আমার পরিচিত ডাক্তারবাবু ডঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত জানাচ্ছেন যে বেসন জাতীয় ভাজাভুজি আর শাকপাতা বেশি খেলে পেট গরম হতে পারে, যার ফলশ্রুতি গ্যাস, অম্বল, বুকজ্বালা, বদহজম। আর এসব অ্যাকিউট অবস্থাতে পৌঁছলে মানুষ ইরেলিভেন্ট কথাবার্তা, সম্পর্কহীন, যুক্তিহীন সংলাপ বলতে পারেন। আমি না এসব আমার ওই ডাক্তারবাবু বলছিলেন। তো উপায় অনেক আছে। প্রথমত মুখ বন্ধ করা, তারপর রহমানিয়া থেকে এক্কেবারে রাংয়ের মাংস এনে কচি পেঁপে দিয়ে পাতলা খোল দিয়ে সামান্য ভাত মেখে খেয়ে ঘুমোন। আর নিরামিশাষী হলে গ্যাঁদাল পাতার ঝোল আর ভাত খেয়ে শুয়ে পড়া। এবং ওষুধ কিছু খাবার আগে ডাক্তারবাবুকে যোগাযোগ করার কথা তিনি বলেছেন। এদিকে সমস্যা হল আমার কাছে অমিত শাহের ফোন নম্বর নেই। খুব কম মানুষজনের কাছেই আছে, আমি সেই লিস্টে নেই, কিন্তু খুব দরকার এই নিদানের কথা ওনার কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের দর্শকদের কারও সঙ্গে যদি দেশের এই ছোটা মোটাভাই অমিত শাহের যোগাযোগ থাকে, তাহলে এই অনুপানের কথা তাঁকে জানিয়ে দেবেন প্লিজ, কারণ আমি নিশ্চিত ওনার ওই গ্যাস অম্বল বুকজ্বালা বদহজম হয়েছে, উনি ভুল বকছেন, বলেছেন ২০২৬-এ বিজেপি তামিলনাড়ু আর পশ্চিম বঙ্গাল জিতবে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসুস্থ থাকুন তা আমি চাই না কাজেই ওই গ্যাঁদাল পাতার ঝোলভাতের ব্যবস্থা করা হোক। আর হ্যাঁ, সেটাই বিষয় আজকে। অমিত শাহের দিবাস্বপ্ন, ২০২৬-এ বাংলা দখল।
২০১৯, এ হঠাৎই এক বিরাট অগ্রগতি ৪০.২৫ শতাংশ ভোট আর ১৮টা আসন, বাকি ২০টা আসনে দু’ নম্বর জায়গাতে ছিল, তখন দলের সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ২০২৪ এ সেই দল ৩৯.০৮ শতাংশ ভোট আর ১২টা আসন পেল, ৬টা আসন কমল, দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে ২০১৯-এ তৃণমূল কত ভোট পেয়েছিল? ২০১৪-তে পেয়েছিল ৩৪ শতাংশ ভোট, ২০১৯ ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট, মানে ভোট বেড়েছিল, কিন্তু আসন কমেছিল। আর ২০২৪ সালে সেই ভোট আরও বেড়ে দাঁড়াল ৪৬.৯ শতাংশ। কমেনি।
আরও পড়ুন: Aajke | বঙ্গ বিজেপি নেতারা আপাতত একে অন্যকে ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করতে ব্যস্ত
কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বড় অভিযোগ তো ছিল, বিশাল পাহারাদারি নজরদারির ব্যবস্থা ছিল, ইন ফ্যাক্ট নির্বাচন কমিশন রীতিমতো এক পক্ষ নিয়েই মাঠে নেমেছিল। তবুও কেন বাড়ল তৃণমূলের ভোট আর বিজেপির ভোট কমছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ২০২৬-এর ভোটের ফলাফল। আচ্ছা তার আগে ২০১১, ২০১৬, ২০২১ বিধানসভার ভোটের ফলাফলটাও দেখে নিন। তৃণমূল কংগ্রেস ৩৮.৯৩ শতাংশ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) ৩০.০৮ শতাংশ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ৯.০৯ শতাংশ, অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক ৪.৮%, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল ৩.০%, বিজেপি ৪.০৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যান্যরা পেয়েছিল ১৪ শতাংশ ভোট। ২০১৬-র ছবিতে বিজেপির সামান্য বৃদ্ধি, তৃণমূল কংগ্রেস ৪৪.৯১ শতাংশ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) ১৯.৭৫ শতাংশ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১২.২৫ শতাংশ, ভারতীয় জনতা পার্টি ১০.১৬ শতাংশ, অন্যান্য ১৩.৯৩ শতাংশ। ২০২১-এ ছবিটা বদলে গেল, আসলে এই ছবি বদলেছিল ২০১৯-এই। