তার সঠিক তথ্য বের করাই কাজ তদন্তকারী দলের। কিন্তু অভিযুক্ত ঠিক করে দিতে পারেনা – তদন্ত কিভাবে হবে।”