যত কাণ্ড কেবল কেকেআর ক্রিকেটারদের নিয়ে ! কেকেআরের ক্রিকেটাররা জড়িয়ে যাচ্ছেন ! বর্ণবিদ্বেষীমূলক টুইট – বিশ্ব ক্রিকেটে আজ তোলপাড়। সেখানে চলে এসেছে এই দলের অধিনায়ক ইয়ন মরগানের নাম। সেই দলের কোচ ব্রান্ডেন ম্যাককালামের নামও এখন জড়িয়েছে এই ইস্যুতে। এবার দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাঠে মেজাজ হারিয়ে যা করলেন, তাও হতবাক করেছে ক্রিকেট বিশ্বকে।
‘আম্পায়ার্স কল ইজ ফাইনাল’। ক্রিকেটে এটা সকলে জানেন। সাকিবও জানেন। তাহলে এ কী করলেন সাকিব আল হাসান ! পছন্দ হয়নি আম্পায়ারের সিধ্যান্ত। হতেই পারে। কিন্তু এভাবে এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে?
এমন এক কাণ্ড করলেন ক্রিকেট মাঠে, তা একদমই নজিরবিহীন। সাকিবের জোরালো আউটের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় স্টাম্পেই লাথি মেরে বসেছেন দলের অধিনায়ক। এক ওভার পর স্টাম্প হাতে তুলে আছাড়ও মারতে দেখা যায় তাঁকে। এই সময়ে আম্পায়ারকে হুমকি দিতেও দেখা গেছে তাঁকে। পরে ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় প্রতিপক্ষের দিকে তাকিয়ে অশালিন ভঙ্গিও করেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটারটি !
সাকিব খেলতে নেমেছিলেন মোহামেডানের হয়ে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা ছিল। এমন আচরণের জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারেন – তা বুঝেই হয়তো ম্যাচটি জিতে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে কিছুক্ষণ পরই ক্ষমা চেয়ে নেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই তারকা।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার খেলা ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডের মধ্যে। সেই ম্যাচেই ঘটে এই ঘটনা। আগে ব্যাটিং করে ১৪৫ রান করে মোহামেডান। টার্গেট রান আহামরি কিছু নয় বুঝেই বোলিংয়ের শুরুটা হয় দারুণ। ৩টি উইকেট তুলে নেওয়ার কাজ শুরুতে হয়ে যায়। বৃষ্টি নামার আগে আরেকটি উইকেট দরকার ছিল সাকিবদের। আর তা পেলে ডি এল পদ্ধতিতে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারতো তারা। আর এই একটি উইকেটের জন্য মরিয়া হয়েই লড়ছিল মোহামেডান। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা তখন । তাড়াতাড়ি ওভার শেষ করতে চাইছিলেন সাকিব। একটি উইকেট চাই। কিন্তু সাকিবের আউটের এক জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়াতেই লাগলো যতো গণ্ডগোল।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি অবশ্য দারুণ করেছিলেন সাকিব। অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ঠিকভাবে বাটে – বলে করতে পারেননি। এলবিডাব্লিউর জোরালো আবেদন করে পুরো দলই। খালি চোখেও মনে হয়েছিল আউটই । কিন্তু আম্পায়ার তাতে সাড়া না দিতেই চোখের নিমেষে মেজাজ হারিয়ে সাকিব লাথি মারেন উইকেটেই।
এরপর আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন সাকিব। পরে সতীর্থরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে শান্ত করে। সেই সময় ম্যাচ জিততে আবাহনীর সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২১ রান। আর বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই পরের ওভারে শুভাগতর বলে চালিয়ে খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুটি বাউন্ডারিতে তুলে নেন ১০ রান। এরপরই নামে বৃষ্টি।
এ সময়ে মিডঅফে ফিল্ডিং করছিলেন সাকিব। দৌড়ে এসে তুলে নেন স্টাম্প। এরপর আছাড় মারেন মাটিতে। সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। তার সঙ্গেও তর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় মোহামেডান অধিনায়কটিকে। সেই সময় সতীর্থরা সাকিবকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
প্রবল বেগে বৃষ্টি নামায় মাঠ ছেড়ে সকলে তখন ফিরছিলেন ড্রেসিং রুমে। মাঠে সাকিবের এমন আচরণে আবাহনী ড্রেসিং রুম থেকে তেড়ে এসেছিলেন আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও। তবে তাকে মোহামেডান ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভ গিয়ে টেনে নিয়ে সরিয়ে শান্ত করেন।
পরে পসিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৮১ মিনিট পর মাঠে ফেরে দী দল। ম্যাচ জেতার জন্য আবাহনী দরকার ছিল ৯ ওভারে ৭৪ রান । বেশ কঠিন লক্ষ্য। তবে মুশফিকের দল থেমে যেতে বাধ্য হয় ৬ উইকেটে ৪৪ রানে। টানা তিন ম্যাচে হারের পর জয়ে ফিরল মোহামেডান। আর তাতে ৫ বছর পর চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারাল ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। আর সেই ম্যাচে আকর্ষণের কেন্দ্রে থেকে গেলেন সাকিবই।
সাকিব ব্যাটে রান পাচ্ছেন না অনেক দিন ধরেই। প্রিমিয়ার লিগে এর আগের ছয় ম্যাচে মাত্র ১২.১৬ গড়ে রান করেছেন মোট ৭৩। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে করেছেন যথাক্রমে ১৫, ০ ও ৪। এর আগে কে কে আরের হয়েও রান পাননি আইপিএলে। অথচ ব্যাট হাতে ফর্মে ফিরতে নেটে বাড়তি অনুশীলন শুরু করছেন। গতকাল ম্যাচের আগেও মিরপুরের ইনডোরে আলাদা করে অনুশীলন করেছেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংসটি খেলেন সাকিবই। ২৭ বলের ইনিংসটি ১টি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো ।
এদিনের এই ম্যাচ সব ধরনের মশলার জোগান দিয়েছে। আর বিতর্কে সাকিব জড়ালেন। জোরালো কে কে আরও।
ছবি: সৌ – টুইটার।