শিশুশ্রম আইনত অপরাধ। তা সমাজের উন্নতির পক্ষে ক্ষতিকারকও। গত দু’দশক ধরে এই নিয়ে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনও। এবার শিশুশ্রম বিরোধী দিবসে নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার শপথ নিতে দেখা গেল ইটভাটার শ্রমিকদেরকেই। বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েক হাজার ইটভাটা। মালঞ্চ, বরুণহাট, বদরতলা সহ হাসনাবাদ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ইছামতি, বিদ্যাধরী, ডাঁসা ও গৌড়েশ্বর সহ একাধিক নদীর তীরে গজিয়ে উঠেছে প্রচুর ইটভাটা। আর সেখানে কাজ করেন উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বহু পরিযায়ী শ্রমিক। এরা মূলতঃ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। পেটের দায়ে ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় এসে রুজি রোজগার করে। এরা ভাটার মধ্যেই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে সন্তানদের নিয়ে মাথা গুঁজে কোনরকমে বাস করেন। এই বাচ্চাদেরই ভবিষ্যত একপ্রকার বিপন্ন। কারণ অর্থাভাব ও সঙ্গে পর্যাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থার অভাব। এদিন তাঁরা জানালেন তাঁদের ইচ্ছের কথা। টাকা পয়সা জমিয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা করাতে চান। যাতে সমাজে সন্তানেরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তাঁদের ক্ষোভ, সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থাভাব। পাশাপাশি আছে পর্যাপ্ত স্কুলের অভাব। কারণ বেশিরভাগ ভাটার শ্রমিক বাংলা পড়তে জানেন না। তাঁরা হিন্দি, সাঁওতালি বা ভোজপুরীতে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই সরকারি বাংলা মাধ্যমে পড়ানো তাঁদের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন ভাটায় ঢুকলে দেখা যায় এরা স্কুলে না গিয়ে, পড়াশোনা না করে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনের তৎপরতায় এই বাচ্চারা হয়তো আর আগের মত শৈশবকালে ভাটার কাজে যুক্ত হয় না। কিন্তু ১৪ বছর বয়স পেরোলেই বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েরা ভাটার কাজে লিপ্ত হয়। যা তাদের আগামী ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে। তবে এতদিন দেখা যেত অভিভাবকরা চাইতেন বাচ্চারা তাঁদের সঙ্গে কাজে হাত লাগাক। বর্তমানে চিত্রটা পাল্টেছে। বাচ্চাদের অভিভাবকরা নিজেরাই এখন চাইছেন, যাতে আগামী দিনে তারা সঠিকভাবে পড়াশোনা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। শিশুশ্রম বিরোধী দিবসে যা যথেষ্ট আশার কথা।