বেলজিয়াম–২ ডেনমার্ক–১
(থোরগান হ্যাজার্ড, কেভিন দে ব্রূইন) (ইউসু্ফ পলসেন)
তিনি নামলেন। দেখলেন। গোল করালেন। গোল করলেন। এবং টিমকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।
তিনি কেভিন দে ব্রূ্ইন। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডারটিকে কেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ধরা হচ্ছে তার প্রকৃ ষ্ট উদাহরণ হয়ে রইল বৃহস্পতিবারের ইউরোর এই ম্যাচটি। উনিশ দিন আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে নাকে চোট পেয়ে বিরতির পর মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ম্যান সিটির সহঅধিনায়ককে। আশঙ্কা ছিল তিনি ইউরোতে খেলতে পারবেন কি না। প্রথম ম্যাচে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁকে নামানোই হয়নি। এদিনও প্রথম ৪৫ মিনিট তাঁকে ডাগ আউটে বসে কাটাতে হয়। বিরতির পর যখন তাঁকে নামানো হল তখন দু মিনিটে খাওয়া গোলে পিছিয়ে আছে বেলজিয়াম। এবং দে ব্রূইন নামার নয় মিনিটের মধ্যে গোল শোধ।
কৃতিত্ব দিতে হবে রোমেলো লুকাকুকেও। বেলজিয়ান স্ট্রাইকারকে প্রথমার্দ্ধে বলই ধরতে দেয়নি ডেনিশ ডিফেন্স। বিরতির পর তিনি তাই নীচে নেমে খেলতে থাকেন। একটা লুজ বল ধরে বাঁ দিক দিয়ে দৌড়ে লুকাকু বলটা পাস করলেন বক্সের মধ্যে থাকা কেভিনকে। বল ধরার আগেই কেভিন দেখে নিয়েছেন তাঁর চেয়েও গোল কার জন্য ভাল জায়গায় আছেন থোরগান হ্যাজার্ড। চোখের পলক ফেলার আগেই বলটা আলতো টোকায় ফ্লিক করে থোরগানকে দিলেন দে ব্রূইন। সামনে থাকা শুধু কাসপার স্কিমিশেলকে নড়বার সুযোগ না দিয়ে গোল করলেন এডেন হ্যাজার্ডের ছোট ভাই থোরগান, যিনি বুন্দেশলিগায় খেলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে।
টিম যত বড়, কোচ ততটাই বড়। এটা ফুটবলের চালু কথা। বেলজিয়াম এখন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর টিম। তাদের কোচ রবের্তো মার্টিনেজের এর পিছনে বড় ভূমিকা তো অবশ্যই আছে। ম্যাচটা জিততে হবে। তাই তিনি ষাট মিনিটের মাথায় দুটো প্লেয়ার বদলালেন। মাঠে এলেন অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড এবং উইটসেল। এর দশ মিনিটের মধ্যেই গোল পেয়ে গেল বেলজিয়াম। নেপথ্যে সেই লুকাকু। এবার তাঁর বাড়ানো বলটা ধরে অধিনায়ক হ্যাজার্ড বলটা পাস করলেন কেভিন দে ব্রূইনকে। কুড়ি গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর শটটা যখন গোলে ঢুকছে তখন স্কিমিশেল শুধুই দর্শক। ম্যাচ ওখানেই শেষ। এর পর ডেনমার্ক গোল শোধের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। গোল করার জন্য উঠে গিয়েছিলেন গোলকিপার স্কিমিশেলও। কিন্তু বেলজিয়াম ডিফেন্স তাদের আর জায়গা দেয়নি।
ডেনমার্ক ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দশ নম্বর টিম। তাদের দুর্ভাগ্য প্রথম ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন মাঠের মধ্যে। প্রাণে বেঁচে গেছেন ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার। এদিন কোপেনহেগেনের হাসপাতালের বেডে ডেনমার্কের জার্সি পরে ম্যাচও দেখেছেন। এবং ম্যাচ শুরুর দু মিনিটের মধ্যে বেলজিয়াম ডিফেন্সের ভুলে ডেনিসদের গোল করাটা উপভোগও করেছেন। বেলজিয়ান ডিফেন্ডার ডেনেয়ার একটা মিস ক্লিয়ারেন্স করেন। বক্সের সামনে ছিলেন ইউসুফ পলসেন। বল ধরে সামনে শুধু থিওবা কুর্তোয়া। তাঁকে দাঁড় করিয়ে গোল করেন জার্মানির লাইপজিগের স্ট্রাইকার।
কিন্তু পার্কেন স্টেডিয়ামে ডেনমার্ক প্রথম ৪৫ মিনিট ড্যানিশ ডিনামাইট হলেও পরের ৪৫ মিনিট কার্যত বশ্যতা স্বীকার করল বেলজিয়ামের। বেলরা শুধু ম্যাচই জেতেনি, দর্শকদের হৃদয়ও জিতেছে। তখন তারা এক গোলে হারছে। তা সত্ত্বেও দশ মিনিটের মাথায় মাঠের বাইরে বল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাল এরিকসনকে। গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সাধুবাদ জানাল বেলজিয়ামকে।
প্রথম ৪৫ মিনিট দাপিয়েছে ডেনমার্কই। কিন্ত বিরতির পর কেভিন জাদুতে তারা দিশেহারা হয়ে যায়। অথচ বল পজেশনে তারা খুব একটা পিছিয়ে ছিল না বেলজিয়ামের চেয়ে (৪৪-৫৬)। কিন্তু এই ধরনের বড় ম্যাচে ফুটবলাদের ব্যাক্তিগত স্কিল এবং কোচের মস্তিষ্ক পার্থক্য গড়ে দেয়। বেলজিয়ামের একটা কেভিন দে ব্রূইন ছিল। তাই দিনের শেষে তারাই জয়ী। আর পর পর দুটো ম্যাচ হেরে এবারের মতো বিদায় হয়ে গেল ডেনমার্কের। আর পর পর দুটো ম্যাচ জিতে বেলজয়াম চলে গেল শেষ ষোলয়।
শনিবার যে মাঠে এরিকসনের জীবন সংশয় হয়েছিল, গত কাল সেই অপয়া মাঠে প্র্যাক্টিস করতেই নামেনি ডেনমার্ক। শেষ পর্যন্ত সেই মাঠ তাদের কাছে আর পয়মন্ত হল না। ১৯৯২-এর ইউরো চ্যাম্পিয়নরা তাই এবার শুধুই এলেন এবং গেলেন।