আগে মোদিজি এসে দাঁড়ালেই একটা সমর্থনের জোয়ার উঠত, মোদি, মোদি, মোদি। এখন মোদিজি একলাই দলকে ডোবানোর জন্যে যথেষ্ট হয়ে উঠেছেন। এমনিতে অবশ্য বঙ্গ বিজেপিকে ডোবানোর জন্য যে তিন মুখ এই বাংলাতে অ্যাকটিভ, সেটাই যথেষ্ট, তার ওপরে মোদিজি এসে পাতা দুধে গোবর ছড়িয়ে চলে গেলেন। ভাবা যায়, সেই সভাপতি যাঁর আমলে বিজেপির গ্রোথ সবথেকে বেশি, তিনি টিভিতে বসে মোদিজির ভাষণ দেখছেন আর সভা আলো করে বসে আছেন শুভেন্দু অধিকারী আর সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁরা গত একটা উপনির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী জিতিয়ে আনতে পারেননি কেবল নয়, দল ছেড়ে বিধায়ক, নেতারা তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন। কেবল দেখছিলাম অক্ষমের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, মোদিজি ঢুকছেন মঞ্চে, বাংলার এই দুই দলনেতা পারলে এক যুদ্ধ জয়ের নেতাকে, অপারেশন সিঁদুরের হোতাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করেন, এমন একটা ভাব। কখন? যখন দেশের বাইরে তৃণমূলের দু’ নম্বর নেতা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে বিদেশে। আসলে অপারেশন সিঁদুর তো ছিল একটা রাজনৈতিক অভিযান, দেশের শত্রু পাকিস্তানের মোকাবিলা করছিলেন তো আমাদের জওয়ানেরা, সেই অভিযানের নাম অপারেশন সিঁদুর না অপারেশন মঙ্গলসূত্র না অপারেশন চুড়িবালা, তাতে কী এসে যায়? ওনারা সীমান্ত রক্ষার ট্রেনিং নিয়েছেন, শপথ নিয়েছেন, লড়ে যাচ্ছেন। অপারেশন সিঁদুর দেশের ভেতরে এক রাজনৈতিক অভিযান, যা মোদি সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, ধারাবাহিক লুঠমার, দেশকে বেচে দেওয়ার কাজকে আড়াল করে এক জঙ্গি জাতীয়তাবাদের জন্ম দেওয়া, যার উপরে ভর করে ভোটে জেতা যায়। আর ঠিক তাই দেশের সাংসদরা যখন বিদেশে দেশের অবস্থান, পাকিস্তানের জঙ্গি সামরিকবাদের ছবি তুলে ধরছেন তখন মোদিজি নির্লজ্জের মতো নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। সেটাই বিষয় আজকে, যশোদাবেন মোদির মাথায় সিঁদুরের কথা কে ভাববে?
হ্যাঁ, শুনতে কটু লাগলেও মমতা ব্যানার্জি সঠিক প্রশ্নটাই তুলেছেন, হ্যাঁ তিনি যে প্রশ্ন তুলেছেন তা দেশের প্রত্যেক নারীর প্রশ্ন। মোদিজি এই এক জঘন্য নার্সিসিস্ট, আত্মমগ্ন মানুষ, ক্ষমতায় আসা অবধি আমি আমি আমি ছাড়া কিছুই করেননি, সেই মানুষটা যখন পুরোদস্তুর সামরিক পোশাক পরে সেই ছবিকে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করেন তখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে অপারেশন সিঁদুর দেশের মধ্যে আসলে মোদিজির রাজনৈতিক প্রচারেরই এক অঙ্গ।
আরও পড়ুন: Aajke | দিলীপ ঘোষ দল থেকে বাদ পড়ছেন?
