কার যে কখন কোন কারণে চোখ টাটায়? কার যে কোথায় লুকিয়ে থাকে ব্যথার ভান্ডার কে তার খবর রাখে? সত্যিই তো জেনে কী বা প্রয়োজন অনেক দূরের বন রাঙা হল, কুসুমে না বহ্নিতাপে? কিন্তু আমরা সাংবাদিকেরা রাজনীতির আঙিনাতে এই ব্যথা আর আনন্দের থার্মোমিটারের দিকে একটা কড়া নজর রাখি। দিলীপ ঘোষকে বৈঠকেই ডাকা হচ্ছে না, তো কার কার তাতে প্রবল আনন্দ তা তো আর ব্যাখ্যা করে বলে দিতে হয় না, সব্বাই সেসব কেচ্ছাকাহিনি জানে। কিন্তু অনেক সময়ে এক চেক মেট-এর খেলা চলতে থাকে, শাসকদল একটা চাল দিয়ে ভাবল চেক মেট, বিরোধী দল সেটাকে বাপি বাড়ি যা বলে বাউন্ডারির ওপারের ফেলে এগিয়ে গেল। ব্যথা তো হবেই, আবার উল্টোটাও হয়, ধরুন আজ এতদিন ধরে কাস্ট সেনসাস করো, কাস্ট সেনসাস করো বলে দাবি তোলা বিরোধী দল দেখল বিজেপি কাস্ট সেনসাসের দাবি মেনে সেটাকেই বিহার নির্বাচনের ইস্যু বানিয়ে দিল। ব্যথা হবে বইকী। তেমনিই এতদিন বিরোধী প্রত্যেক নেতাকেই দেশের উন্নয়নের বাধা, পাকিস্তানের সুরে কথা বলে, আসলে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না বলা বিজেপি দল খানিক ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দের মতন এক যাচ্ছেতাই অবস্থায় পড়ে বিরোধী দলের নেতাদেরও বিশ্বের দরবারে ভারত সরকারের হয়ে কথা বলার আবেদন জানিয়েছে, দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশে তাঁরা ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। ভালো কথা, তো সেই তালিকাতে ছিলেন ইউসুফ পাঠান, এক ধমক দেওয়ার পরে, মানে এটা বলার পরে যে আমাদের দলের কে যাবে সেটা তুমি ঠিক করার কে হে, বলার পরে ইউসুফ পাঠানের বদলে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তো সেখানে এই প্রশ্ন উঠবেই, এরকম এক দাবার চালে কার কার কুন কুন জায়গাতে ব্যথা সখী? কুন কুন জায়গাতে ব্যথা? সেটাই বিষয় আজকে, অভিষেক বিদেশে যাচ্ছেন, তাতে কার কার গায়ে ফোসকা?
এমনিতে ট্রাম্প সাহেবের অসামান্য বাচালতার পরেও মোদিজির তো সেই ক্ষমতা নেই যে উনি সরাসরি বলবেন, ট্রাম্প সাহেব ডাহা মিথ্যে বলছেন, উনি যুদ্ধের মধ্যস্থতা করেননি। যা করার আমরা দুই দেশ করেছি। না, এটা বলার ধক যে ওই ৫৬ ইঞ্চ কা সিনার নেই তা তো আমরা জানি। কাজেই যুদ্ধ শেষে প্রচুর স্যাটেলাইট ছবি দেখিয়ে আমাদের সেনারা দারুণ লড়েছেন, মুখের উপর জবাব দিয়েছেন ইত্যাদি বলার পরেও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যে আস্ত অশ্বডিম্বটি পেড়েছে তা লুকোতেই মোদিজির নতুন প্রোগ্রাম, হম সব সাথ সাথ হ্যায়।
আরও পড়ুন: Aajke | মোদিজির রাজ্যে বাঙালির ঘর ভাঙছে কারা?
