Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ |
K:T:V Clock
পশ্চিমবঙ্গে বাম শক্তির ‘রেজারেকশন’ কি সম্ভব?
জয়ন্ত ঘোষাল Published By: 
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩১ মে, ২০২১, ০১:৩২:৫৫ পিএম
  • / ৭৬৯ বার খবরটি পড়া হয়েছে

সিপিএম নেতা বিমান বসু’র বয়স এখন ৮০। ১৯৪০ সালের ১লা জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেদিন টিভিতে বিমান বসুর সাংবাদিক বৈঠক দেখছিলাম। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তিনি সকলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘সকলে রেডি? তাহলে শুরু করি?’ বিমান বাবুকে দেখে মনে হল এই রকম একটা বিপর্যয়ের পরেও মানসিক ভাবে তিনি যতই দুঃখিত হন না কেন এখনও তাঁর মনের জোর অপরিসীম।
সংযত জীবন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসের একটা ছোট্ট ঘরে থাকেন। ছাদে টবে নানা ধরনের শাক-সবজি ফলান এবং সেই সব ফসল অকাতরে বিলি করতেন এখনও করেন। বিমান বসুর মতো এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর কিন্তু আচমকা জন্ম হয় না। প্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর আত্মজৈবনিক রচনায় পড়েছি, মালদা কলেজে ১৯৬০ সালে একটি আন্তঃ কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিমান দা’র সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। বিমান দা গুরুদাস কলেজ থেকে আইএ পাস করে মৌলানা আজাদ কলেজে থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুভাষ চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামল চক্রবর্তী মতিঝিল কলেজের প্রতিনিধি হয়ে মালদা কলেজের আন্তঃ কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। শ্যামল দা লিখেছেন যে, ‘বিমান দা ছিলেন অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের সন্তান। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। বাড়ির ছোট্ট ছেলে, দাদা এবং মায়ের খুব আদরের ছিলেন। বিমান দা’র বড়দাদা ছিলেন বড় একজন ব্যবসায়ী, ময়রা স্ট্রিটে থাকতেন। পারিবারিক রাজনৈতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে এবং অভিভাবকদের বাধা সত্ত্বেও বিমান দা স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে যোগ দেন। তাঁর বাড়িতে শ্যামল দা’দের ছিল অবারিত যাওয়া আসা। বিমান দা’র মা ছিলেন খুবই স্নেহপ্রবণ। শ্যামল দা লিখেছেন যে, ‘বাড়ির অন্যান্য সন্তানদের তুলনায় বিমান দা’র প্রতি পক্ষপাতিত্ব তাঁর যেন একটু বেশিই ছিল। সেই সূত্রে আমরাও তাঁর ভালোবাসা স্নেহ পেয়েছি। শীতকাল হলেই বিমান দা’র বাড়িতে প্রায়ই আমাদের ডাক পড়ত পিঠে পায়েস খাওয়ার জন্য। পার্টির সবসময়ের কর্মী হওয়ার পর বিমান দা, এত আদরের হওয়া সত্ত্বেও সেই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে বেনেপুকুর রোডের কৃষক সভা সংলগ্ন একটি ছোট্ট ঘরে থাকতে শুরু করেন।’
এই ছোট্ট ঘটনাটি আজ এত বছর পর মনে করতে এবং অন্যদের মনে করাতে ইচ্ছে হল। সিপিএমের এই প্রবীণ প্রজন্ম নেতাদের মধ্যে আর ক’জন’ই বা কলকাতায় আছেন? নিরুপম সেন চলে গেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য’র শরীর ভালো নেই, জ্যোতিবাবু তো আগেই চলে গেছেন। অনিল বিশ্বাসেরও অকাল প্রয়াণ হয়েছে। সুভাষ চক্রবর্তীও নেই।
এহেন পরিস্থিতিতে এই বিধানসভার ফলাফল শুধু মর্মান্তিক নয়, সম্ভবত যারা মার্কসবাদের প্রতি এখনও আস্থা রাখেন তাঁরা হতাশ। গোটা পৃথিবী জুড়ে মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে। কার্লমার্কস নিয়ে যখন নানা রকম নতুন নতুন আলোচনা, গবেষণা হচ্ছে তখন পশ্চিমবঙ্গের এই হাল তাঁদের সকলকে বিষন্ন করছে।
