ডিমের কুসুম, ব্যাপারটা ঠিক কী? খুব সোজা করে বললে অ্যালবুমিন, যা নাকি প্রোটিন, আর জল দিয়ে চার ধার থেকে ঢেকে রাখা আগামী প্রাণের স্পন্দনের জন্য যে খাদ্যভাণ্ডার তৈরি থাকে তাকেই আমরা কুসুম বলি। ডিম নিষিক্ত হবে, ভ্রুণের জন্ম হবে আর সেই ভ্রুণ এই কমলা রংয়ের এক থকথকে প্রোটিন, মিনারেল মেশানো জমা খাবার থেকে নিজের পুষ্টি জোগাড় করবে, এটাই তার কার্যকারিতা। কিন্তু নেপোয় মারে ডিম, বা ডিম পাড়ে হাঁসে খায় দারোগার মতোই ভ্রুণ জন্মানোর আগেই বা অনিষিক্ত ডিম খাই আমরা। কিন্তু সে ডিমের কুসুমই সেই আগামী প্রাণের খাদ্যের জোগান, এ নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই। মানে আমাদের নেই, অনেকেরই আছে, প্রকাশ্যেই তাঁরা উন্মাদের মতো নেচে নেচে বলছেন কিসের কুসুম, কিসের কুসুম? এখন সেই কুসুম হারাইয়া গেলে কী হইবে? মানে ডাক্তারেরা অনেক সময়েই বলেন হাই কোলেস্টরেল, হাই ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির ক্ষেত্রে কুসুম ফেলে কেবল সাদা অংশটা খান, এক বিস্বাদ ওষুধের মতো খান অনেকেই, কিন্তু তাতে মন ভরে না আর সে ডিম খাওয়া এক ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়, কমলা রংয়ের সানি সাইড আপ থেকে কেবল সাদা প্রোটিন খাওয়া এক আত্মপ্রবঞ্চনাও বটে। ডিমের সেই কুসুম ছাড়া সাদা থকথকে পদার্থে প্রোটিন থাকতেই পারে, কিন্তু প্রাণ? না তা প্রাণহীন, সম্ভবত সেই কারণেই ডিমের কমলা হলুদ অংশটার এক সুন্দর নাম আছে, কুসুম, সাদা অংশের নাম? না নেই। কোনও কোনও মানুষ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান অনেক সময়েই এই কুসুমহীনতায় ভোগে, একে নো কুসুম ডিজিজও বলাই যায়। তার বিশাল ইতিহাস আছে, তার বিরাট ঐতিহ্য আছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও কোনও সন্দেহই নেই, কিন্তু তার প্রাণ নেই, সে প্রাণহীন, সে তখন কেবল এক থকথকে তরলের মতো এধারে হেলছে, ওধারে হেলছে, গোটা দুনিয়া দেখছে, কিন্তু কিছু করতে পারছে না, কারণ সে প্রাণহীন। আজ সেটাই আমাদের বিষয়, গণশক্তি তোমার কি কুসুম হারাইয়াছে?
