কলকাতা : কলকাতার পুরভোটের ফলাফলে বামেদের আত্মপ্রসাদ লাভ করার অবকাশ রইল। গত মে মাসের বিধানসভা ভোটে বামেদের একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। সেই তুলনায় কলকাতায় দুটি ওয়ার্ডে বাম প্রার্থীরা জয়ী হতে পেরেছেন। এই ভেবেই কলকাতার বাম নেতারা আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতেই পারেন। শহর কলকাতা অবশ্য বাম জমানাতেও ভোটের বিচারে বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বামেরা ক্ষমতায় থাকলেও কলকাতার বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রগুলি অধিকাংশ সময়ই বিরোধীদের দখলে ছিল। প্রথমে কংগ্রেস, পরবর্তীকালে তৃণমূল ওই সব আসনে জিতে এসেছে।
২০০৫ থেকে কলকাতা পুরসভা বামেদের হাতছাড়া। তারপর গত ১৬ বছরে ভাগীরথীর পূব পাড় দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদল হয়। তার আগে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকেই রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। সেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে এখনও। কলকাতার ভোটার ফলাফলই তার প্রমাণ। বামেদের স্বস্তি একটাই। কলকাতা পুর এলাকায় ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায় তাদের ভোট বেড়েছে ৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন : Civic Polls: মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরপ্রশাসনিক বোর্ড বাতিলের দাবিতে কমিশনে বামেরা
তবু ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বামেরা মাত্র দুটি ওয়ার্ডে জিততে পারলেও মোটের উপর তাদের ফলাফল খারাপ নয়। অন্তত ৬৫টি ওয়ার্ডে বাম প্রার্থীরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ৪৮টি ওয়ার্ডে। কংগ্রেস ১৬টিতে দ্বিতীয় স্থানে। আর নির্দল প্রার্থীরা ৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বামেদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। এই ভোটে অনেক পোড় খাওয়া বাম নেতা নেত্রী হেরে গিয়েছেন। ২০১৫ সালের পুরভোটে বামেদের হাতে ছিল ১৬টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ১০টি, সিপিআই ৩টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি, আরএসপি ২টি। তাদের ভোট ছিল ২৫.৭৯ শতাংশ। এবার বাম শরিকদের অবস্থা খুবই করুণ। দুটির মধ্যে একটি পেয়েছে সিপিএম, আর একটি সিপিআই। আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝুলি শূন্য। কলকাতার এই ভোটে এবার সিপিএম পেয়েছে ১০.০৮ শতাংশ ভোট, সিপিআই ১.১ শতাংশ, ফরওয়ার্ড ব্লক ০.৪১ শতাংশ, আরএসপি ০.৭৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন : বামেরা সংখ্যালঘু হতেই দেশে বেড়েছে দারিদ্র, দাবি ইয়েচুরির
বামফ্রন্ট অনেক ভেবেচিন্তে প্রার্থী তালিকায় প্রচুর তরুণ মুখ এনেছিল। গত বছর থেকে করোনা আবহে যাঁরা রেড ভলান্টিয়ারের কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেককেই এবার প্রার্থী করা হয়েছিল। বাম নেতারা ভেবেছিলেন, এই তরুণ প্রার্থীরা হয়তো বাজিমাত করতে পারবেন। কিন্তু সেই আশাতেও জল ঢেলে দিয়েছে পুরভোটের ফলাফল। বাম নেতারা স্বীকার করছেন, মানুষের সঙ্গে তাঁদের দৈনন্দিন যোগাযোগ একেবারে তলানিতে ঠেকে গিয়েছে। প্রয়াত জ্যোতি বসু বারবার দলীয় কর্মী সমর্থকদের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বলতেন। তিনি বলতেন, মানুষই শেষ কথা বলবে। সেই মানুষই এখন বামেদের দিক থেকে সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই ফলাফলে সেটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালে পালা বদলের পর সিপিএম নেতারা বলতেন, ‘আমাদের একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে ঘুরে দাঁড়াতে হলে।’ ১০ বছর কেটে গিয়েছে, এখনও বামেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাঁদের রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে। আপাতত পুরভোটে দুটি ওয়ার্ডে জিতে এবং ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে থেকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে বামেদের।