মাত্র ক’দিন আগেই রাজ্যজুড়ে সে কী কান্না, এই মমতা বেগম ক্ষমতায় আছে তাই রাজ্যের হিন্দুরা বিপন্ন। কোন হিন্দুরা? সেই হিন্দুরা যারা নাকি আর কিছুদিনের মধ্যেই এই বাংলাতে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে, এক্কেবারে বাংলাদেশের মতো, তখন তোমার শাঁখাপলা কেড়ে নেবে ওই মুসলমানের দল, হিন্দু খতরে মে হ্যায় আর তাই দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। একথা সত্যিই যে দুজন হিন্দুকে নৃশংসভাবেই খুন করা হয়েছিল ওই সামশেরগঞ্জে, আবার একথাও ঠিক যে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল একজন মুসলমান যুবকও। একথা ঠিক যে এক তৎপর পলায়ন আমরা দেখেছিলাম, সেই পলায়নের আগেই তাদের জন্য থাকা খাওয়ার জায়গাও তৈরি হয়েছিল, সেটাও দেখেছিলাম, হতেই পারে, হিন্দু ভাই বোনেরা পালিয়ে আসছে, জায়গা তৈরি করে রাখো, ইন অ্যাডভান্স। আবার এটাও দেখেছি যে প্রায় সমস্ত মানুষজন আবার ফিরে এসেছেন, হাতে হাত ধরে শান্তি বজায় রাখার জন্য রাস্তায় হিন্দু-মুসলমান। সেকুলার শব্দে যাঁদের চুলকানি হয় তাঁরা দেখেছেন সেই ছবি, শামিরুল ইসলাম হিন্দু মা বোনেদের ফিরিয়ে আনছে গ্রামে? উমর খালিদের সংবিধান হাতে ধরে নতুন ভারত গড়ার শপথে যাঁদের গা জ্বলে, তাঁরা দেখেছেন ওই সামশেরগঞ্জের আশপাশ থেকে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার জন্য গ্রেফতার হয়েছে বহু মুসলমান, বহু হিন্দুও, আসলে তারা কেউ না মুসলমান, না হিন্দু, তারা দাঙ্গাবাজ, দাঙ্গা করতে নেমেছিল। না, এসব তাঁদের বোধেবুদ্ধিতে কুলোবে না, যাঁরা নামের পিছনে খান দেখলেই টেররিস্ট ভাবেন, যাঁরা উমর খালিদের মতো নির্দোষ একজন ভারতীয়কে উগ্রপন্থার সঙ্গে জুড়ে দেন। তো এসব কথা কেন? কারণ আমরা দেখলাম ২০ মিনিটের অপারেশনে ২৭ জনকে খুন করল, টেররিস্টরা, কীভাবে? গোটা কাশ্মীরে দু’ পা ফেললে একজন করে বন্দুক, একে ৪৭, কার্বাইনধারী মিলিটারি দেখা যায়, সেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীর সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সামরিক জংলা পোশাক পরে চলে এল, আশ্রয় নিল রাতে, তারপর বেছে বেছে খুন করল হিন্দুদের। পুরোটা মিলিটারি ইন্টলিজেন্স ফেলিওর, পুরো দায় স্বরাষ্ট্র দফতরের, স্বাভাবিকভাবেই আঙুল তো উঠবেই মোদি-শাহের দিকে। কিন্তু তার আগেই কিছু মাইনে দিয়ে পোষা ডালকুত্তার দল টার্গেট করছে ধর্মনিরপেক্ষতাকে, কেন জানা নেই জেলের মধ্যে গত ৪ বছরেরও বেশি জেলে থাকা উমর খালিদকে। চোখেই পড়ছে না যে টোটাল ইন্টলিজেন্স ফেলিওর হয় ইচ্ছে করেই, না হলে ওভার-কনফিডেন্সের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। সেটাই বিষয় আজকে, মুর্শিদাবাদে হিন্দু খুন, মমতার পদত্যাগ চাই, ২৭ জন খুন, কে পদত্যাগ করবে?
আমাদের প্রথম প্রশ্ন তো এটাই যে স্বরাষ্ট্র দফতর কী করছিল? সীমান্তের ভিতরে তিনস্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেঙে নিরীহ পর্যটকদের উপর এতবড় হামলা হল কী করে? কোন কোন জায়গাতে ফেলিওর? জানা যাবে কি? না, জানা যাবে না, ঠিক যেমন এখনও আমরা সেই কবে পুলওয়ামার ঘটনায় ইন্টলিজেন্স ফেলিওরের কোনও খবর জানি না। এনআইএ-র কাজটা কী? বাজি কারখানায় ব্লাস্ট হলে সেখানে এসে রাজনীতির চুলোয় ধোঁয়া দেওয়া? সন্দেশখালিতে সেই রোবট নাচানো? শুধু বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে ঘুরে ঘুরে বিরোধী নেতাদের ফাঁসানো?
আরও পড়ুন: Aajke | কোন পথে শিক্ষকদের এই যোগ্য-অযোগ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব?
