দুটো দিক থেকে মমতার সরকারের উপরে আক্রমণ আসছে, আর তা ক্রমাগত। এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই যে এগুলো খুব বিচ্ছিন্ন ব্যাপার, একে অন্যের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, বরং উল্টোটা, এখন আক্রমণ অনেক সংহত, অনেক প্ল্যানড। তার পিছনে এক বিরাট প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে আর তার জন্য বিশাল রিসোর্স দরকার, তার জোগান দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য আপাতত একটাই, বাংলা থেকে মমতা হাটাও, ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম, দাবি এক দফা এক, মমতার পদত্যাগ। একটা ধর্ষণ-খুন, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। তো ভাইসকল জাস্টিস মানে ন্যায় কীভাবে মিলিবে? কেন ওই যে দাবি এক দফা এক মমতার পদত্যাগ। আদালতের রায়, ৬০০০-এর মতো অযোগ্যদের মাইনের টাকা ফেরত দিতে হবে, কিন্তু চাকরি যাবে ২৬ হাজারেরই। কেন? অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্যদেরও চাকরি যাবে কেন? সে আলোচনা গেছে গড়ের মাঠে ঘাস কাটতে। আপাতত দাবি এক দফা এক, মমতার পদত্যাগ, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। বেশ কিছুদিন আগে আপনাদের জানিয়েছিলাম কোনও নিরপেক্ষতার ভনিতা নয়, আমরা সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরতন্ত্রের বিরোধী, আমরা দেশের বহুস্বর আর সংবিধান নিয়েই বাঁচতে চাই। কাজেই এই অন্ধকার সময়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার যে কোনও পরিকল্পনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে, সেটা আমাদের দায়িত্ব। এই দুঃসময়ে কারা মানুষের পক্ষে, কারা দেশের পক্ষে, সংবিধানের পক্ষে কারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় রাখার পক্ষে, কারা বাংলা সংস্কৃতির পক্ষে, কারা আমার এই বাংলার মানুষের পক্ষে তা সাফ জানানোর সময় এসেছে বইকী। সেই দায় থেকেই জানাচ্ছি যে এই বাংলার অন্তত চার জন ইউটিউবারের জন্য নাকি ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাঁরা নাকি বরাতও পেয়ে গেছেন এবং কাজে নেমেও পড়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় দু’জন করে ইউটিউবার কাজ করবে। কাজ তো সোজা, ঘৃণা ছড়াও, মিথ্যে বলো, অপপ্রচার করো। সেদিন বলেছিলাম, কাজ শুরু হয়ে গেছে, হ্যাঁ সত্যিই কাজ শুরু হয়ে গেছে, জেল ফেরত প্রবীণ ‘এখনও নাকি সাংবাদিক’, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন জোগাতেন এখন সাংবাদিক, অশিক্ষিত আরামবাগ চিকেন থেকে ইউটিউবার মাইতিরা মাঝমাঠে নেমে খেলতে শুরু করেছেন। এবং খেয়াল করুন দু’ দিক থেকে সেই খেলাটা শুরু হয়েছে, একটা হচ্ছে ইস্যু তৈরি করো, একদল আদালতে চলে যাও, মামলার পর মামলা করে ব্যতিব্যস্ত করো সরকারকে। অন্যদিকে রাস্তায় নামো, আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো। সেটাই বিষয় আজকে, পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেব, আইন দিয়ে আটকে দেব।
শিক্ষকদের দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে, তা কি হুউউউস করে উড়িয়ে দেওয়া যায়? না যায় না। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জেলে, তাঁর বান্ধবীর বাড়ি থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বের হয়েছে, তাঁর বিশাল সম্পত্তির কথা সামনে এসেছে। তদন্ত চলছে। তো সেই নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে, রাজ্য সরকার বা বলা ভালো মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। অন্য খালি পদে যাতে লোক নেওয়া যায়, মামলা করো, সিডিউল কাস্ট তালিকাতে টেকনিক্যাল কিছু ভুল আছে, মামলা করো। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে ২৬ হাজারেরই চাকরি যাবে, কিন্তু চিহ্নিত হাজার পাঁচ কি ছয় অযোগ্যদের মাইনে ফেরাতে হবে। তাহলে কেন সব্বার চাকরি যাবে?