আসলে হয় কী, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ততা আসলে এক ধরনের অসুখ, খুব নতুন কিছুও নয়, আপনার চারপাশে অনেকেই আছে। হিমালয়ের কথা বলুন, ইন দ্য ইয়ার ৬৫, আমি গিয়েছিলাম গোমুখ, সে কী বলব, আমাকে দেখে এক সন্ন্যাসী বললেন, তু তো বেটা সাধক হ্যায়…। বিজ্ঞানের কথা বলুন, জগদীশচন্দ্র বোসের নিজের ভাইপোর ছেলের বউ ওনার কীরকম আত্মীয় বলে দেবেন, অসুখের কথা বললে তো কথাই নেই, কবে কোন ডাক্তার ওনাকে বলেছিলেন, আপনার চিকিৎসা করতে আমার লজ্জা করে, আসলে মেডিক্যাল সায়েন্সটা আপনি যেরকম বোঝেন… কুছ ভি। যা বলবেন, সেটা আমিতে শেষ হবে। এদিকে আমাদের সংবিধানের প্রিঅ্যাম্বল শুরু হচ্ছে উই দিয়ে, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বক্তব্য শুরু করেন আই দিয়ে, আমি আমি, আমি, যেন হীরক রাজার দেশের সেই জাদুকর। আর এই চরম আত্মমগ্নতা, নার্সিসিজমের সঙ্গে রয়েছে মিথ্যে, প্রায় একজন প্যাথোলজিক্যাল লায়ার, মিথ্যে ওনাকে বলতে হয়, বলতেই হয়। সব বিষয়ে মিথ্যে, প্রতিটা বিষয়, নিজের ছোটবেলা থেকে পড়াশুনো থেকে, পরিবার, আত্মীয় পরিজন থেকে স্ত্রী পর্যন্ত। অন্তত দুটো নির্বাচনের এফিডেভিটে উনি জানানইনি যে উনি বিবাহিত, ভাবা যায়, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিবাহিত? কলম ফাঁকা। পড়াশুনো তো জানাই আছে, জীবিত এই প্রথম কারও স্কুল জীবনের বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ পাওয়া যায় না, কলেজের পাঠ্য বিষয়ের খোঁজ পাওয়া যায় না, বিশ্বের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যাঁর ৩টে জন্মদিন, জানা নেই কোনটা পালন করা হবে! এবং তাঁর এই নির্লজ্জ আচরণ নিয়ে কতদিন চুপ করে থাকা যায়, কাজেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্কেবারে ঠিক জায়গাটা ধরে টান দিয়েছেন। হ্যাঁ, হিন্দু ধর্মে সিঁদুরদান করেন পুরুষ, আর তারপর সেই সিঁদুরের মর্যাদা রাখার কথা দু’জনের। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজেকে ১০০ শতাংশ সাচ্চা হিন্দু প্রমাণিত করার জন্য খান পঞ্চাশেক ক্যামেরার সামনে গলা জলে ডুব দেন, হিমালয়ের গুহায় গিয়ে ধ্যান করেন, বিবেকানন্দ রকে গিয়ে নৌটঙ্কি করেন সেই তিনি সিঁদুরের মর্যাদা রাখার কথা ভাবেন না কেন? এমনকী তাঁর এই বিয়ের কথাও তিনি আসলে চেপে যেতে চেয়েছিলেন, পাকেচক্রে তা বের হয়ে এসেছে। কাজেই প্রশ্ন তো উঠবেই নিজের স্ত্রীর মাথার সিঁদুরের মর্যাদা যদি না রাখতে পারেন, তাঁর মুখে এই ভাটের সিঁদুর উপাখ্যান আমরা শুনব কেন? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যে নরেন্দ্র মোদি নিজের বিয়ে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, যে নরেন্দ্র মোদি নিজের স্ত্রীকে বিয়ের পরে ত্যাগ করেছেন, যে নরেন্দ্র মোদি নিজেই সিঁদুরের মর্যাদা রাখেননি, তাঁর মুখে এই সিঁদুর সিঁদুর গল্প আমরা শুনব কেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
রামকৃষ্ণের চেয়ে বড় সন্ন্যাসী কে আছেন? তিনি মারা যাবার আগে সারদা মা-কে বলেছিলেন, নরেন আর তার গুরুভাইরা রইল, ওরাই তোমার দেখাশুনো করবে। হ্যাঁ, তিনি তাঁর আসন্ন মৃত্যু নিয়ে নয়, চিন্তিত ছিলেন তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণ নিয়ে, সেই উদ্বেগ কাটাতেই তিনি বলেছিলেন ওই কথাগুলো। বিবেকানন্দ, এক্কেবারে শেষ কিছু মাস ধরে তাঁর মায়ের বসতবাটির জন্য আইনি লড়াই লড়ছিলেন। ক্ষেত্রীর রাজার কাছে আবেদন করেছিলেন যাতে ওনার মা কেও কিছু মাসোহারার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। হ্যাঁ ওনারাও সন্ন্যাসী ছিলেন, অমানুষ নন। যিনি তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর খোঁজ রাখেন না, চেপে যেতে চান সেই বিয়ের কথা। সেই মানুষ যখন সিঁদুর ইত্যাদির কথা বলেন তখন বুঝবেন আদপে সে ঠগবাজ, মানুষ ঠকাচ্ছে।