৪৭ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কোনো বাম প্রতিনিধি থাকল না । শুধু সেখানেই শেষ নয়, এই প্রথম বিজেপির মতো একটি দক্ষিণপন্থী শক্তি (অবশ্য বিজেপিকে দক্ষিণ পন্থী বলা উচিত কি না সে নিয়েও বিতর্ক আছে )। কিন্তু একথা সত্য ৩ থেকে ৭৭ -এই বৃদ্ধিটা কিন্তু খুব সামান্য নয়।
এই অবস্থায় তাহলে সিপিএমের অবস্থানটা কী? সিপিএমের ভবিষ্যৎটা কী? ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বারবার বলছেন, ‘আমরা কি তাহলে ছাগলের তৃতীয় সন্তান? আমার কখনও বিজেপি, কখনও কংগ্রেসের বিরোধিতা করি। এই দোদুল্যমানতাই কি সিপিএমের জিনের মধ্যে ঢুকে গেছে?’
১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই অর্থাৎ অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি আসন পেয়েছিল ২৯টা। শতকরা ১০.৯৫ ভোট তারা পেয়েছিল। যেখানে কংগ্রেস ১৫০ টা আসন পেয়েছিল। এরপর ১৯৫৭ সালে দ্বিতীয় বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেখানে কংগ্রেস ২৫১টা আসনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ১৫২টা আসন পেয়ে যায়। আর শতকরা ৪৬ ভাগ ভোট পায়। সিপিআই ১০৩ টে আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪৬টা আসন লাভ করেছিল। ৫২ সালে যেটা শতকরা ১০ ভাগ ভোট ছিল, সেটাই এবারে হল শতকরা ১৭.৮০ ভাগ ভোট। ৬২ সালে সিপিআইয়ের ভোট শতকরা ২৪. ৯৬ হল। ১৪৫ টা আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫০ টা আসন তারা লাভ করলো। এইভাবে ৬৭ সাল থেকে শুরু করে ৬৯ সালে সিপিএমের আসন সংখ্যা হল ৮o টা এবং সিপিআইয়ের ৩০টা, দুটো মিলিয়ে একশোর ওপরে আসন হল।
সবচেয়ে মজার ব্যপার হল, প্রথম থেকেই অর্থাৎ ৫২ সালের নির্বাচনের সময় থেকেই কিন্ত আরএসপি এবং আরও কিছু বামপন্থী দল ছিল। ৭১ সালে ষষ্ঠ বিধানসভা নির্বাচনে ১১৩ টা আসনে সিপিএম জয় লাভ করলো। আর সিপিআই পেল ১৩টা আসন। অর্থাৎ ততদিনে সিপিএম প্রধান বামশক্তি হয়ে গেছে। সপ্তম বিধানসভা নির্বাচন অর্থাৎ ৭২ সালে কংগ্রেস ২১৬ টা আসন পায় , সিপিআই ৩৫ টা এবং সিপিএম ১৪ টা আসন পায়। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পরবর্তী কালে ৭৭ সালে দেখা গেল সিপিএম ১৭৭ টা আসন নিয়ে সাংঘাতিক ভাবে ক্ষমতায় এলো। আর ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এইসব দলগুলো কিন্তু বেশকিছু আসন পেয়েছিল। সিপিআই সেই সময় ২টি আসন পেয়েছিল। অর্থাৎ সিপিআই ক্রমশ প্রান্তিক দল হয়ে গেল এবং সিপিএম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হল। তারপরে ৮২ সাল থেকে শুরু করে একটা দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ৩৪ বছর সিপিএম ক্ষমতায় ছিল।
প্রায় ৭৫ বছর আগে, হয়তো তারও আগে বাংলা ভাষায় সাম্যবাদের চর্চা যেভাবে শুরু হয়েছিল আজকের প্রজন্মের মানুষের তার সঙ্গে পরিচয় খুবই কম। অথচ নানান রকমের বই পত্রিকায় সেদিনের ভাবনা আজও ছড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। ১৯১৭-১৯৪৭সাল, এই সময়টাতে মার্ক্সীয় চিন্তাধারা গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক থেকে ইউরোপীয় ভাব জগতে স্থান করে নিল। ১৯১৭ সালের সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য ঘোষণা করে লেনিনের বলশেভিক বিপ্লব হওয়ায় শুধু ইউরোপে নয় ভারতেও তার উদ্যম এসে আছড়ে পড়েছিল। রুশদেশ এমন একটা দেশ ছিল যার একটি ভূখণ্ডের দুই প্রান্ত থেকে একদিনে