“আপনি যত ইচ্ছে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিন, এটা নরেন্দ্র মোদির সরকার, বিজেপির সরকার। আমি বলে যাচ্ছি, অপারেশন সিঁদুর শেষ হয়নি।” হ্যাঁ, এই কথাটা আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্ডোরে কর্মিসভায় এসে বলে গেলেন। কতটা নির্লজ্জ হলে এই কথাগুলো বলা যায়? ঠিক এই মুহূর্তে সংসদে বিরোধী দলের সাংসদরা সরকারে ক্ষমতায় থাকা সাংসদদের সঙ্গে একসঙ্গে বিভিন্ন দেশে গিয়ে দেশের পক্ষে, পাক হানাদারির বিপক্ষে কথা বলছেন, যে দলের মধ্যে তৃণমূলের অন্যতম নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন সেই দলের নেত্রীকে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন মমতা ব্যানার্জি পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিচ্ছেন। একসময়ে খুনের দায়ে অভিযুক্ত এক তড়িপার ক্রিমিনালের মুখে এমন ভাষা অবশ্যই খুব অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু তিনি তো দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাঁর মুখে এই ভাষা? কেবলমাত্র ভোটের জন্য কতটা নীচে নামতে পারে এই বিজেপি দল? এখনও দেশের বিজেপি এবং বিরোধী দলের সাংসদরা বিভিন্ন দেশে ঘুরছেন, আর দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের সমর্থক বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন। আসলে এই বিজেপি দলের সমস্যা হল এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য করতে পারে না এমন কোনও কাজ নেই, দাঙ্গা লাগানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে যথেচ্ছ টাকাপয়সা খরচ করে, দল ভাঙিয়ে যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখল করাটাই ওনাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য। আর সেটা করতে গিয়েই বিষ ছড়িয়ে গেলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেটাই বিষয় আজকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাক উগ্রপন্থীদের পক্ষে: অমিত শাহ।
ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে শাহ বললেন, “কিছুদিন আগে পহেলগামে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের নির্দোষ নাগরিকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে পরিবারের সামনে হত্যা করেছে। আপনারা বলুন, পাকিস্তানের পাঠানো ওই সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়া উচিত কি না? মোদিজি অপারেশন সিঁদুর করে ঠিক করেছেন কি করেননি? আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছি, এয়ার স্ট্রাইক করেছি। এখন অপারেশন সিঁদুর করে পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে জঙ্গিদের হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করে দিয়েছি। কয়েকশো সন্ত্রাসবাদীকে মেরে ফেলা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: Aajke | যশোদাবেন মোদির মাথায় সিঁদুরের কথা কে ভাববে?
এর পরেই শাহ বলেন, “এতে দিদির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে।” অথচ সত্যিটা কী? তৃণমূল দল এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকে সরকারের প্রতিটা পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। দেশের মধ্যে তৃণমূলই প্রথম দল যারা কাশ্মীরের পুঞ্চে তাদের প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়েছে, তারপর সেখানে রাহুল গান্ধী গেছেন, তারপরে বিজেপি নেতৃত্ব। না, প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার সময় পাননি, তিনি আপাতত বাংলা বিহার নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত, সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনায়াসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পাকিস্তানি উগ্রপন্থার সমর্থক বলে দিচ্ছেন। আসলে রাজনীতিতে হতাশা একধরনের ক্রোধের জন্ম দেয়, এক অসম্ভব যুক্তি বোধহীন ক্রোধ, যার থেকে এই ধরনের কথাবার্তা বের হয়। আচ্ছা অমিত শাহজি, আপনি শিওর যে আমাদের রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের পক্ষে, তো আপনি, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বসে বসে কী উৎপাটন করছেন? কী ছিঁড়িতেছেন? কী বাঁধিতেছেন? বাংলার মানুষ আপনার এই বাচালতা সহ্য করবে মনে করেছেন? এক দল যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকায় ছিল, যারা ইংরেজদের দালালি করেছিল, সেই দলের এক নেতা আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে পাকিস্তানের সমর্থক বলে দাগিয়ে দিয়ে ভোটপ্রচার শুরু করছেন। তিনি বলেছেন, “আমি বাংলার মাতৃশক্তির কাছে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে অপারেশন সিঁদুরের উপর প্রশ্ন তোলা মমতাজিকে সিঁদুরের দাম বুঝিয়ে দিন। মা-বোনেরা বুঝিয়ে দিন, সিঁদুরের অপমান করার অর্থ কী!” সিঁদুরের অপমান? কে করেছে? গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলুন, সিঁদুরের মর্যাদা রক্ষা করতে, এ রাজ্যে আমরা সিঁদুরের দাম জানি, আর মাথায় রাখবেন, আমাদের দুর্গাপুজোয় সিঁদুর খেলার সময় বাজে বিসর্জনের বাদ্যি, হ্যাঁ, বাঙালি আগামী নির্বাচনের সময়ে এই অপমানজনক কথা মনে রাখবে, সেদিন আবার বিসর্জনের বাজনা বাজবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, অমিত শাহ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের পক্ষের একজন বলে অভিযোগ করেছেন, এ নিয়ে আপনাদের মতামত কী? এরকম একটা সময়ে যখন দেশের বিরোধী দলগুলো সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তখন সেই বিরোধী দলের অন্যতম নেতাকে নিয়ে এমন কথা বলা কি উচিত? শুনুন মানুষজন জবাবে কী বলেছেন?
আসলে ঠিক এই সময়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে, উঠছে যার জবাব অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের কাছে নেই। ১) যুদ্ধবিরতি কার নির্দেশে হল? ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন তাঁর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে একটা কথাও বলেননি। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন ৫টা রাফাল ধ্বংস করেছে পাকিস্তানিরা, দেশের বায়ুসেনা প্রধান সংখ্যা না বললেও মেনেছেন যে ক্ষতি হয়েছে। এদিকে এ নিয়ে এখনও সরকার একটা কথাও বলেনি, কিন্তু দেশের মানুষ তা জানতে চায়, সেটাও এক অসম্ভব চাপ তৈরি করেছে। আর এইসব প্রশ্নের মুখে খেই হারিয়ে অমিত শাহ যা মুখে আসছে তাই বলে দিলেন, মাথায় নেই, সামনেই নির্বাচন, এই সব কথার জবাব তখন মানুষ কিন্তু চাইবে।