শুভাশিস মৈত্র: ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের কাশীযাত্রাও বলা যেতে পারে। বারাণসীর গঙ্গায় ডুব দিলেন গেরুয়া পরিহিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চার পাশে তখন হর হর মহাদেও নিনাদ। ডুব দিয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রী একটু ঘুরিয়ে বলেছেন, কাশীর শাসকের হাতে ডমরু আছে। তাহলে কি যোগীর বাক্সের ভোট ‘মহাদেবের জটা হইতে’ই আসিবে? সে কথা সময় বলবে। তবে যেটা দেখার, প্রধানমন্ত্রীর ডুব-এর চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাধীনতার থেকেও বড় হল রামমন্দির। বলা হয়েছে, ১৯৪৭ ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা, রামমন্দির দিয়েছে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা। মনে পড়ে যেতেই পারে, রামমন্দিরের শিলান্যাস করে ২০২০-র ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী দিনটিকে স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
বাবরি মসজিদ৷ ১৯৯২ -এর সেই ডিসেম্বর৷ ছবি সংগৃহীত৷
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং মনোনীত সাংসদ রঞ্জন গগৈ তাঁর লেখা আত্মজীবনী ‘জাস্টিস ফর দ্য জাজ’ বই নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, রাম মন্দিরের রায় দেওয়ার পর বন্ধুদের নিয়ে তিনি খেতে গিয়েছিলেন রেস্তোরাঁয়, শ্যাম্পেনও খোলা হয়েছিল, তবে সেটা সেলিব্রেশন ছিল না। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর লালকৃষ্ণ আদবাণী তাঁর আত্মজীবনী ‘মাই কান্ট্রি মাই লাইফ’-এ লিখেছিলেন, সেই দিনটা নাকি তাঁর জীবনের সব থেকে কালো দিন। বাবরি মসজিদ যে রাম মন্দির ভেঙেই তৈরি করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টে তা প্রমাণ হয়নি। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিজেপির অনুষ্ঠানের দিন বাবরি মসজিদ রক্ষার দায়িত্ব তাঁর। সেদিন সাংবাদিক হিসেবে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছিলাম, তারকাঁটার বেড়া ভেঙে প্রথমে যারা বাবরি মসজিদ ভাঙতে গিয়েছিল (পরে তারা সংখ্যায় বিশাল হলেও) শুরুতে তারা ছিল মাত্র ১০-১৫ জন, কল্যাণ সিং-এর পুলিশ তাদের কোনও বাধা তো দেনইনি, উল্টে তারা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়েছিলেন। তখনই অযোধ্যার রাস্তায় স্লোগান শুনেছিলাম, ইয়ে তো স্রেফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ছবি সংগৃহীত
জওহরলাল বলেছিলেন, বড় বড় কারখানা, গবেষণাকেন্দ্রই আধুনিক ভারতের মন্দির। স্বাধীনতা-৭৫-এ এসে হিন্দুত্ববাদীরা আবিষ্কার করলেন, বড় বড় মন্দিরই হল নতুন ভারত তৈরির প্রকৃত গবেষণাকেন্দ্র।
পিছন দিকে এগিয়ে চলুন
নরেন্দ্র মোদী সরকারও যে তেমন চাপে পড়লে পিছন দিকে এগোতে পারে, পর পর দু’বার তা দেখা গেল। এক বছরের বেশি সময় লাগলেও কৃষিবিলে পিছু হটেছে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি সরকার। ফের এ মাসের মধ্যে দেখা গেল সিবিএসই-র প্রশ্নপত্র নিয়ে পিছু হটল হিন্দুত্বাদীরা। সোনিয়া-রাহুলের প্রতিবাদে এই পিছু হটায় প্রমাণ হল, নারীবিদ্বেষী অ্যাজেন্ডা কার্যকর করা যত সহজ ওঁরা ভেবেছিলেন, কাজটা তত সহজে হবে না। সিবিএসই পরীক্ষায় যে গদ্যাংশ পড়ুয়াদের দেওয়া হয়েছিল উত্তর লেখার জন্য, সেটা ছিল এরকম, ‘এটা ক্রমশ স্পষ্ট যে বাড়ির মায়েদের স্বাধীনতা শিশুদের উপর অভিভাবকদের শাসনটাকেই নড়বড়ে করে দিয়েছে। এর ফলে মায়ের মধ্যেই অনুশাসনবর্তিতার লক্ষণ হারিয়ে গিয়েছে’। মা’কে, আরও স্পষ্ট করে বললে মেয়েদের ছোট করার উদ্দেশ্যে লেখা এই গদ্যাংশ যে ছাড়পত্র পেল না, এটা শুভ লক্ষণ।
