কলকাতা: জামিনের পর বৃহস্পতিবার আলিপুর জজ কোর্টে আনা হল বিজেপি যুব মোর্চার নেতা রাকেশ সিংকে। বুধবারই নিউ আলিপুর মাদক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন রাকেশ সিং৷ আজ তাঁকে রিলিজ নিতে হবে জজের কাছ থেকে। সেই কারণে তাঁকে নিয়ে আসা হয় আলিপুর জজ কোর্টে। আর সেখানেই রাকেশ সিংকে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কর্মী সমর্থকেরা।
আলিপুর কোর্ট চত্বরে আগে থেকেই ভিড় করে ছিল বিজেপি যুব মোর্চার নেতা রাকেশ সিংয়ের সমর্থকেরা। কোর্ট চত্বরে পৌঁছতেই হাতে গোপাল নিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে নামেন রাকেশ সিং। তাঁকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামতে দেখেই কোর্ট চত্বরে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চারিদিক থেকে স্লোগান ওঠে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। কোর্টের গেট ব্লক করে থাকে সমর্থকরা। তুমুল ভিড় এড়িয়ে পুলিশের সহায়তায় কোনওক্রমে কোর্টে প্রবেশ করেন রাকেশ সিং।
আরও পড়ুন – Exclusive: মাদক মামলায় রাকেশ সিংকে জামিন, রায়ের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্ট যাচ্ছে কলকাতা পুলিশ
এক সময় বাংলার রাজনীতিতে কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন রাকেশ সিং। শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় হলেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অনুগামী। আদালত চত্ত্বরেই এক মামলার সাক্ষী ও কতর্ব্যরত পুলিশকে হেনস্থা করার অভিযোগে রাকেশ সিং গ্রেফতারও হয়েছিলেন। সেই সময় আলিপুর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাকেশের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছিলেন অধীর। এমনকি জেল থেকেই তাঁকে মনোনয়নও দিতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত তা ঘটেনি।
কলকাতা পুর নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ধীরে ধীরে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে ধরে রাখার। কিন্তু পারেননি। নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
বিজেপি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থীও করেছিলেন। কিন্তু বিজেপিতে গিয়েও শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কলকাতায় অমিত শাহর রোড শো’কে কেন্দ্র করে কলকাতার রাস্তায় নজিরবিহীন ঝামেলা ও বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাতেও রাকেশ সিংয়ের নাম জড়িয়ে পড়ে। ওই মিছিলে ‘ফাটাফাটি গ্যাং’কে জড়ো করার জন্য তাঁর একটি ভিডিয়ো বার্তা সেইসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাঁকে। ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিংমলে হামলা চালানোর ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত রাকেশ সিং।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নিউ আলিপুরে বিজেপি যুব নেত্রী পামেলা গোস্বামীর গাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকার কোকেন উদ্ধার করে পুলিশ৷ সেই সূত্র ধরে উঠে আসে রাকেশ সিংয়ের নাম৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় পুলিশ৷ কিন্তু তদন্তে সহযোগিতার নাম করে পালিয়ে যায় সে৷ পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাকেশ সিংকে গলসি থেকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের আধিকারিকরা৷ তার পর থেকে জেলেই ছিলেন তিনি৷ মাদক মামলায় জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন রাকেশ৷ ২ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে বুধবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েকের ডিভিশন বেঞ্চ৷