পশ্চিম চৌবাগার গুলশন কলোনি (Gulshan Colony)। এলাকাটা তৃণমূল কংগ্রেস ভবনের (Trinomul Congress Bhawan) পিছনের দিকে। এখান থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের (Bangladeshi Arrest)। লখনউ পুলিসের (Lucknow ATS) জঙ্গি দমন শাখার ইনপুট পেয়ে কলকাতা পুলিস গুলশন কলোনির এল-আটত্রিশ নম্বরের ঠিকানায় হানা দেয়। মোট সতেরো জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করে। যারা জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে বিদেশে পালানোর ছক কষেছিল। কলকাতা টিভির ডিজিটাল (Kolkata TV) টিম গুলশন কলোনির ওই ঠিকানায় পৌঁছে অনুসন্ধান করে দেখে এই ঘটনা কতটা গুরুতর।
চৌবাগার এই এলাকাটা অপরিচ্ছন্ন। পাকা রাস্তা নেই। বৃষ্টি নেই অথচ জল জমে। দিনের বেলাতেই টিমটিমে আলো জ্বলছে। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টার শুনেই মুখ লুকোচ্ছেন বাসিন্দারা। দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এত বড় ঘটনা কিন্তু অনেকেই বলছেন, ‘না তাঁদের কিছু জানা নেই।’ এ কথা যখন বলছেন, তখন চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ। কথা শুনে মনে হয় কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছেন। সামনেই একটা পানের দোকান। পরিচয় দিলাম। অবাঙালি এই পান বিক্রেতার দোকান থেকে নিয়মিত টুকিটাকি কেনাকাটা করত সন্দেহভাজন বাংলাদেশিরা। পান বিক্রেতার কাছ থেকে জানা গেল, এক সঙ্গে সতেরো জন বাড়ির বাইরে বেরোতো না। দোকানে এসে বাংলায় কথা বলতেন। কিন্তু সেই বাংলা পানবিক্রেতা বুঝতে পারতেন না। আর প্রত্যেকেই খুব পান খেত।
গুলশান কলোনির এই ডেরাতেই লুকিয়ে ছিল বাংলাদেশিরা
আরও পড়ুন : Park Street: ভোটের মুখে পার্ক স্ট্রিটে নগদ এক কোটি টাকা-সহ গ্রেফতার যুবক
এল-আটত্রিশ নম্বরের ঠিকানা পৌঁছলাম। এখানকার সব বাড়ি গুলোই প্রায় একরকম। কোনওরকম কলাম ছাড়াই উঁচু আবাসন। দেখেই মনে হয় বেআইনি নির্মাণ। বিল্ডিংয়ের দু’তলার একটি ঘরে থাকতেন ধৃতেরা। একটাই ঘর। লম্বা মতন। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে কুড়ি জনের বেশি আবাসিক থাকতেন। যাঁদের অধিকাংশেরই কোনও বৈধ পরিচয় পত্র ছিল না। দেড় মাস ধরে তাঁরা এ খানে থাকতেন। ফ্ল্যাটে একটাই বাথরুম। আর রান্নাঘর। বাড়ির মালিক কওসর। তাঁকে খুঁজছে পুলিস। প্রশ্ন উঠছে কী ভাবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এত জন বাংলাদেশিকে ভাড়া দেওয়া হল? তা হলে কি এই এলাকায় বেআইনি ভাড়া দেওয়ার চল রয়েছে? গুলশন কলোনির ওই বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দারাও মুখ খুলতে নারাজ। বললেন, ‘দোতলার দরজা বেশির ভাগ সময়ই বন্ধই থাকত।’ তাঁদের কথায় জানা গেল, বাংলাদেশিরা নিজেদের পেশায় কম্বল বা জ্যাকেটের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছিল।
রান্নাঘর দেখলেই বোঝা যায় দীর্ঘদিন ধরেই ডেরা বেঁধেছিল বাংলাদেশিরা
আরও পড়ুন : Bangladeshi Arrest: অনুপ্রবেশকারী ১৭ বাংলাদেশির ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিস হেফাজত
সত্যিই কী উদ্দেশ্যে এত জন বাংলাদেশের নাগরিক গুলশন কলোনিতে ডেরা বেঁধেছিল? কী ভাবে পাসপোর্ট ভিসা না থাকলেও সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা এসে পৌঁছল। মহফিজুর রহমান, যাঁর সাহায্যে বেআইনি ভাবে এতো জনের অনুপ্রবেশ, তিনি কে? কী ভাবে জাল ভোটার আই-কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড জোগাড় করল ধৃতেরা? এ রকম অনেক গুলো গুরুতর প্রশ্ন উঠছে গুলশন কলোনিকে ঘিরে।