মেদিনীপুর : গত শুক্রবার, গুরুনানকের জন্মদিনের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর হতাশ হয়েছিলেন বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতাদের একাংশ। তাদের দাবি, এনআরসি ও সিএএ নিয়ে এরই মধ্যে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তার উপর এই ৩ কৃষি আইন ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তাঁদের দল বিজেপি সিন্ধান্তহীনতায় ভুগছে। দলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানিয়ে ওই নেতারা দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। নিজেদের দলের অন্দরে বিজেপি বিরোধীতা দেখে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি মুকুল রায় প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “মুকুল রায়ের হাত ধরে আসা এই সব লোকজন নিজের স্বার্থে এসেছিলেন বিজেপিতে। এরা দলে নিষ্ক্রিয়, তাই মুকুল রায়ের সাথে সাথে তার অনুগামীদের বিজেপি ছেড়ে চলে যাওয়াই ভাল।”
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার বিষয়ে ঘোষণার পর বিজেপির নেতাকর্মীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নিতেন, তাহলে নীচু স্তরের নেতারা সাধারণ মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারত। এরপর শুক্রবারেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপির সহ-সভাপতি শিবু পানিগ্রাহী হতাশ হয়ে বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে শিবু পানিগ্রাহী সহ দলের একাধিক নেতা হতাশা প্রকাশ করতেই অস্বস্তি কাটাতে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকে বিজেপির জেলা নেতৃবৃন্দ।
বিজেপি জেলা সভাপতি সৌমেন তেওয়ারী বলেন, “মুকুল রায়ের হাত ধরে যারা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁদের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর তাঁরা নিজেরাই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। আমরা শোকজ চিঠি দিয়েছিলাম। মুকুল রায় তাঁদের কাছে আদর্শ। তৃণমূল থেকে এসেছিলেন মুকুলবাবুর হাত ধরে। এখন মুকুলবাবু চলে গেছেন, তাই আপনাদেরও মুকুলবাবুর বাড়িতে চলে যাওয়াই ভালো,” জানান সৌমেন তেওয়ারী।
এরপরই পাল্টা ক্ষোভ উগড়ে দেন শিবু পানিগ্রাহী। রবিবার রাতে শিবু পানিগ্রাহী বলেন, “সৌমেন তেওয়ারির দাবি ভিত্তিহীন, নির্বাচনী ফলাফলের পরেও আমরা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন জায়গায় সভা বৈঠক করেছি। যিনি জেলা সভাপতি এই সব মন্তব্য করছেন তার চরিত্রটা একটু ভালো করে দেখলেই বোঝা যাবে। তিনি যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেখানে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পেরে যাবেন। তথাগত বাবু ঠিকই বলেছেন ‘কামিনী আর কাঞ্চন’ তার সঙ্গে সুরা যোগ করে আমি বলবো, এই দলটা কামিনী কাঞ্চন সুরাতে ভরে গেছে। এই বিজেপি দলে যোগ দিয়ে আমার ছুঁচো গেলা অবস্থা হয়ে গেছিল। আমি ব্রাহ্মণ লোক, আমি নাকি কিছুই জানিনা ধর্মের। ওরা আমাকে সনাতনী ধর্ম শেখাচ্ছিল, যারা ধর্মের কিছুই জানেনা।”
মেদিনীপুর শহর তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, ” আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজেই একজন মিথ্যাবাদী। তাঁর ভ্রান্ত কূটনীতির কারণে প্রতিবেশী দেশের কাছে আমরা শত্রু। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে। তাই তাঁদের দলের কর্মীরা হতাশ হয়েছে শীর্ষ নেতাদের উপর। এরপর সাধারণ মানুষও হতাশা থেকে এই দলকে ছুঁড়ে ফেলবে।”