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার ঘোষণায় মিষ্টি বিতরণ কৃষকদের মধ্যে৷ছবি সংগৃহীত৷
হাসি নিষেধ
মুনাওয়ার ফারুকি, কুণাল কামরা। এই দুই কমেডিয়ান এখন রাজরোষে। তাঁদের ব্যঙ্গ, কৌতুক রাজদরবারের পছন্দ হয়নি। সম্প্রতি দু’জনেরই অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। কর্নাটকের বিজেপি সরকারের না-পসন্দ তাঁরা। ওই দুই শিল্পীকেই ভোপালে অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং। এরকম কিন্তু আগে কখনও হয়নি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের জমানায় একের পর এক কমেডিয়ানকে, যাদের আমরা কৌতুক-অভিনেতা বলি, তাঁদের জেলে ভরে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কৌতুক-অভিনেতারা হলেন সমাজের বিবেক। হাসির কথার মধ্যে দিয়ে তাঁরা অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করেন। এর চল নানা ভাবে বহু প্রাচীন কাল থেকে আছে। আমাদের বীরবল, মোল্লা নাসিরুদ্দিন, গোপাল ভাঁড়, এরা প্রায় সকলেই এক চরিত্রের। এরা বড়র মুখের উপর না-ঘুরিয়ে সোজা কথা বলতে পারেন। যে কাজ কার্টুনিস্টরা করে থাকেন। পলিটিক্যাল কার্টুনিস্ট শংকরকে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘ডোনট স্পেয়ার মি শংকর..’। সেই যুগ চলে গেছে। বোঝা যাচ্ছে এখন আর ঠাকুর, দেবতা, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ বা যোগী আদিত্যনাথ, এঁদের কাউকে নিয়ে আর হাসি-ঠাট্টা, ইয়ার্কি ফাজলামি করা যাবে না। হিন্দুত্ববাদীরা মনে হয় ভারতকে ‘হাসি নিষেধের’ দেশে পরিণত করতে চায়।
মুনাওয়ার ফারুকি ও গোপাল ভাড় ৷
ঠাকুর-দেবতা নিয়ে মস্করা বাঙালির রক্তে আছে। শুনুন এই কথাগুলো- ‘…তখন গণেশ সিন্দুকের উপরে নেমে, উপরের দু’হাতে তুড়ি দিয়ে, নীচের দু’হাতে ঢোলে চাঁটি মেরে, ইঁদুরের সঙ্গে-সঙ্গে ঢোল বাজিয়ে নৃত্য করছেন। রিদয় সাঁ-করে কুড়োজালি যেমন চাপা দেওয়া, অমনি গনেশ তার মধ্যে আটকা পড়ে যাওয়া! ইঁদুরটা টপ করে লাফিয়ে কুলুঙ্গির উপরে একেবারে সিংহাসনের তলায় যেমন ঢুকেছে, অমনি মাটির সিংহাসন দুম করে উল্টে চুরমার হয়ে গেল। ইঁদুর ভয় পেয়ে ল্যাজ তুলে কোথায় যে দৌড় দিলে তার ঠিক নেই! গনেশ জালের মধ্যে মাথা নিচু করে দু-পা আকাশে ছুঁড়তে লাগলেন আর বলতে থাকলেন-‘ছেড়ে দে ছেড়ে দে বলছি!’ কিন্তু দাঁতে-শুঁড়ে ঢোলকে-জ্বালে এমনি জড়িয়ে গেছেন যে গনেশের নড়বার সাধ্যি নেই।‘
ভাবুন একবার গনেশ, যার গলায় কি না পৈতে জ্বল জ্বল করে, ব্রাহ্মণ, তাকে কিনা মাছ ধরার জাল দিয়ে বন্দি করা। সেখানে গনেশ বাবাজি জালের মধ্যে মাথা নিচু করে দু-পা আকাশে ছুঁড়তে লাগলেন আর বলতে থাকলেন-‘ছেড়ে দে ছেড়ে দে বলছি!’
আজকের যুগে লেখা হলে তো বলা হত, হিন্দুদের আবেগে শিরীষ কাগজ ঘষে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই লেখা যিনি লিখে গিয়েছেন, তিনিই ভারতমাতার ছবি এঁকেছিলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সালে অবনীন্দ্রনাথের আঁকা ভারতমাতা-ই আমাদের দেশের একমাত্র মূর্তি-রূপ। তাঁর কিন্তু আটকায়নি গনেশকে নিয়ে ছোটদের লেখায় হাসি-ঠাট্টা করতে। এই হল বাংলার ঐতিহ্য। এটা যেন বাঙালি ভুলে না যায়!