আজ মে দিবস, দুনিয়াজোড়া শ্রমিক আন্দোলনের এক পুণ্যদিন, হে মার্কেটের সেই শহাদত, সেই লড়াইকে মনে রেখে কেবল কমিউনিস্টরা নন, বিশ্বের তাবত শ্রমিক মানুষজনের এক উদযাপন। কমিউনিস্ট পার্টির কাছে আরও বেশি করে, কেন? কেননা তারা যে মূলত শ্রমিকদের পার্টি, ভ্যানগার্ড অফ দ্য প্রোলেতারিয়েত।
আরও পড়ুন: Aajke | জয় জগন্নাথ
তো সেই মে দিবসে সিপিএম-এর ভাষায় নাকি আরএসএস-এর দুর্গার ছবি দেখলাম, কাগজে বিজ্ঞাপনে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শ্রমিক দিবসে। এবং গণশক্তির প্রথম পাতায়? কী ভাবছেন? মে দিবসের শুভেচ্ছা? তার জন্য ছয়ের পাতায় যেতে হবে, প্রথম পাতায় কেরালার ভিজিঞ্জাম ডকের উদ্বোধন হবে আগামিকাল, আদানিদের প্রকল্প, উদ্বোধন করতে আসবেন নরেন্দ্র মোদিজি, থাকবেন পিনারাই বিজয়ন, মুখ্যমন্ত্রী, তার পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন। কেরালাতে ডক উদ্বোধন হবে আগামিকাল, আজ বাংলার গণশক্তিতে তার বিজ্ঞাপন কেন? ইচ্ছে হয়েছে তাই, জানলে জবাব মিলবে না, কারণ ওই যে গণশক্তি তাহার কুসুম হারাইয়াছে। প্রাণহীনতার আর এক চেহারা আমরা গতকালই দেখেছিলাম, গণশক্তি পড়ে ডাবল হাফ বয়েলড ডিম, পাঁউরুটি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে করতে ট্যুরিস্টরা জানতে পারলেন যে দিঘাতে আমিষ খাওয়া বন্ধ করেছে তৃণমূলের সরকার, কেবল তাই নয় বেশ খানিকটা সময় ধরে জালাল শেখের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার পরে জানা গেল মুসলমানদের নাকি সমুদ্র সৈকতে আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শেষমেশ কলকাতা পুলিশ সমাজমাধ্যমে জানাল যে এটি ফেক নিউজ। কোথায় ছাপা হয়েছে? গণশক্তিতে। ঋষি শাণ্ডিল্যের বংশধর গণশক্তির সম্পাদক বারেন্দ্র বামুন শমীক লাহিড়ি সম্ভবত খানিক হিন্দু জাগরণ আর মুসলমান উত্থানের জন্যই এই ফেক নিউজটা গতকাল গণশক্তির প্রথম পাতায় ছেপেছিলেন। দিনভর খিল্লি হওয়ার পরে আজ আবার খবর দ্বিতীয় পাতায়, ইসকনের আদর্শ খাদ্য তো নিরামিষ আর এই উদ্বোধনে যেহেতু ইসকন আছে তাই তারা নিরামিষ খাবারের কথা প্রচার করেছে। মানে ওনারা কী চান? তাই এখনও ঠিক করে উঠতে পারছেন না, ওই যে ঘটি হারিয়েছে, থুড়ি গণশক্তি তাহার কুসুম হারাইয়াছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করলাম যে সিপিএম-এর মুখপত্র গণশক্তিতে গতকাল প্রথম পাতায় লেখা হল যে “মুসলিমদের রাস্তায় বেরোনো নিষেধ, মন্দির উদ্বোধন, দুদিন আমিষ নিষিদ্ধ দিঘায়” পরে জানা গেল যে পুরোটাই এক প্রকাণ্ড মিথ্যে। জেনে বুঝেও এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে ফেক নিউজ কেন ছড়াচ্ছে সিপিএম? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এই মন্দির উদ্বোধন নিয়ে কি কিছুই বলার ছিল না সিপিএম-এর? নিশ্চয়ই ছিল, কেন সরকারি পয়সাতে এক ধর্মের মন্দির তৈরি হবে? কেন সরকারের মাথায় বসে থাকা মুখমন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রীরা এক নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন? এসব প্রশ্ন তো তোলাই যায়। এগুলোই তো একটা কমিউনিস্ট পার্টির কাছে বড় ইস্যু। মানছি এসব ইস্যু তোলা, মানুষকে বোঝানো বেশ কষ্টের, অনেক ধৈর্য লাগে, এবং এটাও সত্যি যে যদি এমন ঘোষণা হত, নিরামিষ খাবার ফতোয়া দেওয়া হত বা মুসলমান মানুষজনকে রাস্তায় নামতে নিষেধ করা হত, তাহলে তাও হয়ে উঠতেই পারতো এক বড় ইস্যু, কিন্তু তার বদলে ফেক নিউজ কেন? ওই যে ঘটি হারিয়েছে, থুড়ি, সিপিএম তার কুসুম হারিয়েছে।