একসময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা সম্ভব। সোভিয়েত সমাজের প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক চাঞ্চল্য কীভাবে বাংলায় এসে পড়েছিল তা জানার জন্য শিপ্রা সরকার এবং অনমিত্র দাসের সংকলিত ‘বাঙ্গালীর সাম্যবাদ চর্চার’ বইটি এখনও প্রাসঙ্গিক। জানা যায় এবং বোঝা যায় শিবরাম চক্রবর্তীর ‘মস্কো বনাম পন্ডিচেরি’ থেকে আবু সাইদ আইয়ুব-এর মতো দার্শনিক লেখকের ‘কাব্যের বিপ্লব এবং বিপ্লবের কাব্য’র মতো প্রবন্ধ রচনা চর্চার ট্রাডিশন কিন্তু আজও অবলুপ্ত হয়ে যায়নি।
পশ্চিম বাংলার যে নাগরিক সমাজ তাঁর সামাজিক মনস্তত্ত্বে আজও বিনয় ঘোষ থেকে সৌমিত্র চট্টাপাধ্যায় কোথাও একটা মার্ক্সবাদী ভাবাবেগ জীবিত আছে। সমস্যা হচ্ছে এই বামপন্থার প্রধান পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে উঠেছিল সিপিএম। আর অন্য বাম দলগুলির প্রতি তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে কার্যত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ঘোষণা করেছিল একদা যে আমাদের কোন শাখা নেই। কিন্তু এমন কি কান্ড ঘটল যে সিপিএমের এই রাজনৈতিক পরিসরটি অবলুপ্ত হয়ে গেল! তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান হল এবং বিজেপি নামক একটি দল সেই পরিসরটি পেল। যার বলেন যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়নের ঝড় চালানোর চেষ্টা নিরুপম সেনের বিকল্পের সন্ধানে হাঁটতে গিয়ে পথভ্রষ্ট হওয়া হল এই পতনের কারণ। সিঙ্গুরের আন্দোলন থেকে নন্দীগ্রামের গুলি চালনা -সেদিনই শুরু হয়েছে সিপিএমের কফিনের পেরেক পোঁতার কাহিনী। আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই।
মনে হয় আসলে সিপিএমের পতন শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে হয়েছে আচমকা হয়েছে তা নয়। আরম্ভের আগে আরম্ভ থাকে। আসলে সিপিএম যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন এই সমাজ ব্যবস্থাকে বদলানোর দাবিতে এই তথা কথিত বুর্জোয়া শাসনের অঙ্গ হয়েছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থার অঙ্গ হতে গিয়ে এই ব্যবস্থার বদলের চেষ্টা করতে গিয়ে সিপিএম নেতৃত্বরই শ্রেণি চরিত্র বদলে গেল। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন। সে আপ্তবাক্য কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রেও খাটে। প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র স্থাপনা করতে গিয়ে একনায়কতন্ত্র থেকে যায় প্রলেতারিয়েন স্বার্থ কর্পূরের মতো উবে যায়।
কিন্তু কেন? মূল সমস্যা হল গণতন্ত্রের। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জীবনে পার্টি রাজনীতির আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গে সর্বত্রই পার্টি বা দল দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে তৈরি করল এক পার্টিতন্ত্র। পার্টি বা দলের এই পরিব্যাপ্তি সমাজের পক্ষে ভালো না মন্দ তা নিয়ে আজ প্রশ্ন ওঠে।
সবার আগে যে প্রশ্নটা আমাদের মাথায় আসে সেটা হল এই পার্টিতন্ত্র কীভাবে গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে পড়লো এবং গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন শ্রেণি পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে উপকারের থেকে অপকার বেশি করতে শুরু করলো। পার্টি বা দল গ্রামীণ সমাজের কোন অংশের কাছে কতটা অপরিহার্য হল? ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখন গ্রাম প্রশাসনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেল। সারা বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ তাতে স্থানীয় স্তরের প্রশাসনিক কাঠামোর এই উপকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তৈরি করল এক বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠী বা সুবিধাভোগী শ্রেণি। আর দেখা গেল শিল্পায়ন করতে গিয়ে পার্টির যে কৃষিভিত্তি তাতে অবক্ষয় হল। প্রয়াত কমিনিউষ্ট নেতা আবদুল্লা রসুল একদা আমাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘আমাদের পার্টির বেসটা হচ্ছে নিম্নবর্গ ,কৃষক এবং শ্রমিক কিন্তু নেতৃত্বটা চলে গেছে শহুরে উচ্চবর্ণ, উচ্চ শ্রেণির হাতে। তার ফলে একটা বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে এই মার্কস বেসের সঙ্গে নেতৃত্বর।’ আবদুল্লা রসুল যেটা বলেছিলেন তাতে পার্টিতে তখন ঝড় উঠেছিল সেই সাক্ষাৎকারে। কিন্তু অনেক বছর পর সরোজ মুখোপাধ্যায় পার্টির দলিলেই সেকথা কার্যত প্রকাশ্যেই জানালেন। নিরুপম সেন বারবার বলতেন,পরবর্তী কালে ‘বিকল্পের সন্ধানে’ নামক গ্রন্থে তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছেন যে বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নত বামফ্রন্ট আর সেই উন্নত বামফ্রন্ট তৈরি করার জন্য শিল্পায়নের অভিমুখে যাওয়াটাই বাস্তবতা। বন্ধ কারখানার জমিতে শিল্প করতে হবে। শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক কর্তব্য শিল্পায়নের সমর্থন করা। তাতে কর্ম সংস্থান হবে, অর্থনীতির উন্নয়ন হবে, কেন্দ্রের ওপর সারাক্ষণের নির্ভরশীলতা থেকে বেরোতে হবে এবং বিবর্তনের ধারায় পার্টিকে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এই নতুন ধারাকে প্রবর্তন করতে গিয়ে দলের বড় অংশ তা সমর্থন করেছিল। অভ্যন্তরীণ মত পার্থক্য যাই থাক পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাত এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মধ্যে একটা ঐক্যমত রচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই বিকল্প বিবর্তনের পথ, তার ভাবনা লোকাল কমিটির পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আর দলের মধ্যে সেই বৌদ্ধিক চর্চার আবহটাই ৩৪ বছরের শাসনের অবলুপ্ত হয়ে যায়। সেখানে ক্যডাররাজ, জঙ্গলরাজ, লুম্পেন প্রলেতারিয়াতদের দাপট , তোলাবাজি ইত্যাদি। আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো সবই কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে সিপিএমের জামানার থেকেই পাওয়া ।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের কি তাহলে আগামী দিনে এগোনোর কোনো সম্ভবনা নেই? এই পুরো নির্বাচনে সব হতাশার মধ্যেও একটা আশার ফুলঝুরি তো জ্বলেছে। সেটা হল একঝাঁক তরুণ তরুণী এই দলে প্রথম প্রার্থী হয়েছে। এত অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের সিপিএম দলের নির্বাচনী প্রার্থী হওয়া আমার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে এই প্রথম দেখলাম। এদের ঝকঝকে চোখ, চরিত্রের দৃঢ়তা আছে, ভালো কথা বলতে পারে। আজকের রাজনীতির জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের ঘটনাবলী সম্পর্কে তাঁরা সচেতন। সুতরাং এদের ওপর ভরসা করে আগামী দিনে এগোনোর চেষ্টা নিশ্চয়ই সিপিএমের প্রবীণ নেতৃত্ব করবেন। গোটা পৃথিবী জুড়ে যখন দেখা যাচ্ছে মার্ক্সবাদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে, পুঁজিবাদের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে তখন এদের ওপর প্রবীণ প্রজন্ম ভরসা রাখবে না কেন ?
