হ্যাঁ, ২৭ জন নামের মধ্যে একজন সইদ আদিল হুসেন শাহ আছেন, একজন মুসলমান মানুষকেও খুন করা হয়েছে। আচ্ছা ২৫ জন হিন্দুও তো মারা গেছে, তাহলে আলাদা করে একজন মুসলমানের কথা বলছি কেন? আর বললেই মাকু, নকু, সেকুলার বলে গাল পাড়বেন তো? বলছি কারণ তিনি মানে ওই আদিল অনায়াসে অভ্যস্ত গলায় কলমা পড়েই তো বেরিয়ে যেতে পারতেন ওই অসমের দেবাশিস ভট্টাচার্যের মতো। বিপদে পড়ে তিনি বুঝেছিলেন কলমা পড়েই তাঁকে বাঁচতে হবে, পড়েছিলেন। বেশ করেছিলেন। তো আদিলের মাথায় কার দিব্যি ছিল যে সে কলমা না পড়ে একজন উগ্রপন্থীকে খালি হাতেই আটকাতে গিয়েছিল? এবং হ্যাঁ, জানা যাচ্ছে অন্যদের চেয়ে তাঁর গায়ে গুলির চিহ্ন বেশি। হ্যাঁ, তিনি একজন মুসলমান টেররিস্ট না, একজন পাক টেররিস্ট, একজন উগ্রপন্থীর মুখোমুখি হয়েছিলেন কাশ্মীরিয়ত বাঁচানোর জন্য। সেই জন্য তিনি একটা স্যালুট এক্সট্রা স্যালুট ডিজার্ভ করেন। যখন কোনও এক বরাহনন্দন প্রতিদিন আমাদের এই বাংলাতে বসে সেকুলারিজম, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে কথা বলছে, সেকুলারদের এই দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, সেই তিনিও মাথায় একে ফর্টি সেভেন ঠেকালে জানলে এবং পারলে প্যান্ট ভিজে গেলেও কলমা পড়তেন, আদিল পড়েননি, তিনি একে ফর্টিসেভেন কাড়তে গিয়েছিলেন, তিনি কাশ্মিরিয়তের কথা মনে রেখেই ট্যুরিস্টদের বাঁচাতে গিয়েছিলেন। সেই আদিলের হত্যাকারীদের খোঁজে গিয়ে এই বাংলার ছেলে, এক জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ মারা গেছেন, শহীদ হয়েছেন, হ্যাঁ তাঁকেও এক্সট্রা স্যালুট তো দিতেই হয়। চারিদিক থেকে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেব, মোল্লার বাচ্চাদের পিটিয়ে মারো, আমাদের মুসলমান ভোটের দরকারই নেই, মুসলমানরা দেশবিরোধী, এসব শোনার পরেই তিনি দেশ বাঁচাতে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করেছেন, এবং শহীদ হয়েছেন। সেটাই বিষয় আজকে, স্যালুট, ঝন্টু আলি শেখ। স্যালুট, সইদ আদিল হুসেন শাহ।
মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরণ উপত্যকায় যখন এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল জঙ্গিরা, চোখের সামনে একের পর এক পর্যটককে গুলি করা হচ্ছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চলছে একে-৪৭। বৈসরণ ভ্যালিতে চলছে নির্মম হত্যালীলা। জানা যাচ্ছে সেই সময়েই এক সন্ত্রাসবাদীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই এলাকায় ঘোড়া চড়ানোর সহিস আদিল হুসেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে রেয়াত করেনি জঙ্গিরা। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান সইদ আদিল হুসেন শাহ। সইদের পরিবারে আছেন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং সন্তান। পহেলগাওঁয়েই তাঁদের বাস। পরিবারের একমতে রোজগেরে ছিলেন তিনিই।
আরও পড়ুন: Aajke | বাংলায় হিন্দু খুন, মমতার পদত্যাগ চাই, কাশ্মীরে ২৭ জন খুন, কে পদত্যাগ করবে?
ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তাঁরা বাবা। না, এখনও তাঁর বন্ধুরা, পরিবারের লোকজন ফান্ড রেইজিংয়ের কাজ শুরু করেননি। সইদের বাবা বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে যেই যুক্ত থাকুক না কেন, তাকে পরিণতি ভোগ করতেই হবে।” মানে কী? তিনি সেকুলার? তিনি হয়তো জানেনই না কথাটার মানে কিন্তু জানেন যে উগ্রপন্থার কোনও ধর্ম হয় না, হয় না বলেই পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়া এক পিতা এক পাক উগ্রপন্থীর গুলিতে হারালেন তাঁর সন্তানকে। হ্যাঁ, ইসলামিক টেরর নয়, পাক টেরর। আর মাত্র দু’দিন পরেই জম্মুর উধমপুরে জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়েই বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে অভিযানে যায় সেনা এবং পুলিশের যৌথবাহিনী। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালানোর সময় বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে জঙ্গিরা। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে এক জওয়ান আহত হন। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। নিহত জওয়ানের নাম ঝন্টু আলি শেখ। তিনি ৬ প্যারা এসএফ-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি আমদের বর্ধমানের সন্তান, তিনিও শহীদ হয়েছেন। হ্যাঁ আজ নয় সেই কবে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল দেশের মানুষ, তাঁর মধ্যে তো ছিলেন মুসলমানরাও, ছিলেন তো আশফাকুল্লা, ছিলেন তো আবুল কালাম আজাদ, ছিলেন তো খান আব্দুল গফফর খানের মতো নেতারা। কারা ছিল না? এই বরাহনন্দন জোকার সাংবাদিক অ্যাঙ্কার যাদের হয়ে দালালি করছে, সেই আরএসএস, হিন্দু মহাসভার কেউ ছিল না ওই স্বাধীনতা সংগ্রামে, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারা মুচলেকা দিয়েছিল, আজ সেকুলারদের দেশ থেকে তাড়ানোর কথা বলছে। তারপরে দেশভাগ হয়েছে, যাঁরা থেকে গেলেন, তাঁদের কাছে তো অপশন ছিল পাকিস্তানে চলে যাওয়ার, যাননি কারণ তাঁরা এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, হ্যাঁ একজন হিন্দুর কাছে কোনও অপশন ছিল না, একজন মুসলমানের কাছে ছিল, তারপরেও সে এই দেশে থেকেছে, কারণ তার মনে হয়েছে এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশেই তাঁর থাকা উচিত। তারপর? কাশ্মীরের লড়াই, ৬২-তে চীন-ভারত যুদ্ধ, ৬৫-তে পাক-ভারত যুদ্ধ, ৭১-এ পাক-ভারত যুদ্ধ, শহীদ বীরেদের তালিকা দেখুন, হ্যাঁ সেখানেও আমাদের দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানেরা আছেন, ক্যাপ্টেন আব্দুল হামিদের মতো পরমবীর চক্র পাওয়া শহীদ আছেন, তিনি লড়েছিলেন পাক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নয়। মেজর জাকি, মেজর রফি খান লড়েছিলেন বাংলাদেশ যুদ্ধে, সেসব আমরা ভুলে যাব? ইসলাম মানেই টেররিস্ট? এসব শেখাচ্ছে কারা? যারা দেশকে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করতে চায় সেই আরএসএস-বিজেপি। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, এই উগ্রপন্থী হামলায় একজন কাশ্মীরের বাসিন্দাকেও হত্যা করেছে পাক টেররিস্টরা, তিনি ট্যুরিস্টদের বাঁচাতে গিয়েছিলেন। একজন বাংলার ছেলে জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ মারা গেছেন সেই উগ্রপন্থীদের গুলিতে। তাহলে লড়াইটা কি ইসলামের বিরুদ্ধে? নাকি আসলে পাক টেররিস্টদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
হ্যাঁ, এই দুই মুসলমান ধর্মের মানুষ একটা কথা সাফ বুঝিয়ে দিলেন যে ইসলামকে টেররিজমের সঙ্গে জুড়ে দেবেন না, বলুন পাক সন্ত্রাস, বলুন পাকিস্তানি উগ্রপন্থী। যখন আমেরিকা বোমা ফেলে ইরাক ধ্বংস করে, তখন আমরা বলি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী হামলা, বলি আমেরিকান টেররিজম, বলি না খ্রিস্টান টেররিজম। যখন চীন উইঘুর মুসলমানদের মারে তখন বলি চীনের অগণতান্ত্রিক আচরণ, বৌদ্ধদের অগণতান্ত্রিক আচরণ তো বলি না। যখন ইজরায়েল গাজা স্ট্রিপে বোমা মেরে মাটিতে মিশিয়ে দেয়, তখন আমরা বলি ইজরায়েলের আক্রমণ, বলি না ইহুদি টেররিজম, শ্রীলঙ্কাতে তামিল নিধনকে তো বৌদ্ধ টেররিজম বলি না। তাহলে পাকিস্তানের পাঠানো টেররিস্টদের পাকিস্তানি টেররিস্ট না বলে ইসলামিক টেররিস্ট কেন বলব?