বাজারে আপাতত ভাইরাল প্রশ্ন, দিলু ঘোষ কি তৃণমূলে যাচ্ছেন? দিলীপ ঘোষ কি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দলবদল করবেন? মুখে মুখে যখন এই প্রশ্ন তখন স্বয়ং দিলীপ ঘোষই উত্তরটা দিয়ে দিতে পারতেন। আজ থেকে এক বছর আগে হলেও মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেড়ে দিলু ঘোষ অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেন। মজাটা হল দলের মধ্যে ক্রমাগত কোন্দল, কাঠিবাজি আর গোষ্ঠীবাজি দেখে দিলু ঘোষও এখন ১০০ শতাংশ পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন। আগের মতো ধড়াম করে কথা বলে দেওয়ার অভ্যেস তিনি ছেড়েছেন। দু’ ধরনের লোকজন হেঁয়ালি করে কথা বলেন, এক হল ওই বাবাজি মাতাজিদের দল, যারা ভক্তদের বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা কামায়। আপনি কি ভগবান দেখেছেন? প্রশ্নের পরেই এমন একটা হাসি দেবেন যে আপনার মনে হবে সত্যিই তো এই প্রশ্ন কি করা উচিত হল। কিন্তু তারপরেও যদি তাকান, তাহলে উনি এবারে মৃদু হেসে বলবেন, ভালো, ভালো, মনে প্রশ্ন থাকা ভালো, মনের প্রশ্ন আটকে রাখবি না কখনও। ব্যস, এই বলে তিনি চলে যাবেন। আপনি যা বোঝার বুঝে নিন। আর ঠিক এইরকম গোল গোল কথা বলেন আমাদের রাজনীতিবিদেরা। প্রশ্ন করা হয়েছিল, এবারের বিরাট বিমান হানাতে যদি উগ্রপন্থীদের ডেরা গুঁড়ো করে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে বালাকোটের সার্জিকাল স্ট্রাইকে কি কাকের বাসা ভাঙা হয়েছিল? উত্তর এল, জওয়ানদের লড়াই আত্মত্যাগের উপরেই দেশের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে, তাঁদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন কোরো না। ব্যস। এবার যা বোঝার বুঝে নিন। এক্কেবারে সেই কায়দাতে দিলীপ ঘোষ বল নিয়ে ডজ করেই যাচ্ছেন, কাজেই সে প্রশ্ন ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর বিষয় আজকে, দিলীপ ঘোষকে কি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দেখতে পাব?
দিলীপ ঘোষ ২১ জুলাই কেন, তারপরে অন্য কোনও তারিখে, কোনওদিনও তৃণমূলে যাবেন না, এটা লিখে নিতে পারেন। না, তিনি যাবেন না। তিনি দল ছেড়ে দিতেই পারেন, বসে যেতেই পারেন, কোথাও গিয়ে আরএসএস-এর শাখা চালাতেই পারেন, উনি দল বদলাবেন না, উনি মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারী বা রাজীব ব্যানার্জি বা রুদ্রনীল ঘোষ নন, এইটা মাথায় রাখুন আর তারপরে আসুন কারণগুলো দেখা যাক।
আরও পড়ুন: Aajke | নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এখন টিক টক, টিক টক
বিজেপিতে যাঁরা আছেন, নেতা কর্মী ইত্যাদিকে মোদ্দা তিনভাগে ভাগ করা যায়। যাঁরা আরএসএস কর্মী ছিলেন, শাখায় যেতেন, পরে বিজেপির কর্মী হয়েছেন বা আরএসএস-এর পদে ছিলেন এবং যাঁদেরকে আরএসএস থেকেই বিজেপিতে কাজ করতে পাঠানো হয়েছে, এটা হল প্রথম অংশ। দ্বিতীয় অংশ হল যাঁরা সেই অর্থে আরএসএস করেননি কিন্তু বহুকাল ধরেই জনসঙ্ঘ করেছেন, পরে বিজেপি করেছেন, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে এঁরা সংখ্যায় বেশি। আর তৃতীয় অংশ হল সিবিআই, ইডির ভয়ে, নেতা মন্ত্রী হওয়ার জন্য, বিভিন্ন ধান্দাবাজির জন্য বিজেপিতে গেছেন। আর এই বাংলাতে একদল আছেন, যাঁদেরকে চতুর্থ অংশও বলা যায়, যাঁরা সিপিএম ছিলেন, তৃণমূলের ঝাড় নেমে আসায় বিজেপিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই তৃতীয় চতুর্থ অংশের নেতারা দল ছাড়তেই পারেন, ছাড়েনও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের মধ্যে পদ, সম্মান না পেয়ে ওই দ্বিতীয় অংশের কেউ কেউ দল ছেড়ে অন্য দলে গেছেন। কিন্তু আরএসএস-এর প্রচারক বিজেপিতে এসেছেন, তারপর বিজেপি ছেড়ে অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন এরকম খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে কে এন গোবিন্দাচার্যের কথা মনে পড়ছে, তিনি দল ছেড়ে এক রাষ্ট্রীয় স্বাভিমান আন্দোলন শুরু করেছিলেন বটে, কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি। লালকৃষ্ণ আদবানি, সব অপমান সহ্য করেও দল ছাড়েননি, মুরলী মনোহর জোশী থেকে এরকম অনেকের উদাহরণ দেওয়া যায়। হ্যাঁ, আমি দিলীপ ঘোষকে সেই জায়গাতেই রাখব, দিলীপ ঘোষ চপের দোকান দিয়ে হিন্দুত্বের প্রচার করবেন কিন্তু দল ছেড়ে তৃণমূলে যাবেন? না, সেটা হবে না। তবুও আমরা মানুষের কাছে তাঁদের ধারণা জানতে চেয়েছিলাম, দলের মধ্যে পদ না পেয়ে, কাঠিবাজির ফলে সাংসদ পদ হারিয়ে দিলীপ ঘোষ কি এতটাই ক্ষুব্ধ যে তিনি ২১ জুলাই তৃণমূল দলে যোগ দেবেন?
না, ২১ জুলাই আমরা দিলীপ ঘোষকে মঞ্চে দেখতে পাব না কিন্তু আপাতত এক পরিবর্তিত রাজনীতিবিদকে আমরা দেখছি, যিনি এখন গোল গোল কথা বলতে পারেন, রহস্য জিইয়ে রাখতে পারেন। এবং তিনি আজ ব্যাকফুটে বলে মনে করার কিছু নেই যে দলের মধ্যে তাঁর প্রতিপক্ষকে তিনি ছেড়ে দেবেন। আমি ওনার আচরণ দেখেই বলছি, তিনি দলের মধ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তৈরি হচ্ছেন। আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু দিলীপ ঘোষ কিন্তু জবাব দেবেন, আজ বলছি মিলিয়ে নেবেন।