ক’দিন আগেই যারা নাকি পাকিস্তানের সুরে কথা বলছিল সেই বিরোধীরাও এখন সরকারি প্রতিনিধি দলের একজন হয়েই বিভিন্ন দেশে যাবেন এটা বলতে যে পাকিস্তান আমাদের দেশে উগ্রপন্থী পাঠিয়ে মানুষ মারছে, পাকিস্তান এক টেররিস্ট হাব ইত্যাদি। এবং এমনিতে এটার সঙ্গে এক দেশপ্রেম ইত্যাদি জুড়ে আছে কাজেই কোনও রাজনৈতিক দল তার বিরোধিতা করতে পারবে না, সারা দেশের সামনে মোদিজি এক নতুন অপটিক্স, এক নতুন ছবি তুলে ধরবেন। প্রথম কথা হল এসব নতুন কিছুই নয়, এর আগে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে, দেশের বহু বিরোধী দলনেতাকে বিদেশে বিভিন্ন ডেলিগেশনে, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিজেপি তো সবকিছুই নিজেদের আবিষ্কার আর কৃতিত্ব বলে দাবি করে, এটা নিয়েও তারা খানিক কথা বলা শুরু করেছিল। কিন্তু প্রথম বাগড়া এল তৃণমূলের কাছ থেকে, না আপনারা ঠিক করে দিতে পারেন না দল থেকে কে যাবে। কাজেই ইউসুফ পাঠান না হয়ে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, খেলাটা না, অন্য লেভেলে চলে গেল। আচ্ছা খেয়াল করে দেখেছেন, রাজ্যের এক নম্বর নেতাকে কোনওভাবেই ঘায়েল করতে না পেরেই বিজেপি নেমেছিল দু’ নম্বরে থাকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে, চাকরি চুরি থেকে কাটমানি ইত্যাদির সঙ্গে অভিষেককে জুড়ে বিজেপি সবে একটা বেশ দরকারি ন্যারেটিভ সেট করতেই যাচ্ছিল, ঠিক তখনই দেশের এই সংকটকালে দেশের প্রতিনিধি কে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজটা বিরাট রিস্কি হয়ে গেল। বঙ্গ বিজেপির নেতারা ভেবেছিলেন, ইউসুফ না হলে ডেরেক, না হলে মহুয়া মৈত্র ইত্যাদি ইত্যাদি এখন সেই জায়গাতে ২০২৬-এর কাপ্তেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গ বিজেপির টাকাতে পুষ্ট এক ইউটিউবার তো মুষড়ে পড়েছেন, এরা তো নিজেদের ঘুঁটি নিজেরাই কেঁচিয়ে ছাড়বে, তিনি বলেছেন নিজেদের মহলে। দিলীপ ঘোষ কি সুযোগ ছাড়বেন? তিনি বলেছেন দেশপ্রেম সবার আগে, মানে পরিষ্কার, ইশারা কাফি হ্যায়। একজন দেশপ্রেমিক তো দেশকেই, দেশের মতকেই তুলে ধরবেন। পরোক্ষে বলেই দিলেন অভিষেক বন্দ্যপাধ্যায় একজন দেশপ্রেমিক। এবারে ভাবুন, তাঁরা ফিরবেন, এই ভারত–পাক ইত্যাদি খবরের কাগজে এক থেকে পাঁচ সাতের পাতাতেই থেকে যাবে আগামী চার পাঁচ মাস, তারপর পুজো থেকে ভাইফোঁটা, তারপর তো নির্বাচন এসে যাবে। কী বলবে বঙ্গ বিজেপি? দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা অভিষেক চোর, কাটমানি খায়? কাজেই ব্যথা লেগেছে, সে ব্যথা কী যে ব্যথা বোঝে কি আনজনে? যাঁদের বোঝার তাঁরা বুঝেছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভারত-পাক যুদ্ধকে নির্বাচনের ইস্যু বানাতে গিয়ে বঙ্গ বিজেপি কি বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে? ট্রাম্প সাহেব তাঁদের ডুবিয়েছে, এবারে অভিষেক এই বাংলাতে একমাত্র ভারতের প্রতিনিধি। সব মিলিয়ে বিজেপি কি বেশ অস্বস্তিতে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আমি লিখে রাখছি মিলিয়ে নেবেন, অভিষেক বিদেশের এই সব সফর সেরে ফেরার পরে রাজ্যময় ঘুরবেন আর এই কথাগুলোই বলবেন, যে দেশের সংকটের সময়ে তিনি দলের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, না এই বাংলার একজন বিজেপি সাংসদ নেতার সেই সুযোগ মেলেনি। এবং তখন বঙ্গ বিজেপির যাবতীয় খেলনা মিসাইল আর ড্রোন অকেজো হয়ে পড়ে থাকবে। হ্যাঁ, সাংবাদিকতার জ্যেষ্ঠতাত যতই দুঃখ পান, এটা তৃণমূলের একটা মাস্টারস্ট্রোক, এক ব্রহ্মাস্ত্র, যা বিজেপির কাছে আগামী দিনে মারাত্মক হয়ে উঠবে।