কোনওদিনই নিজেকে কোনও ছকে বাঁধেননি তিনি। বলিউডে কাজ করছেন বেশ কয়েক যুগ ধরে। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম প্রিয় নায়িকা। কমার্শিয়াল ছবিতে তিনি যেমন আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় তেমনই আর্ট ফিল্মেও তার গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ার মতো। ১৯৬৪ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে সত্যজিতের নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর বাংলা থেকে সোজা পাড়ি দিয়েছিলেন আরব সাগরের তীরে। তারপর মুম্বইয়ে সেই সময়ের সমস্ত নামজাদা হিরোদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। আস্তে আস্তে তিনি সারা ভারতের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের চোখের মণি হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মধ্যে দিয়ে তাঁর পর্দায় আবির্ভাব হয়েছিল। হিন্দি মেইনস্ট্রিম ছবিতে অভিনয় করলেও তাঁকে মাঝেমধ্যেই দেখা গেছে বাংলা ছবিতে কাজ করতে। অনেকেই বলেন পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার জন্যই তিনি মনে মনে বাংলা ভাষাকে সবসময় লালন-পালন করে গেছেন। তিনি হিন্দি-সহ নানান ভাষাতে কাজ করলেও বাংলা ভাষার প্রতি তিনি সবসময়ই আকর্ষণ অনুভব করেন। শর্মিলা যে সময়ে পর্দায় সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তা অনেকেই সে সময় ভাবতে পারেন না। শর্মিলা তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক পতৌদির নবাব মনসুর আলি খানের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। মুসলিমকে বিয়ে করার জন্য যথেষ্ট সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। নতুন নাম হয়েছিল শর্মিলার বেগম আয়েশা সুলতানা। কিন্তু তাতেও তিনি পিছপা হননি। বাংলার প্রতি টান এতটাই বেশি ছিল যে, তিনি নবাব পতৌদিকে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। তারপর শুরু হল অন্য লড়াই, একদিকে নতুন সংসার আর অন্যদিকে কেরিয়ার। পরিবার এবং অভিনয় দুটোই একসঙ্গে সামলেছেন শর্মিলা। এক সময় অবশ্য তিনি আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, সংসার সামলাতে গিয়ে তাঁকে বহু জনপ্রিয় হিন্দি ছবির কাজ ছাড়তে হয়েছিল। কলকাতায় যখনই তিনি আসেন মাতৃভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতটা সাবলীল বাংলা এত বছর ধরে মুম্বইয়ে থেকে কজন বাঙালি শিল্পী বলতে পারেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এখন তিনি পরিপূর্ণ সংসারী। পুত্র সইফ আলি খান, পুত্রবধূ অভিনেত্রী করিনা কাপুর ও দুই নাতি তৈমুর এবং জেহকে নিয়ে আজ জন্মদিনের কেক কাটবেন শর্মিলা।