কলকাতা: গত লোকসভা এবং শেষ বিধানসভা ভোটে মতুয়াদের বদান্যতায় রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উত্থান হয়েছে বিজেপির (BJP)৷ সেই মতুয়াদের মধ্যেই ছড়ালো বিদ্রোহের আগুন৷ বড়দিনের দিন দলের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ (BJP MLAs Whatsapp Group) থেকে বেরিয়ে গেলেন পাঁচ বিজেপি বিধায়ক৷ যা নিয়ে ফিসফিসানি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ গ্রুপ ছাড়া বিধায়করা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইনি৷ কিন্তু সূত্রের খবর, মতুয়া ঝড়ে টলমল বিজেপি৷ রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধিদের প্রাধান্য না দেওয়াতেই তাঁরা সমস্ত গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন৷ ওই বিধায়করা হলেন মুকুটমণি অধিকারী, অসীম সরকার, সুব্রত ঠাকুর, অম্বিকা রায় এবং অশোক কীর্তনিয়া৷ বিধানসভা ভোটে এঁরা সকলেই মতুয়াদের সমর্থনে (Matua Community) জিতেই বিধায়ক হয়েছেন৷
গত বৃহস্পতিবার নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করে বিজেপি৷ সূত্রের খবর তা ‘মনপসন্দ’ হয়নি ওই পাঁচ বিধায়কের৷ কেননা ওই কমিটিতে কোনও মতুয়া নেই৷ শান্তনু ঠাকুররা ভেবেছিলেন, জেলা সংগঠনের দায়িত্বে মতুয়াদের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নেওয়া হবে৷ তা না হওয়ায় শনিবার একসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়েন পাঁচ বিধায়ক৷ যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে৷ বিজেপির অন্দরে এই ‘নীরব অসন্তোষ’ দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও রাজ্য নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ৷
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিজেপি বিধায়করা৷ ছবি-নিজস্ব৷
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে ধস লেগেই চলেছে৷ অনেক জায়গাতেই দলের কোন্দল বেআব্রু হয়ে পড়ছে৷ সদ্য শেষ হওয়া কলকাতার পুরভোটেও শোচনীয় হাল হয় গেরুয়া শিবিরের৷ তারপর রাজ্য কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল করে বিজেপি৷ সেই রদবদলের জেরে বাদ পড়েন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু৷ বাদ পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়েন তিনি৷ শনিবারও দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হয়৷ একই সঙ্গে ঘোষিত হয় বিভিন্ন জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতাদের নামও৷ সেখানেও সায়ন্তন এবং এই পাঁচ বিধায়কের স্থান হয়নি৷ তারপরই গ্রুপ ছাড়েন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার অসীম সরকার, রানাঘাট দক্ষিণের মুকুটমণি অধিকারী এবং কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়৷ সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটিতে মতুয়াদের প্রতিনিধিত্ব নেই৷ তারই প্রতিবাদে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন ওই পাঁচ বিধায়ক৷
আরও পড়ুন: BJP: সায়ন্তনের পর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন বিজেপির ৫ ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক
মতুয়া বিক্ষোভ দলের উপর মহলেই আটকে থাকেনি৷ তা ছড়িয়ে পড়েছে নিচু তলাতেও৷ শনিবার সন্ধ্যায় বনগাঁয় বিজেপির পার্টি অফিস লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়৷ ছিঁড়ে দেওয়া হয় পার্টি অফিসের বাইরে রাখা ফ্লেক্স৷ সময় থাকতে ক্ষোভের আগুনে জল ঢালতে না পারলে মতুয়াদের অসন্তোষ বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে৷ গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর৷ তিনি বিষয়টি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন৷ তাঁর সঙ্গে দেখা করার সময় শান্তনু ঠাকুর চেয়েছেন বলে সূত্রের খবর৷