এক সময় যে দলটির বিপক্ষে টেস্ট খেলতে বিশ্বের সব দেশের শরীরে কাঁপন ধরে যেত, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এখন উল্টো অবস্থা। পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ খেলারই আর মানসিকতা নেই। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে , বিশেষ করে টি টোয়েন্টিতে তাদের উৎসাহ বেশি। দাপটও বেশি। তাই বোধ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে বেজায় কোণঠাসা ক্যারিবিয়ানরা।
সেন্ট লুসিয়াতে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে গিয়েছিল একশোর গণ্ডি টপকানোর আগে। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শনিবার শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় ইনিংসেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪ উইকেটে ৮২ রান! টপ অর্ডারের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে গেছে। এখনও প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার করা ৩২২ রানের থেকে তারা ১৪৩ রানে পিছিয়ে।
দ্বিতীয় দিনে কুইন্টন ডি ককের অপরাজিত ১৪১ রানের দাপটে ব্যাটিংয়ে দিনটা দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে ছিল। এরপর দুই প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা ও আনরাইখ নর্তিয়ে মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরও কোণঠাসা করে দিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলারদেরই সামলাতে পারছে না ক্যারিবীয়রা! অথচ বিশ্বের সেরা সব ফাস্ট বোলাররা এই ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে একসময় বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়েছে।
এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে লুঙ্গি এনগিডি ও নর্তিয়ের সামনে বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন হোল্ডার-ব্রাফেট-হোপরা। এনগিডি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, নর্তিয়ে ৪টি।
দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিনটি শেষ হওয়ার আগেই আবারও ক্যারিবীয়দের ভোগাতে হাজির নর্তিয়ে। এবার এখন তাঁর সঙ্গী রাবাদা। দুজনে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রবিবার তৃতীয় দিন শুরু করবেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রোস্টন চেজ (২১*) ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড (১০*)।
এখনও পর্যন্ত পঞ্চম উইকেটে চেজ-ব্ল্যাকউড মিলে এরই মধ্যে ৩১ রানের জুটি গড়েছেন, খেলেছেন ৭৪ টি বল। প্রথম ৪টি উইকেটই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছিল ৫২ রানে।
দলের যখন ১২ রান, তখন পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরেন অধিনায়ক ব্রাফেট (৭)। রাবাদার বলে এলবিডব্লু হন তিনি। এরপর আউট হন আরেক ওপেনার কাইরন পাওয়েলও (১৪), ইনিও রাবাদার বলে এলবিডব্লু আউট হন।
১৬তম ওভারের প্রথম বলে তুলে নেন শাই হোপকে (১২), ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৩ উইকেটে ৩৭। এর ১৫ বল আর ১৪ রান পর আউট হয়ে গেলেন কাইল মেয়ার্স (১২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের বেসামাল অবস্থার মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক কিন্তু সফল । দিন শুরু করেছিলেন ৪ রানে অপরাজিত থেকে, ৪ উইকেটে ১২৮ রান নিয়ে দিন শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ডি ককের সঙ্গী ছিলেন ৩৪ রানে অপরাজিত রাসি ফন ডার ডুসেন। তিনি যখন ফেরেন তখন দল ১৬২ রানে । এরপর মুল্ডার (২৫ রান) এসে ডি ককের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৫৩ রানের জুটি।
ডি কক অধিনায়কের ভার নিয়ে আগের চার ম্যাচে ভালো ব্যাট করতে পারেননি। আর সেই দায়িত্ব থেকে সরে যেতেই ডি ককের ব্যাট বড়ো রান এল ।
ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন ১৪৮ বল খেলে। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংসে ডি ককের সাজানো রইল – চার ১২টি, ছক্কা ৭টিতে !
মুল্ডার আউট হওয়ার পর বাকি চার উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলতে পেরেছে ৯৩ রান, এর মধ্যে ডি কক ছাড়া বাকি চার ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ মাত্র – ১১ রান। নবম উইকেটে নর্তিয়ের (৭ রান) সঙ্গে ডি কক গড়েছেন ৭৯ রানের জুটি ! মেজাজ ফিরে পেলেন কক।
ছবি:সৌ-টুইটার।