বাঙালির হাসির পিতা
শিবরাম চক্রবর্তীর জন্মদিন চলে গেল ১৩ ডিসেম্বর, গত সোমবার। কারও কারও মতে অবশ্য শিবরামের জন্মদিন ১২ ডিসেম্বর। বাঙালির ‘হাসিরপিতা’ তিনি। কী বলছেন? হাসিরপিতা আবার কী? জাতির পিতা হলে হাসিরপিতাও হতে পারে! শিবরামের অন্যতম জীবনীকার সুরজিৎ দাশগুপ্তের মতে শিবরামের জন্ম ১৯০৩ সালে কলকাতার দর্জিপাড়ায়,নয়নচাঁদ দত্ত লেনে,দাদামশাইয়ের বাড়িতে।
শিবরামের বাবা ছিলেন মালদহের চাঁচলের রাজ পরিবারের সন্তান। জন্মের পর কিছু দিন কলকাতায় কাটিয়ে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর শিবরামরা সপরিবারে চলে আসেন চাঁচলের রাজবাটিতে। এই বাড়িতেই এস্টেটের এক ডাক্তার সপরিবারে থাকতেন। ডাক্তারের মেয়ে রিনি ছিল শিবরামের সমবয়সী। রিনিই শিবরামের প্রথম প্রেম। কিশোরী রিনি যখন বাবার সঙ্গে চাঁচল ছেড়ে কলকাতায় চলে এল, তার কিছুদিন পরে শিবরাম এন্ট্রান্সের টেস্ট পরীক্ষায় পাস করেন। ওই সময় মালদহে আসেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, অসহযোগ আন্দোলনের প্রচারে। দেশবন্ধুর সঙ্গে দেশের কাজ করবেন বলে কলকাতা চলে এলেন ছাত্র শিবরাম চক্রবর্তী।
শিবরাম চক্রবর্তী ৷ছবি সংগৃহীত
কলকাতায় এসে বিপিনবিহারী গাঙ্গুলির নেতৃত্বে অসহযোগীদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দিলেন।খুব দ্রুত দেশবন্ধুর প্রিয় হয়ে উঠলেন। একই সঙ্গে ভর্তি হলেন নেতাজি পরিচালিত গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তনে এবং যথাসময়ে যথেষ্ট কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করলেন ম্যাট্রিক। তখন শিবরামের দিন চলত দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করে। সেকথা জানতে পেরে দেশবন্ধু তাঁকে ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত করে নেন। যাতে শিবরামের সামান্য কিছু রোজগার হয়। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আন্দামান ফেরত বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আর ম্যানেজার ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সুভাষচন্দ্র ছিলেন ভয়ঙ্করভাবে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার পক্ষে, আর শিবরাম ছিলেন তার উলটো, কখনই নিয়ম শৃঙ্খলার পরোয়া করতেন না। শিবরামের বেপরোয়া হালচাল দেখে একদিন সুভাষ বসু শিবরামকে ডেকে সব পাওনা গণ্ডা মিটিয়ে বলে দিলেন ‘কাল থেকে আর আসার দরকার নেই’। চাকরি গেল শিবরামের।
কাজ খুইয়ে সেই সময়ে বেশ কিছু দিন শিবরাম রাতে ঘুমোতেন ঠনঠনে কালীবাড়ির সামনের ফুটপাথে আর খেতেন মল্লিকদের মার্বেল প্যালেসে লঙ্গরখানায়। কাছেই মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে তখন একটি নতুন বড় বাড়ি উঠছে। শিবরামের সেখানে চৌকিদারির কাজ জুটে গেল। ফলে সেখানে খাওয়া-থাকার ব্যবস্থাও মোটামুটি একটা হল। পরে বাড়ি শেষ হলে, বাড়িটি একটি মেসবাড়ি হয়। সেখানেই একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে আজীবন ছিলেন শিবরাম।
