অভিযোগ এলেই হই হই করেই নেমে পড়তে হয় সংবাদমাধ্যমকে, কিন্তু সেই নামা সব জায়গাতে সমান নয়। ধরুন সন্দেশখালিতে ধর্ষণের অভিযোগ কি প্রমাণিত? কোনও ভিডিও? কোনও ফার্স্ট হ্যান্ড প্রুফ? নেই তো? তাতে কী? জবাব চাই জবাব দাওতেই থেমে থাকেনি। তাদেরকে মাঝরাতে পিঠে বানানোর জন্য ডাকা হত গোছের চুটকি চালু হয়ে গেছে। আপাতত এ রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপি, কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু-মুসলমান অ্যাঙ্গল তো টানা হবেই। ওরা লুটে নিত মহিলাদের সম্ভ্রম, ওদেরকে তোষণ করত তৃণমূলের সরকার এবং মন্ত্রীরা, ওরাই দখল নিয়েছে সন্দেশখালির। চোখে চোখ রাখা সংবাদমাধ্যম যারা গঙ্গায় ডুব দিয়ে রাজ্যের ওয়েদার রিপোর্ট দেন, সেই তাঁরা তো ধর্ষণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণও দিয়েছেন। এবং সেই তাঁরাই এক সাংসদের শ’ খানেক ধর্ষণের ভিডিও বাজারে এসে যাওয়ার পরেও চুপ। সেই ধর্ষকের উপর দেশের প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ আছে জেনেও হালকা করে দুষ্টু ছেলের গল্প বলছিলেন, এখন তাও বলা বন্ধ করেছেন। সেই তাঁরাই আজ রাজভবনে কোকিলের ডাক ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছে না, তারা রাজভবনের গাছে আমে মুকুল আম হয়ে উঠল কি না তা নিয়ে একটা বড় ফিচার তৈরি নিয়েই নাকি ব্যস্ত। এমনটা তো হয়। চ্যানেল তৈরির আগেই চ্যনেলের নীতি নির্ধারণ হয় কাজেই একদা সিপিএম পলিটব্যুরো নেতার ব্লু আইড সাংবাদিক গায়ে নামাবলি লাগিয়ে রামমন্দির উদ্বোধনের নৌটঙ্কিতে শামিল হয়, হতে হয়, পাপী পেট কা সওয়াল হ্যায়। কিন্তু সে মিডিয়ার কথা থাক যারা আদতে সংবাদমাধ্যমই নয়, তাদের ভেঁপু বলাটাই সমীচীন হবে। চলুন একটু অন্য আলোচনায়। কিছু মহিলা বললেন, শেখ শাহজাহান আমাদের ধর্ষণ করেছে, তিনি জেলে। কিছু ভিডিও পাওয়া গেল যাতে খুব পরিষ্কার যে প্রজ্জ্বল রেভন্না একজন হ্যাবিচুয়াল রেপিস্ট, তো দল নাকি তাঁকে বহিষ্কার করেছে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাঁর ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট ছিল, ভিসাও লাগেনি, কিন্তু আপাতত দেশে ফিরতে পারবেন না, জিতলেও না। কিন্তু এই ঘটনাই যখন রাজভবনে হল, একজন মহিলা তিনি নিজেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনলেন তখন কী হল? সেটাই বিষয় আজকে, রাজভবনেও গোকুল পিঠের গপ্পো।
যে কথা বলছিলাম, একজন সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে যখন শ্লীলতাহানির অভিযোগ আসে, তখন তাকে প্রাইমারি সাসপেক্ট হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। একজন রাজ্যপালকে নিয়ে কী করা হবে? আমাদের রাজ্যপাল আবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের নাম থেকেই নিজের নামে বোস ব্যবহার করেন। অবশ্য সেটা কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় কারণ দাড়ি রাখলেই যে লোকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠবে তা তো নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীই পারেননি তো এই রাজ্যপাল আর কী করে হবেন, তাও আবার নেতাজি।
আরও পড়ুন: Aajke | কুণাল ঘোষ তৃণমূলের একজিমা
কিন্তু তিনি তো অভিযুক্ত, তাহলে কী হবে? রাজ্যপালের এক সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকে, তাঁকে গ্রেফতার করা যায় না বা তাঁকে সরাসরি এই মামলাতে জড়ানোও নাকি যায় না, মানে এই পর্যন্ত এটাই অনেকে বলছেন। এমনিতে রাজ্যপালদের নামে এমন অভিযোগ নতুন নয়, কেচ্ছাও নতুন নয়। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপালের কাছে রাজভবনে মাঝরাতে গাড়িতে করে একদল কল গার্ল আসতেন, তো সত্তরোর্ধ্ব তিওয়ারিজির সেসব ভিডিও সামনে আসার পরে তেনার জেল হয়নি কিন্তু তাঁকে সরানো হয়েছিল। একই কাণ্ড মেঘালয়েও হয়েছিল, ভি সম্মুগনাথন ছিলেন রাজ্যপাল, তাঁর বিরুদ্ধেও এরকম অভিযোগ এসেছিল, তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এবারে অভিযোগ এসেছে কখন? প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় আসছেন, রাজভবনেই থাকবেন, তার আগেই এই অভিযোগ এল। নি-জার্ক রিঅ্যাকশন দেখা গেল, আমাদের সি ভি আনন্দ বোস সঙ্গে সঙ্গেই রাজভবনে যাতে কলকাতা পুলিশ না ঢোকে তার নির্দেশ দিলেন, এবং জানা নেই কেন একজন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের রাজভবনে প্রবেশ নিষেধ বলে জানালেন। কেন? ওই একজন মন্ত্রীকেই বাছা হল কেন? তাঁর প্রবেশ নিষেধ কেন? না, রাজভবন থেকে এ নিয়ে কোনও ক্ল্যারিফিকেশন দেওয়া হয়নি। হেয়ার স্ট্রিটে মামলা দায়ের হয়েছে, তদন্ত চলছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, মহিলাদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ শাহজাহানকে যদি গ্রেফতার করা যায়, তাহলে রাজ্যপালের ক্ষেত্রে আলাদা বিচার কেন? শুনুন তাঁরা কী বলেছেন।
শেষ খবর বলছে সি ভি আনন্দ বোস বাংলা ছেড়ে নিজের দেশে পাড়ি দিয়েছেন। কাল পর্যন্ত অভিযোগ অসত্য, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলছিলেন যিনি তিনি এত তাড়াতাড়ি মাঠ ছাড়লেন কেন? দু’ নম্বর কথা হল, সারা রাত রাজভবনে কাটিয়ে নির্বাচনী প্রচারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সন্দেশখালির কথা তো বলছেন, রাজভবনের ঘটনায় মুখে তালা কেন? অবশ্য সে উনি ওনার শরিক দলের সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না নিয়েও কোনও কথাই বলেননি। তিন নম্বর কথা হল, রাজভবন এপিসোডের পরে আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আপাতত কিছুদিন আরামে ঘুমোতে পারবেন, একথা বলাই বাহুল্য।