কোভিড বা করোনা রোগ পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবন, বেঁচে থাকার অভ্যাস। মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভসের মতো বহু জিনিস বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে বোরোলিনের মতই। জামাকাপড় আর মেঝে জীবানুমুক্ত করতে স্প্রে-র ছড়াছড়ি। ইদানীং আরও একটি জিনিসের চল হয়েছে বাঙালির ঘরে ঘরে, যার নাম, পালস অক্সিমিটার।সব কিছুকেই খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নেওয়ার বাঙালি আদিখ্যেতায় উপচে পড়ছে অনলাইন পোর্টালের শপিং কার্ট। কেউ কেউ আবার পাড়ার ওষুধের দোকানদারকে বলে কয়ে যোগাড় করছেন এই পালস অক্সিমিটার।
ব্যাটারি চার্জ করে, জামাকাপড় শুকোতে দেওয়ার ক্লিপের মত দেখতে ছোট মেশিনটির ফাঁকে আঙুল গুঁজলেই হল। রঙচঙে ডিসপ্লে-তে ফুটে উঠছে পালস রেট আর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা। নব্বইয়ের নীচে গেলেই বুক দুরুদুরু, আর আটানব্বই, নিরানব্বইয়ের ঘরে রিডিং থাকলে স্বস্তির শ্বাস। পালস রেট নিয়ে অত ভাবার কিছু নেই। রক্তে অক্সিজেন দৌড়লেই হল। আমার ডাক্তার আমিই। আমার ভাল-মন্দ আমিই তো ভাল বুঝি। ওই তো পালস অক্সিমিটারের রিডিং ঠিক-ই বলছে।
এখানেই ঘনাচ্ছে বিপদ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, রক্তচাপ মাপার মত শরীরের অক্সিজেন বা পালস রেট মাপাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সূক্ষ্ম বিষয়। যার জন্যে প্রয়োজন কোনও চিকিত্সক, নিদেনপক্ষে প্যারা মেডিক বা চিকিত্সা সহায়কের। সবচাইতে বড় কথা বাজারে চলতি যে সমস্ত পালস অক্সিমিটার কিনে আনছেন মানুষ, তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গবেষণায় দেখা গেছে,যে মানুষের চামড়ার রং গাঢ় তাঁদের ক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটারের রিডিং নির্ভুল নয়। রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা থাকলে, আঙুলে নেল পলিশ থাকলে, ধূমপান করলে, চামড়া মোটা হলে,এমনকি চারপাশে চড়া আলো অক্সিমিটার সঠিক রিডিং নাও দিতে পারে।
শুধু কোভিড নয়, অ্যাজমা, সিওপিডি-র মতো রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে পুরোপুরি ব্যর্থ বাজার চলতি অক্সিমিটারগুলি। এগুলি বেশিরভাগই চিন থেকে আমদানি করা, অনামী, অজানা সংস্থার তৈরি। তাই এগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়।
তবে, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তা দেখিয়ে অনেকটা অ্যালার্মের মত কাজ করে অক্সিমিটার। কিন্তুFDA-এর মত কোনও সংস্থা এই বাজার চলতি অক্সিমিটারকে স্বীকৃতি দেয় নি।
তাই অক্সিমিটারের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করে নিজের বিপদ ডেকে না আনাই ভাল। শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা হলে, ফুসফুসে সংক্রমণ হলে, অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।