১৯২৫-এ প্রথম উপন্যাস ‘ছেলেবয়েস’। ১৯২৯-এ দুটি কাব্যগ্রন্থ,’ চুম্বন’ এবং ‘মানুষ’। সেবছরই আরেকটি বই এম সি সরকার থেকে বেরিয়েছিল, ‘আজ এবং আগামিকাল’। এই তিনটি বইই হু হু করে বিক্রি হয়ে যায়। প্রবন্ধের বই ‘আজ এবং আগামিকাল’-এ দুটি বিভাগ ছিল। প্রথম বিভাগে সাহিত্য নিয়ে প্রবন্ধ। দ্বিতীয় বিভাগের প্রথম লেখাটি ছিল ‘মস্কো বনাম পণ্ডিচেরি’। বাকি লেখাগুলি ছিল, ‘অপ্রিয় সত্য ও প্রিয় অসত্য’, ‘দো রোখা’, ‘ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্ততা’, ‘শূদ্র না ব্রাহ্মণ’। মস্কো বনাম পণ্ডিচেরি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘ দিন আলোচনা হয়েছে। তখন শিবরামের বয়স তিরিশ পেরোয়নি। এই বইয়ের ভূমিকায় পরে শিবরাম লিখেছেন, ‘গান্ধীবাদই, আমার মনে হয়, কমিউনিজমকে সম্পূর্ণ করতে পারে। ভারতীয় আত্মিক সাম্যের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের আর্থিক সাম্যনীতির আত্মীয়তা ঘটলেই বিশ্বজনীন সাম্যবাদের সাফল্য ঘটতে পারে। আর ঘটবেও তাই’। যখন তারা কথা বলবে, চাঁদের আলো ইত্যাদি নাটকও এই সময়ই লেখেন শিবরাম।
রামধনু পত্রিকায় প্রকাশের বেশ কিছু পরে বই হয়ে বেরোলো ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ ১৯৩৭ সালে। তার ৩৩ বছর পর ঋত্বিক ঘটক এই লেখা নিয়ে সিনেমা বানালেন। তখন ছোটদের কাগজ মৌচাক-এর খুব নাম-ডাক। সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকার। তিনি ১৫ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে শিবরামকে বললেন, ছোটদের জন্য লিখতে। সেটা ১৯৩৫ সাল। সেই প্রথম শিবরামের লেখা থেকে আয়। শিবরামের ভাষায়, ‘অ্যাতো লিখেও একটা পয়সা পাইনি, আর এই না লিখেই টাকা পেতেই সেই যে আমার হাসি পেল, সেই হাসিটাই প্রকাশ পেল আমার প্রথম ছোটদের লেখায়। তার পর সেই হাসিটি ছড়িয়ে গেল আমার আরো আরো গল্পে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার সেই হাসিরই সুর’। সেই প্রথম গল্পের নাম ছিল ‘পঞ্চাননের অশ্বমেধ’। সেই যে শুরু হল, আর থামেননি। অন্য লেখা লিখলেও শিবরাম ছোটদের লেখক হিসেবেই বাঁচলেন বাকি জীবন। শিবরাম চাঁচলের রাজবাড়ি থেকে একটা মাসোহারা পেতেন। সেটা একসময়ে বন্ধ হয়ে যায়। শিবরাম এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু কোনও উকিল দেননি। একজনের নাম দিয়েছিলেন সাক্ষী হিসেবে। তিনি আর কেউ নয়, যাঁর বিরুদ্ধে মামলা তারই নাম। কারণ তিনিই নাকি বিষয়টি সব থেকে ভালো জানেন। মামলা খারিজ করে দিয়ে হাই কোর্ট বলেছিল, হাইকোর্টের ইতিহাসে এমন আজগুবি মামলা নাকি কেউ কখনও দেখেনি। এদিকে শিবরাম নিশ্চিত ছিলেন যে মামলা জিতবেন, এবং জিতে এক লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি কোন পথে বিশ্বভ্রমণে যাবেন, সেসবও ঠিক করে ফেলেছিলেন। তখন নিয়মিত লেখা বেরোচ্ছে মৌচাক, রাধনু, রংমশাল পত্রিকায়। কাছেই থাকতেন শিবরামের এক বোন, বিনি। শিবরামের নির্দেশে বিনি আর তার বন্ধুরা বিভিন্ন বইয়ের দোকানে গিয়ে নিয়মিত খোঁজ করতেন শিবরামে চক্রবর্তীর বই আছে কি না! তাতে নাকি বইয়ের চাহিদা এবং বিক্রি বাড়ে, শিবরাম মনে করতেন।
এখন শিবরাম বেঁচে থাকলে তাঁকেও হয়তো নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য জেলেই যেতে হত। দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শিবরাম খবর পেলেন, এক সাংসদ নাকি স্পিকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, প্রাইম মিনিস্টার শব্দের কি স্ত্রীলিঙ্গ হয়? প্রাইম মিনিস্টার বলে সম্বোধন করলে তখন ‘হি’ বলতে হবে ‘শি’ বলতে হবে? শিবরাম তখন একটি দৈনিকে কলম লিখছেন। শিবরাম সেখানে মন্তব্য করলেন, একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সামনে সবাই মিলে এরকম হি-শি করাটা কি ভালো ব্যাপার হচ্ছে?