মণিপুরে প্রায় দু’বছর ধরে জাতি দাঙ্গা চলছে, কাশ্মীরে জঙ্গিরা নিরীহ পর্যটকদের প্রায় বিনা বাধায় গুলি করে মারছে, আর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোকাল ট্রেনের সফর চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলা দখলের জন্য। ঘটনা ঘটলেই তারপর নহি ছোড়েঙ্গে, নহি ছোড়েঙ্গে, আর কতদিন? ওয়াকফ আইন নিয়ে সারা দেশ যখন উত্তাল তখন কীভাবে সেই রাজ্য যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান মানুষজনের বাস, সেই রাজ্যে যেখানে উগ্র জঙ্গিদের আক্রমণের সম্ভাবনা সবসময় বেশি সেখানে এভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হল কোন স্বার্থে? নাকি এর পিছনে আরও কোনও গভীর ষড়যন্ত্র আছে? মানুষ জানবে কী ভাবে? মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স, প্যারা মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স সারা বছর অ্যাক্টিভ থাকে সীমান্তবর্তী কাশ্মীরে, এক পা চললেই মিলিটারি, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হচ্ছে, ইজরায়েল থেকে নতুন নতুন আড়ি পাতার যন্ত্র আসছে সেগুলো কি বিরোধী দলনেতা আর বেয়াড়া বিচারপতিদের জন্য বরাদ্দ আছে? তা না হলে একটা ডিপার্টমেন্টে মিনিমাম ইনপুট নেই? সব একসঙ্গে ফেল হল কীভাবে?? ২০২১-এ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ২.৬৬ শতাংশ, ২০২২-এ সেটা ২.২২ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ সালে সেটা ১.৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট ক্রমশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার! কার ভরসায় এটা করল কেন্দ্র ? গত ৩ বছরে রেগুলার আর্মিতে কোনও নিয়োগ হয়নি শুধু মাত্র গত বছর ১৩০০০ অগ্নিবীর মানে সিভিক সেনা নিয়োগ হয়েছে ! এই মুহূর্তে দেশের পদাতিক সেনাতে শূন্যপদ ১ লক্ষ ৩৬ হাজার, নৌ বাহিনীতে শূন্যপদ ১২৪২৮, বিমান বাহিনীতে ৫৭২৩ এছাড়াও প্রায় ৬০০০ মতো কমান্ড অফিসার পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে ! ওদিকে এমপিদের মাইনে বাড়ানো হল, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন এক কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে, আর স্রেফ বেড়াতে গিয়ে মানুষ মরে যাবে? আর দেশ জুড়ে সেই হানাদারির পরে কাঠগড়াতে তোলা হবে লিবারালদের? ধর্মনিরপেক্ষতাকে? কোন বিরাট বৈঠক সারতে অমিত শাহ এই এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়েছিলেন শ্রীনগরে? আমাদের বন্ধু সাংবাদিক ছ’দিন আগেই লিখেছিলেন, বঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আগামী ২৩ ও ২৪ একাধিক কর্মসূচি ছিল। সব বাতিল। অনিবার্য কারণে স্থগিত। দিল্লির ঘটনা পরম্পরা কেমন কেমন ঠেকছে। গত সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, জগৎ প্রসাদ নাড্ডা। রাতে মোদি একা গেলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেই সময় নাড্ডার বাড়িতে বসে রইলেন রাজনাথ, অমিত। ঘটনাচক্রে দুজন প্রাক্তন আর একজন বর্তমান বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি মোদির ক্যাবিনেট কোলিগ। আর এক ভূতপূর্ব সভাপতি নীতিন গড়করি যিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অবশ্য অনুপস্থিত ছিলেন। মোদির কাশ্মীর সফর ছিল, ১৯ এপ্রিল। তাও বাতিল। হ্যাঁ এগুলোরও তো উত্তর চাই। তাই না? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এখানে দুজন হিন্দুকে হত্যার পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ যারা দাবি করেছিল, তারা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে না কেন? শুনুন তাঁরা ঠিক কী বলেছেন।
এই বাংলায় মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরে বিজেপির আইটি সেল লিখেছিল, এই রাজ্যে নাকি হিন্দুরা বিপন্ন, এই রাজ্য থেকে নাকি মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই পালাতে হচ্ছে হিন্দুদের। সেই আইটি সেল আজ চোখ কপালে তুলে হযবরল বকে যাচ্ছে, তাদের তির এখন সেকুলারদের দিকে, গণতান্ত্রিক উদার মানুষজনদের দিকে যাঁরা বিশ্বাস করেন এই উগ্রপন্থা, এই দাঙ্গার কোনও জাত হয় না, কোনও ধর্ম হয় না, এরা দাঙ্গাবাজ, এরা টেররিস্ট, এদের মোকাবিলা করতে হবে দেশের হিন্দু-মুসলমানকে সঙ্গে নিয়েই, দেশের নাগরিক হিসেবেই আমরা রুখে দেব এই দাঙ্গা, এই উগ্রপন্থাকে।