শীর্ষ আদালতে আবার ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রবীণ সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে মনে করিয়ে দিল, ভিন্ন মত প্রকাশ করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। শীর্ষ আদালতের তরফে আরও বলা হল, দেশের সমস্ত সাংবাদিকের রক্ষাকবচের অধিকার আছে। এই প্রসঙ্গে ১৯৬২ সালে কেদারনাথ সিংহ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথাও জানিয়ে দিয়েছে আদালত। ওই রায়েই বলা হয়েছিল, যে কোনও নির্বাচিত সরকারের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা জরুরি। সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি ধরিয়ে দেওয়া সংবাদমাধ্যমের কাজের মধ্যেই পড়ে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একেবারে নাকানি চোবানি খাচ্ছে। দেশ জুড়ে টিকা নেই, অক্সিজেন নেই, হাসপাতালে বেড অমিল, করোনায় মৃতদের দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই সব নিয়ে প্রায় রোজই বিভিন্ন হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপি সরকারকে। গত বুধবারই দেশের শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের টিকা নীতির তুমুল সমালোচনা করেছে। তারা জানতে চেয়েছে, কেন্দ্রের সুস্পষ্ট টিকা নীতি কোথায়? শীর্ষ আদালত টিকা নিয়ে বিস্তারিত হিসেব এবং তথ্য জানতে চেয়েছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে এ ব্যাপারে হলফনামাও চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা প্রশ্ন তুলেছে টিকার বিভিন্ন দাম নিয়ে। কেন সারা দেশে টিকার একই দাম হবে না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়স্করা কেন বিনামূল্যে টিকা পাবে না, সুপ্রিম কোর্ট তাও জানতে চেয়েছে।
তাতে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের খুব একটা হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। দিন তিনেক আগেই সুপ্রিম কোর্ট অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে একটি মামলায় তোপ দেগেছে। দুটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে ওই রাজ্যের সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করে। চ্যানেল দুটি সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত বলে, ব্রিটিশ আমলে তৈরি রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের নতুন ব্যাখ্যা দরকার। তারা বলেছে, রাজ্য সরকার ওই দুটি চ্যানেলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তার জের কাটতে না কাটতেই আবার সুপ্রিম কোর্ট বিনোদ দুয়া মামলায় কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলল।
বিভিন্ন রাজ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রচুর রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ঝুলে রয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একেবারে মুখিয়ে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে হাথরসে দলিত তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে খবর করায় রাজদীপ সরদেশাই, মৃণাল পাণ্ডে প্রমুখের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলে নুন রুটি দেওয়ার খবর করায় তরুণ সাংবাদিক সরকারের রোষানলে পড়ে। তাঁকেও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ফাঁসানো হয়।
কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি সরকারের টার্গেট হয়ে উঠছেন সাংবাদিকরা। পান থেকে চুন খসলেই তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হচ্ছে। বিরোধী নেতারা বলছেন, শীর্ষ আদালতের রায় বা পর্যবেক্ষণকেও পাত্তা দিচ্ছে না বিজেপি।
শীর্ষ আদালতে বারবার মুখ পুড়ছে কেন্দ্রের। তাতেও অবিচল বিজেপি। এত সবের পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে পেরেছে। তাঁর আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রীর জন্যই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় সম্ভব হয়েছে। করোনা সংক্রমণ আগের থেকে খানিকটা কমলেও এখনও দৈনিক সংক্রমণ দেড় লক্ষের কাছে ঘোরাফেরা করছে। এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহ কোন আক্কেলে জয়ের ধ্বজা উড়িয়ে দিলেন, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।