বন্ধুদের গায়ে এক রকমের গন্ধ থাকে। আজ নয় একটু স্যানিটাইজারের বাতাস। তাতে কি! কে কোন প্রিয় বন্ধুর পাশে বসবে তা নিয়ে মারামারি হয়ত নেই, তাতে কি! অভিমান তো আছে, কথা বলা বন্ধ তো আছে। তার পরে আবার একদিন ভাবও আছে। আড়ি ফিরিয়ে নেওয়া আছে।
সে সব কি আর ভিডিও কলে হয়? হয় না। আর সাইকেল নিয়ে স্কুলে গেটের সামনে যে অপেক্ষা, যে উত্তেজনা, তাও হয় না। ক্লাসরুমের যে দেওয়াল। দেওয়ালের গায়ে পড়ে থাকা যে রোদ, রোদের গায়ে দাগ দিয়ে চিহ্ন এঁকে রাখা। এই তো এইখানে রোদ এসে পড়লেই ছুটির ঘণ্টা বাজবে। তারপর হই-হই করে সিঁড়ি ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে নামা। গুঁজে রাখা জামা খুলে ফেলা। এই সব কি হয় মোবাইল ফোনের ভিতর? টিফিন-ভাগ কি আর ট্যাবের জানলায় হয় বল?
স্কুল খুলতেই বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলার ঝোঁক
অনেক দিন পর তাই আবার পড়া শুরুর ঘণ্টার এক পিরিয়ডকেও কী অপূর্ব লাগছে। বন্ধুরা একটু একটু দূরে দূরে বসে আছে। তাতে কি, পাশেই তো আছে। ম্যাম আর স্যরের সঙ্গে কত দিন পর আবার চোখে চোখ রেখে বুঝে নেওয়া যাচ্ছে কঠিন সিঁড়িভাঙা। ওই যে ব্ল্যাক বোর্ডের উপর চক দিয়ে বড় বড় করে লেখা ভূগোলের ক্লাস, ওরও একটা আলাদা মানে আছে। ওই যে লিখতে গিয়ে মটাস ভেঙে গেল চক। ওই যে মাস্টারমশাই ভাঙা অংশটাকে টেবিলের উপর রেখে, ফুঁ দিয়ে আঙুলে লেগে থাকা চকগুঁড়ো ক্লাস রুমে উড়িয়ে দিলেন, এরও একটা আলাদা মানে আছে।
আরও পড়ুন – ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই বিক্ষোভ, প্রেসিডেন্সিতে টিএমসিপি ও এসএফআইয়ের মধ্যে তুমুল বচসা
সঙ্গে বন্ধুরা তবে রয়েছে দূরত্ববিধি
আসলে এই এতো গুলো ভাললাগাকেই এত দিন ভীষণ ভীষণ মিস করছিলাম। ক্লাসরুমে উড়িয়ে দেওয়া কাগজের এরোপ্লেন মিস করছিলাম। লাস্ট পিরিয়ডে স্যর আসতে দেরি করছেন তো টেবিল বাজিয়ে অরিজিৎ সিং মিস করছিলাম। বেঞ্চের উপর কম্পাস ঘুরিয়ে বৃত্তচাপ মিস করছিলাম। এমনকি হার্ট চিহ্নের পাশে লিখে রাখা নামের প্রথম অক্ষর, সেটাতেও আঙুল ছুঁয়ে কতদিন পর, সত্যি বলছি কতদিন পর তোকে স্পর্শ করলাম, বিশ্বাস কর।