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ৪৮.০২ শতাংশ ভারতীয় জনতা পার্টি ৩৮.১৫ শতাংশ, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) ৪.৭৩ শতাংশ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ২.৯৩ শতাংশ, অন্যান্য, ৬.১৭ শতাংশ। সবাই জানেন যে সিপিএম বা বামেদের ভোট কমেছিল, কিন্তু এটাও খেয়াল করুন যে অন্যান্যদেরও ভোট কমেছিল। মানে এক চূড়ান্ত পোলারাইজেশনের দিকে যাচ্ছিল রাজ্যের রাজনীতি। আজ কিন্তু বিভিন্ন কারণেই সেই চূড়ান্ত মেরুকরণে কোথাও একটু ঢিল লেগেছে। এবং সেই জায়গাতে ২০২৬-এ বামেরা সামান্য হলেও ভোট বাড়াতে পারে। কেন বলছি? এই কারণগুলোর কথা আগেও বলেছি, তবুও আবার বলি, যাঁরা পারবেন ওই ছোটা মোটা ভাইকে এই কথাগুলো অনুবাদ করে শোনাবেন। আপাতত বাংলা বিজেপিতে প্যারালাল চারটে শিবির কাজ করছে, চার শিবিরের মধ্যের দ্বন্দ্ব দেখার মতো। শুভেন্দু, সুকান্ত, দিলীপ আর শমীক এই চার মাথার বিভাজন, চারজনের মধ্যে জায়গা বুঝে হাত ধরা আর ছাড়া, মানুষকে, মানে যে মানুষ মনেপ্রাণে তাদের নয়, কেবল পিঠ বাঁচাতে, সাইক্লোন থেকে বাঁচতে যাঁরা রিলিফ ক্যাম্পে এসে হাজির, তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত যে ন্যারেটিভটা সেট হয়েছিল যে বিজেপিই পারবে তৃণমূলকে হারাতে, সেখানে মানুষের আপাতত বিশ্বাস, বিজেপি আর যাইহোক তৃণমূলকে হারাতে পারবে না, বা বিজেপি তৃণমূলকে হারাতে চায়ও না, এমনকী দলের প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় এই কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন। ২) উপর থেকে তলার সারির কর্মী নেতারা এই চার শিবিরে স্পষ্টভাবে না হলেও তিন শিবিরে বিভক্ত। যাদের একসঙ্গে এনে দাঁড় করানোর মত নেতা নেই। ৩) বিজেপির বহু নেতা যাঁরা অন্য দল থেকে এসেছিলেন তাঁরা হতাশ, তাঁদের এক বিরাট অংশ তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ৪) কেন্দ্রীয় সরকার, মানে মোদিজির সরকার এখনও এমন কোনও কাজ করেনি যা ভোটারদের বড় অংশকে বিজেপিকে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করবে। ৫) মোদিজির আকর্ষণ কমছে, হু হু করেই কমছে, অপারেশন সিঁদুর যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, আচমকা যুদ্ধবিরতি, ট্রাম্পের ভূমিকা মানুষকে অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। ৬) দিলীপ ঘোষ বনাম শুভেন্দুর দ্বন্দ্ব আত্মঘাতী হতে বাধ্য। ৭) বিজেপি বাঙালি হয়ে উঠতে পারেনি, সে এখনও হিন্দি বলয়ের রাজনৈতিক দল। কাজেই কোনওভাবেই বিজেপি আগামী ২০২৬-এ ৩২ শতাংশের উপরে তাদের ভোট নিয়ে যেতে পারবে না। এটা আমি জানি, আপনি জানেন আর আমাদের অমিত শাহ জানেন না? জানেন, ওই যে বললাম, পেটগরম হয়েছে, ভুল বকছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ২০২৬-এ বিজেপির ভোট কি বাড়বে? বাড়লে কেন বাড়বে? আর না বাড়লে, কেন বাড়বে না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বাংলা দখলের কথা অনেকে ভেবেছেন, একবার নয় বহুবার। মুঘলরা মেনে নিয়েছিলেন এখানের রাজা জমিনদারদের শাসন, বর্গিরা এসে হেরে ভূত হয়ে ফিরেছিল। ব্রিটিশরা তো ভয়ে রাজধানীই সরিয়ে নিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বাংলা নিজের স্বকীয়তা, ভাষা স্বাধীনতা বজায় রেখেছে। এক মধ্যযুগীয়, হিন্দুত্ববাদী দল চাইবে আর তাদের ঝোলায় গিয়ে টুক করে পড়বে বাংলা, এটা যিনি বা যাঁরা ভাবছেন, তাঁদের পেটগরম হয়েছে, এ বাংলাতেই গ্যাঁদাল পাতা পাওয়া যায়, হালকা পাতলা ঝোল করে খেয়ে বিশ্রাম নিন। ২০৩১-এর প্রস্তুতি নিলেও নিতেই পারেন। ২০২৬ হবে না।