ভারত– ২ বাংলাদেশ–০
(সুনীল ছেত্রী-২)
যে ম্যাচে না জিতলে এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগটাও নষ্ট হত, শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচটা ভারত জিতল অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলে। একচেটিয়া প্রাধান্য নিয়ে খেলে এবং প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেও ভারতকে গোল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হল ৭৯ মিনিট। কিন্তু যেটা প্রশংসা করতে হবে, তা হল একটি গোল হওয়ার পরেও আত্নতুষ্ট না হয়ে ভারত আরও গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হল। এবং শেষ পর্যন্ত ৯২ মিনিটে তারা সফলও হল। দুটি গোলই ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর। আগের দিন কাতার ম্যাচে বিরতিতে ছেত্রীকে তুলে নিয়েছিলেন কোচ ইগর স্টিমাক। সোমবার দোহাতে জোড়া গোল করে স্টিমাকের মুখের উপর জবাব দিলেন ছেত্রী। বয়স তাঁর খেলায় নিশ্চিতভাবে কিছুটা হলেও থাবা বসিয়েছে। সেই ২০০৭ সাল থেকে দেশের হয়ে খেলে যাচ্ছেন। সময়টা কম নয়। চোদ্দ বছর খেলার পরেও ৩৭ ছুঁই ছুঁই এই স্ট্রাইকার এখনও গোল করছেন, জেতাচ্ছেন টিমকে। এই নিয়ে ১১৮ ম্যাচে ৭৪টি গোল করা হয়ে গেল তাঁর। আর এই সব মিলিয়ে কাতার বিশ্ব কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে সপ্তম ম্যাচে প্রথম জয়ের মুখ দেখল ভারত। সাত ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ছয়। বিশ্ব কাপে কোয়ালিফাই করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু ১৫ জুন আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র করলেই ভারত এশিয়া কাপে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে যাওয়ার রসদ জোগার করে ফেলবে।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ শুরুর আগে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। তার সুরে গলা মেলান দুই দেশের ফুটবলাররা। সোমবার ছিল সেই বিরল দিন, যেদিন দুই দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা ছিলেন একজনই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২০১৯-এর অক্টোবরে কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এই দুই দেশের প্রথম সাক্ষাৎকারে ফল ছিল ১-১। তার পর থেকে কোভিডের জন্য দুই দলই খুব বেশি খেলার সুযোগ পায়নি। কাতারের কাছে ভারতের যে দলটি ০-১ গোলে হেরেছিল, তার থেকে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করেন ইগর স্টিমাক। লাল কার্ড দেখা রাহুল বেকের জায়গায় রাইট ব্যাকে নামেন ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে প্রীতম কোটালের জায়গায় চিলমনসানা সিং। মাঝ মাঠে প্রথম থেকেই উদান্ত সিং। তার সঙ্গে সুরেশ সিং, গ্লেন মার্টিন্স এবং বিপিন সিং। সামনে সুনীল ছেত্রীর পাশে মনবীর সিং। প্রাথমিক পর্বে একটু থিতু হওয়ার পর ভারতের মাঝ মাঠ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। শুরুতেই সুরেশ সিংয়ের থ্রূ পাস ধরে গোল করার মতো জায়গায় চলে গিয়েছিলেন মনবীর সিং। কিন্তু সুবিধেজনক অবস্থা থেকে শট না নিয়ে সেন্টার করতে গিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভুঁইঞা দীর্ঘ দিন বিদেশে খেলেছেন। তাই ভারতের ফুটবলারদের অতিরিক্ত সমীহ না করে নিজেদের খেলার উপরেই গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। তাঁর কৃতিত্ব তিনি নিজের মনোভাবটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন সতীর্থদের মধ্যে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জামাল গত বছর মহমেডানের হয়ে আই লিগও খেলে গেছেন। ভারতের আক্রমণগুলো সামাল দিতে দিতেই বাংলাদেশ পাল্টা আক্রমণে আসে। কিন্তু তাদের সেই আক্রমণে তেমন ঝাঁঝ ছিল না। সহজেই সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু কিংবা সানা সিংরা সেগুলে রুখে দেন। গুরপ্রীতকে তেমন শক্ত বল ধরতে হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারত প্রায় গোল করে ফেলেছিল। ব্রেন্ডনের কর্নার থেকে সানা সিংয়ের হেড গোল লাইন থেকে সেভ কেন রিয়াজুল।
বিরতির পর বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করেন স্টিমাক। বিপিন সিং, মনবীর সিংদের বদলে মাঠে নামানো হয় আশিক কুরিয়ান, আব্দুল সামাদদের। বিশেষ করে বাঁ দিক দিয়ে আশিক কুরিয়ানের দৌড়গুলো বাংলাদেশ ডিফেন্সে ভীতির সঞ্চার করে। ডান দিকে শুরু থেকেই বেশ ভাল খেলছিলেন ব্রেন্ডন। ওভারল্যাপে উঠে তাঁর সেন্টারগুলোতে গোলের গন্ধ ছিল। ছেত্রীরা যদি হেডগুলো একটু তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারতেন তবে অনেক আগেই গোল পেয়ে যায় ভারত। দেওয়ালে পিঠ দিয়ে লড়াই করতে করতে অবশেষে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ ডিফেন্স। ৭৯ মিনিটে বাঁ দিক থেকে আশিক কুরিয়ানের লম্বা সেন্টার ঠিক খুঁজে নেয় ছেত্রীর মাথা। এই সব জায়গা থেকে গোল করতে ভুল করেন না ভারত অধিনায়ক। এ দিনও করলেন না।
এক গোলে এগিয়ে গিয়ে ভারতের আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ে। এবং ৯২ মিনিটে তারা কাঙ্খিত গোলটাও পেয়ে যায়। এবারের মুভমেন্ট ডান দিক থেকে। বক্সের মধ্যে যখন বল পান ছেত্রী তখন তাঁর সামনে একাধিক ডিফেন্ডার। হাফ টার্নে ঘুরে গিয়ে গোলটাকে একেবারে খোলা আকাশের মতো দেখতে পেয়ে যান ছেত্রী। এর পর ডান পায়ের উঁচু শটে গোল।
ইগর স্টিমাকের চুক্তি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রায় দু বছরের মতো ভারতের জাতীয় কোচ তিনি। যদিও করোনার জন্য এক বছর খেলাই হয়নি। তবু এই ম্যাচটা তাঁর কাছে স্মরণীয়। কারণ ক্রোয়েশিয়ার হয়ে বিশ্ব কাপ সেমিফাইনাল খেলা ডিফেন্ডার এই প্রথম ভারতের কোচ হয়ে জিতলেন।
ছবি: সৌ : টুইটার।