জিতে যাবে, জিতবেই, জিতে যেতেও পারে এই কথাগুলো বা এই পারসেপশন, নির্বাচনের আগে এই ধারণা কিন্তু একটা রাজনৈতিক দলের জন্য খুউউব জরুরি। নিশ্চিত হারবে, বা জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই, এটা জানলে সেই রাজনৈতিক দলের ক্যারিশ্ম্যাটিক কিছু নেতা কোনও কোনও পকেট থেকে জিতে যান, আবার জিতবেই, জিতছেই এটা জানলে অখ্যাত, কেউ পোঁছে না প্রার্থীও চমকে দেয়, জিতে যায়, এমন বহু বহু উদাহরণ আছে। ২০১১-তে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মণীশ গুপ্ত বুদ্ধ ভট্টাচার্যকে হারিয়েছিলেন এই সূত্র মেনেই। নির্বাচনী পণ্ডিতেরা একে উইনেবিলিটি ফ্যাক্টর হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। ধরুন এই মুহূর্তে বিহারে, জিতে যেতেও পারে, জিতছে এরকম দুটো শক্তি আছে, মহাগঠবন্ধন আর উল্টোদিকে এনডিএ জোট। দারুণ ক্যাম্পেইন করেছেন, অত্যন্ত দামি কথা বলছেন প্রশান্ত কিশোর, কিন্তু ওই যে উইনেবিলিটি, জেতার সম্ভাবনা নেই বলেই তাঁর কয়েকজন প্রার্থী জিতে যাবেন, নতুন দল জনসুরাজ অনেকটা ভোট পাবে, ভোট কেটে কারও সুবিধে কারও অসুবিধে করে দেবে, কিন্তু জিতে যাবে? না এরকম হবে না। নির্বাচনের আগে জিততে পারে এই ধারণা তৈরি করাটা খুব জরুরি। যা এই রাজ্যে প্রথম তৈরি হয়েছিল ২০১৯-এ, লোকসভা ভোটের সময়ে, তৃণমূল বাহিনীর হাতে ঝাড় খাওয়া এক বিরাট সিপিএম কর্মী সমর্থকেরা ওই জিততে পারে এমন দলকে সমর্থন দিয়েছিল। সেই জিততে পারি অবস্থাটা মাটিতে না থাকলেও ২০২১-এ বিজেপির প্রচার ছিল ওই রকম, জিতেই যাব, অব কি বার ২০০ পার। কিন্তু ৭৭-তে আটকে গিয়েছিল সেই স্বপ্ন। ২০২৪-এ মানুষ আর সেই জিততে পারার বাওয়ালটা বিশ্বাসই করেনি। এবার ২০২৬ আসছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে ১০০টা মানুষ, সে বিজেপি সমর্থক হলেও বিশ্বাসই করে না যে বিজেপি জিতবে। কাজেই বিজেপি জেনে গেছে হবে না, তারা এখন অস্ত্র খুঁজছে, কোন অস্ত্র নিয়ে লড়লে অন্তত মুখরক্ষা হবে। সেই অস্ত্র খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল বিজেপি এবং বিজেপির সদ্য নিযুক্ত সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সেটাই বিষয় আজকে, হালকা হিন্দুত্ব, গাঢ় হিন্দুত্বের মধ্যে দুলছেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি।
হ্যাঁ, ২০২৬-এর আগে বিজেপি নতুন অস্ত্র খুঁজছে, খুঁজছে বলেই কোনও এক শিবিরের উপরে ভরসা করতে পারছে না, কোনও একটা স্লোগান, কোনও নির্দিষ্ট একটা রণনীতির উপরে ভরসা করতে পারছে না। পারছে না বলেই নির্বাচনের আগের বছরে শমীক ভট্টাচার্য হলেন সভাপতি।
আরও পড়ুন: Aajke | আদালতের রায়ে বন্ধ কলেজ ইউনিয়ন রুম, তারপর?