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দু জানতেন, লাঠিচার্জ হবে? কেন চলল লাঠি?
এবারের মামলাটা কিন্তু আর বিকাশ ভট্টাচার্য বা ন্যাড়া বাগচিরা করছেন না, মামলার আগেই ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মিটিং ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী, কেন? একটাই কারণ ২৬ হাজার সন্ত্রস্ত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে অভিভাবকের মতো বলা যে আমরা পাশে আছি। কেন বললেন আমরা পাশে আছি? কনটেম্পট অফ কোর্ট, আদালতের অবমাননা। কেন এক্ষনি, অর্ডার বের হওয়া মাত্র ২৬ হাজারের ছাঁটাই নোটিস জারি করলেন না? মানহানির মামলা ঠুকে দাও। ২৬ হাজার পরিবারের রাতে ঘুম নেই, এনারা সেই ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য আরও কী কী করা যায়, তার ব্যবস্থা করছেন। আর অন্যধারে? পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি, পেট্রল আন, আগুন লাগিয়ে দে। এরপরে পুলিশ যদি দাঁড়িয়ে থাকত, যদি আগুন জ্বলত, এই জেলফেরত ইউটিউবার ১৯৫৬ থেকে আজ অবদি হাজি বাজি কথা বলে বোঝাতেন এক অকর্মণ্য সরকার, পুলিশ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, কেন? কেন? লাঠি চালাল কেন? না আমি লাঠি চালানো বা লাথি মারা কোনওটাকেই সমর্থন করছি না, ইন ফ্যাক্ট যাদবপুর বা কসবা, কোথাও লাঠি চালানোকে সমর্থনের প্রশ্নই নেই। কিন্তু এক অবস্থা তৈরি হচ্ছে রাজ্যে যেখানে একদল বলছে পেট্রল আনো, আগুন জ্বালো। অন্যদল মামলা করেই পঙ্গু করে দিতে চায় সরকারকে। আর সেটা দু’ দিক থেকেই। বাম আর বিজেপির স্ট্রাটেজিটা কিন্তু এক, এতটাই এক যে দুজনের মধ্যে এক অলিখিত চুক্তি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, একের পর এক মামলা করে আর আন্দোলনের নামে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি করে, অবিরাম মিথ্যে প্রচার করে মানুষের রায়ে নির্বাচিত সরকারকে কি ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।
হ্যাঁ, আক্রমণ দু’ ধার থেকেই আসছে আর একই সুরে ভাসছে সেই দাবিদাওয়া আর পদ্ধতিগুলো। বাম আর দক্ষিণপন্থী বিজেপি যতটাই আলাদা দল হোক না কেন, আপাত দৃষ্টিতে আদর্শগত ফারাক যতটাই থাক না কেন, দুজনের এই কমন গোল হল মমতা। কেন? কারণ খুব স্পষ্ট। এই কালীঘাটের বস্তি থেকে উঠে আসা মহিলা সিপিএমের ৩৪ বছরের মৌরুসিপাট্টা ভেঙে দিয়েছে, সেই সর্বত্র এক দলের শাসন, নিয়ন্ত্রণের সুখ কেড়ে নিয়েছে। আর অন্যদিকে সবাই তো আপাতত পদানত। দক্ষিণ পরে দেখে নেবেন ওনারা, কিন্তু উত্তরে এই টিম টিম করে জ্বলতে থাকা ব্যারিকেডটা ভেঙে গুঁড়িয়ে না দিলে শান্তি নেই মোদি-শাহ, আরএসএস-বিজেপির। তাঁরা সেই তেঁএটে বাংলার মানুষদের শিক্ষা দিতে চায়, লক্ষ্য তাদের বাংলার গদি। হ্যাঁ, এইখানে এসেই দুই ভিন্ন মতাদর্শের দল মিলে গেছে একসঙ্গে।