একটা সময় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফুকোয়ামা ঘোষণা করেছিলেন ইতিহাস মৃত। এখনো মনে আছে ছাত্র জীবনে আমেরিকার লাইব্রেরিতে পড়তে যেতাম Crisis of Marxism। ধর্মতলার সেই গ্রন্থাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম বইটা আছে? তারা বললো যে না পত্রিকাটাই বন্ধ হয়ে গেছে! কেননা মার্ক্সবাদ মারা গেছে! সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন সেনা পাঠায় আফগানিস্তানে! সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। মার্ক্সবাদই যখন মারা গেল তখন এই পত্রিকাটা রেখে লাভ কি? সেদিন কিন্তু খুব মন খারাপ হয়েছিল পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য।
আজ যখন দেখতে পাই গোটা দুনিয়াতে রিচার্ড উল্ফ এর মতো মার্কসবাদী তাত্ত্বিকরা হবসবাম এর ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছেন, তখন এই নতুন প্রজন্মের সিপিএমের যুব যুবতী প্রতিনিধিরা সেই বিশ্ব সমাজতন্ত্রের প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধিকে মূলধন করে পশ্চিমবঙ্গে আবার সমাজতান্ত্রিক মশালকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই করবে।
কাজটা কঠিন। তার কারণ পুঁজিবাদ ও এখন সমাজতন্ত্রের উপাদান গুলি গ্রহণ করে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। Bill Gates বলেছিলেন Philanthropic capitalism অনেকে বললেন ক্রিয়েটিভ, সৃজনশীল পুঁজিবাদ। কিন্তু কোরামিন দিয়ে পুঁজিবাদকে বাঁচানো যে কঠিন সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আমেরিকা। কাজেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নবীন প্রজন্ম আবার গাইবে ও আলোর পথযাত্রী এখানে থেমো না? নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গের এক সুবিশাল বামপন্থী নাগরিক সমাজ সেই প্রত্যাশা রাখে।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সিরিয়ায় রাশিয়া ব্যর্থ হয়েছে, মানতে চান না পুতিন
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
রাজ্যে ফের ইডি হানা
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাড়ছে সিগারেট-গুটখার দাম! জিএসটি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
কেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হল? জেনে নিন
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
দাদার সঙ্গে জুলুমবাজি! পল পোগবার ভাইকে কঠিন শাস্তি দিল আদালত
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
তপসিয়ার ঝুপরিতে ভয়াবহ আগুন, ঘটনাস্থলে ৮ ইঞ্জিন
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
নক্ষত্র পতন! প্রয়াত পরিচালক রাজা মিত্র
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের সমানাধিকার! বিরাট রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
আরজি কর মামায় সঞ্জয় রায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
জয়পুরে রাসায়নিক ভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
ফের ধর্মতলায় ধরনায় জুনিয়র ডাক্তারদের, অনুমতি দিল না পুলিশ
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
সল্টলেকে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ঘিরে রহস্য​
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
আজ কি বৃষ্টি হবে কলকাতায়? দক্ষিণবঙ্গের আপডেটও জেনে নিন​
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাংলাদেশে কন্যা সহ সংখ্যালঘু মহিলাকে খুনের অভিযোগ​
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংসদের সামনে সমস্ত প্রতিবাদ বন্ধ, কড়া নির্দেশ স্পিকার ওম বিড়লার​
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team