বিজেপি দিল্লি নেতৃত্বের হাতে কি অন্য কোনও অপশন ছিল? দিলীপ ঘোষকে ফেরালে শুভেন্দু শিবির বসে যেত, শুভেন্দু শিবিরের অগ্নিমিত্রা পল গোছের কাউকে আনলে পুরনো বিজেপির প্রায় কেউই আর মাঠেই নামতেন না। সুকান্ত মজুমদারকে রেখে দিলে সেই ২৪-এর হেরো টিম কে নিয়েই মাঠে নামছে বিজেপি, এটাই বলা হত। কাজেই এই বাংলাতে খুউউব সামান্য হলেও কবি সাহিত্যিক বা বইপাড়া মহলে শমীক ভট্টাচার্যের যাতায়াত আছে, যা দিলু ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে চিন্তাও করা যায় না। কিছুটা হলেও মাথায় থাকলেও শমীকের মুখে ওই ঘৃণাভাষণ নেই, যা অনর্গল বেরিয়ে আসে দিলু ঘোষ বা শুভেন্দুর কথায়। কাজেই এক মডারেট সফট হিন্দুত্বকে কি নিয়ে এগোতে চায় বিজেপি? সমস্যা হল এই চূড়ান্ত হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের আবহে সেটা কতখানি কাজ করবে? আবার এক্কেবারে হিন্দু ভোটেই জিতে যাবে বিজেপি, সেই স্বপ্ন বাস্তবের ধারেকাছেও নেই। কাজেই শমীক ভট্টাচার্য আজ এক কথা বলবেন, কাল অন্য কথা বলবেন, এখনই যা বলবেন পরক্ষণেই তার উলটো কিছু বলবেন। আসলে বাংলার মাটিতে এক্কেবারে অনুপযুক্ত বিজেপির এই রাজনীতিকে শুভেন্দু দিলীপ ঘোষ দেশভাগ আর তার পরবর্তী ঘৃণার আবহে নিয়ে যেতে চাইছিলেন, তা কাজ করেনি, বা সেই কাজে খানিক হাত দেওয়ার পরে তা থমকে গেছে, আপাতত এক ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা। তার উপরে পার্সেপশন, মানে মানুষের ধারণা ২০২৬-এও হবে না। এতে কি দলের মাথারা বসে যাবেন, না তেমনটা হবে না। কিন্তু বেশ কিছু মধ্যের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন, দলের খবরাখবর বের হয়ে যাবে, তলার সারিতে বাম দল, বিশেষ করে সিপিএম থেকে আসা কর্মীরা এবারে শিবির পাল্টানোর কথা ভাববেন। আর সামনে গত এক দশকের মধ্যে সবথেকে খারাপ ফলাফলের আশঙ্কায় নতুন সভাপতি আরও নার্ভাস হবেন। তিনি এখনই ভুল বকছেন, নিজের দলের সবাইকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করাতে পারছেন না, সিপিএম-এর কর্মীদের কাছে আহ্বান করছেন। সব মিলিয়ে গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকের পেন্ডুলামের মতো টিক টক, টিক টক। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, শমীক ভট্টাচার্য নিজের দলের সব নেতাদের এক জায়গাতে এনে দাঁড় করাতে পারছেন না, তিনি সিপিএমকে ডাক দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট তৈরি করতে। তিনি কি নার্ভাস? তিনি কি খেই হারাচ্ছেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
কপাল কপাল কপালের নাম গোপাল, কথাটা আমি মানি না, কিন্তু এই কথাটা সেই অর্থে সবথেকে বেশি ভালো খাটে দিলীপ ঘোষের উপরে। যে সময়ে সিপিএম-এর র্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল তৃণমূল বাহিনীর সামনে অসহায় হয়ে বিজেপিকে আঁকড়ে ধরেছিল, ঠিক সেই সময়ে তিনি দলের দায়িত্বে এসেছেন। কিন্তু কেবল কপাল নয়, খানিক পুরুষকারও ছিল, তিনি হেক্কড়বাজের মতোই গলা চড়িয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, ওই অসহায় সিপিএম কর্মীরা ভরসাও পেয়েছিল। আজ সেই নদীতে ভাটা এসেছে, ২০২৬-এর আগে সেই জোয়ারের জলে ঢুকে পড়া মানুষেরা বেরিয়ে যাওয়ার মুখে, এই প্রস্থান কি আটকাতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্য? আটকাতে পারলে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হবে, না আটকাতে পারলে সিরাজের পতন ও মূর্ছা অনিবার্য।